বীমা খাতের অন্যতম একটি সমস্যা হলো তামাদি পলিসি। তামাদি পলিসির রাস টানতে উদ্যোগ নিয়েছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)।
সংস্থাটির পক্ষ থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে তামাদি পলিসির উচ্চহার বাংলাদেশের লাইফ বীমা শিল্পের জন্য একটি গুরুতর সমস্যা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
নিয়ন্ত্রক সংস্থা বলছে, অধিকাংশ লাইফ বীমা কোম্পানিতে তামাদি পলিসির উচ্চ হারের কারণে বীমা শিল্প বছরে প্রচুর রিনিউয়াল প্রিমিয়াম আয় থেকে বঞ্চিত হয়। অন্যদিকে পলিসি তামাদি হলে আইনী বাধ্যবাধকতার কারণে গ্রাহকদের জমাকৃত টাকাও ফেরত দেয়া যায় না।
আবার বিশেষ ক্ষেত্রে জমাকৃত প্রিমিয়ামের আংশিক ফেরত দেয়া গেলেও তা পরিমাণে অত্যন্ত কম। যার কারণে বীমা গ্রাহকরা সন্তুষ্ট হয় না এবং এটা বীমা শিল্পের প্রতি নেতিবাচক ধারণা তৈরী করে। এছাড়া তামাদির উচ্চহার কোম্পানির ব্যবস্থাপনা ব্যয় বৃদ্ধির মাধ্যমে কোম্পানির আর্থিক সামর্থকে সংকুচিত করে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, পলিসি তামাদির কারণ চিহ্নিত করে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে আইডিআরএ। এরমধ্যে রিনিউয়াল প্রিমিয়াম অর্জনে এজেন্টদের নিষ্ক্রিয়তার পাশাপাশি এজেন্টগণের কোম্পানি পরিবর্তনের মাধ্যমে পলিসি স্থানান্তরও ব্যাপকভাবে দায়ি।
এ অবস্থায় পলিসি চালু রাখার মাধ্যমে এজেন্ট কর্তৃক কোম্পানির রিনিউয়াল প্রিমিয়াম আয় বৃদ্ধিতে সক্রিয় ভূমিকা রাখা, বীমা শিল্পে পেনিট্রেশন বৃদ্ধি এবং সর্বোপরি কোম্পানির ব্যবস্থাপনা ব্যয় নিয়ন্ত্রণের জন্য এজেন্ট কমিশনের বিষয়ে আইডিআরএ বেশ কিছু নির্দেশনা সম্বলিত সার্কুলার জারি করেছে।
নির্দেশনাগুলো হলো লাইফ বীমা কোম্পানির ১ম বর্ষ ও ডেফার্ড প্রিমিয়ামের উপর প্রদেয় কমিশনের ১০ শতাংশ ২য় বর্ষের নবায়ন প্রিমিয়াম সংগৃহীত হওয়ার পর প্রদেয় নবায়ন কমিশনের সাথে এজেন্ট এবং সকল স্তরের উন্নয়ন কর্মকর্তাগণকে পরিশোধ করতে হবে।
বিলম্বিত কমিশনের উপর পূর্ববর্তী বছরের বিনিয়োগ আয়ের হার অথবা বাৎসরিক ৩ শতাংশ সরল সুদ এই দু’টির মধ্যে যেটি কম সে হারে মুনাফা প্রদান করে বিলম্বিত কমিশন বিল তৈরী করতে হবে।
কমিশনসহ অন্য যে কোনরকম ব্যয় যেমন- বোনাস, যাতায়াত, বাড়ি ভাড়া ইত্যাদি সংগৃহীত প্রিমিয়ামের সাথে সমন্বয় করা যাবে না। এজেন্ট এবং সকল উন্নয়ন কর্মকর্তাকে মোবাইল ব্যাংকিং ও এজেন্ট ব্যাংকিংসহ ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে কমিশন পরিশোধ করতে হবে।
লাইফ বীমা কোম্পানিগুলোতে বিগত ৫ বছরের কম সময় ধরে যে সকল পলিসি তামাদি হয়ে আছে সেগুলোর কোন বিলম্ব ফি ছাড়াই পুনর্বহালের সুযোগ প্রদানের জন্য গত ৭ জুলাই, ২০২০ বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স এসোসিয়েশন কর্তৃক ‘মুজিব বর্ষে বীমা কোম্পানীর উপহার’ শীর্ষক বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়।
এই বিজ্ঞপ্তির আলোকে তামাদি পলিসি পুনর্বহাল এবং উল্লেখিত নির্দেশনা সমূহের বাস্তবায়ন অগ্রগতি জানতে আইডিআরএ লাইফ বীমা কোম্পানিগুলো থেকে নির্দিষ্ট ছকে ২০১৫ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত তামাদি পলিসির তথ্য সংগ্রহ করছে।
পলিসি তামাদির উচ্চহার কমানো, রিনিউয়াল প্রিমিয়াম আয় বৃদ্ধি, ব্যবস্থাপনা ব্যয় নিয়ন্ত্রণ এবং পেনিট্রেশন বাড়ানোর মাধ্যমে দেশের লাইফ বীমা শিল্পের আর্থিক সামর্থ বৃদ্ধি করার লক্ষ্যেই কর্তৃপক্ষকে এ সকল কার্যক্রম হাতে নিতে হয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।