পুঁজিবাজারের তারল্য সঙ্কটের সমাধানের স্বার্থে কালো টাকাকে বিনাশর্তে বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়ার আহবান জানিয়েছেন চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম ফারুক।
রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় সিএসইর ঢাকা অফিসে ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ আহবান জানান।
এসময় তিনি বলেন, বাংলাদেশের কালো টাকা বা অপ্রদর্শিত আয় বিদেশে পাচার হওয়ার আশঙ্কায় সরকার কয়েকটি খাতে বিনিয়োগের সুযোগ দিয়েছে এগুলোর সাথে পুঁজিবাজারকে বিবেচনা করা যেতে পারে। পুঁজিবাজারে কালোটাকা বিনিয়োগের সুযোগ দিলে বাজারের তারল্য প্রবাহ বাড়বে সঙ্কট কমবে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে রুপান্তর করার যে রূপকল্প সরকারের রয়েছে তাতে ব্যাপক ভাবে বেসরকারী পুঁজি সঞ্চালনের প্রয়োজন। আর এ লক্ষ্য পূরণের জন্য পুঁজিবাজার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে বলে আমরা দৃঢ় ভাবে বিশ্বাস করি । শুধুমাত্র ব্যাংক ঋণ নির্ভর বেসরকারী বিনিয়োগ এবং পুঁজি সঞ্চালন একদিকে যেমন ব্যাংক ব্যাবস্থার দূর্বলতা তৈরি করে অন্যদিকে পুঁজিবাজারের বিকাশেও প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে । এই প্রেক্ষিতে পুঁজিবাজারে টেকসই উন্নয়ন এবং গুণগত সম্প্রসারণের জন্য ব্যাপক কৌশল প্রণয়ন করা প্রয়োজন । এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ লিমিটেড বিগত ২রা এপ্রিল ২০১৯ তারিখে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এর আমন্ত্রণে ৮টি প্রস্তাবনা বিবেচনা করার জন্য উপস্থাপন করে । এর মধ্যে মাত্র করমুক্ত লভ্যাংশের সীমা প্রস্তাবটি আংশিকভাবে গ্রহন করা হয়েছে। সিএসই এর প্রস্তাবনার বিষয়গুলো পুনর্বিবেচনার জন্য আপনাদের মাধ্যমে অর্থমন্ত্রীকে বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি।
১. তালিকাভুক্ত কোম্পানীসমূহের বিদ্যমান কর হার ২৫% থেকে কমিয়ে ২০% করা হলে ভাল কোম্পানীসমূহ পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হবে, যা পুঁজিবাজারকে সমৃদ্ধ করবে এবং স্বচ্ছ কর্পোরেট রিপোর্টিং এর মাধ্যমে রাজস্ব আদায়ও বৃদ্ধি পাবে ।
২. নতুন তালিকাভুক্ত কোম্পানি সমূহের আয় তিন বছর করমুক্ত রাখা হলে অতালিকাভুক্ত কোম্পানিসমূহ তালিকাভুক্ত হতে উৎসাহিত হবে । এতে পুঁজিবাজারে গুণগত মানসম্পন্ন শেয়ারের যোগান বাড়বে যা বাজারে লেনদেন বৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতা আনয়নে ভূমিকা পালন করবে ।
৩. প্রস্তাবিত বাজেটে SME কোম্পানিসমূহের করমুক্ত আয় সীমার জন্য বার্ষিক লেনদেন ৩৬ লক্ষ থেকে ৫০ লক্ষ টাকা বাড়ানো হয়েছে । স্টক এক্সচেঞ্জে নতুন প্রবর্তিত SME বোর্ড বাস্তবায়ন, একটি মানসম্মত কর্পোরেট কাঠামো এবং রির্পোটিং এর মাধ্যমে প্রত্যক্ষ কর বাড়ানোর জন্য SME কোম্পানিসমূহকে তিন বছর শূন্য হার কর নির্ধারন করার প্রস্তাব পুনঃব্যক্ত করছি ।
৪. ঘোষিত বাজেটে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত লভ্যাংশ আয়কে করমুক্ত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে, যা আমাদের প্রস্তাবিত সীমা ০১ লক্ষ টাকায় উন্নীত করার জন্য অনুরোধ করছি ।
৫ ক. দেশের অর্থনীতির আকার এবং ব্যাংকিং খাতের অস্থিরতার প্রেক্ষিতে একটি শক্তিশালী বন্ড মার্কেট তৈরির লক্ষ্যে সকল প্রকার বন্ড থেকে প্রাপ্ত আয়কে করমুক্ত রাখা এবং জিরো কূপন বন্ড থেকে প্রাপ্ত আয়ের করমুক্ত সুবিধা ব্যাংক, ইনস্যুরেন্স ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ সকল করদাতাকে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব পুনঃবিবেচনার আহবান করছি ।
৫ খ. ২০১৩ সালের অর্থ আইন অনুযায়ী ৫৩ বিবিবি ধারা থেকে বণ্ড শব্দটি ডিলিট করা হয় । কিন্তু অন্যান্য আইনে সিকিউরিটিজ এর সংজ্ঞায় বন্ড অর্ন্তভুক্ত থাকায় বন্ড লেনদেনের উপর ০.০৫% হারে উৎসে কর কর্তন করা হয় । একটি শক্তিশালী এবং পৃথক বন্ড মার্কেট গঠনের লক্ষ্যে স্পষ্টভাবে উক্ত ধারা থেকে বন্ড লেনদেনকে অব্যহতি রাখা প্রয়োজন বলে মনে করছি ।
৬. এডিবি ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে সম্পাদিত ঋণ চুক্তির শর্ত হিসেবে প্রণীত ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন আইন দ্রত বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমরা উল্লখেযোগ্য ভূমিকা রেখেছি। ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন প্রক্রয়িা বাস্তবায়নে সরকারও আমাদের সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করে আসছে।
বর্তমানে সিএসই ক্রমহ্রাসমান হারে আয়কর প্রদান করে, যা এই অর্থবছরে শেষ হবে । এক্সচেঞ্জ ডিমিঊচ্যুয়ালাইজেশন আইন ২০১৩ এর বিধান অনুযায়ী মোট ইস্যুকৃত শেয়ারের শতকরা পঁচিশ ভাগ কৌশলগত বিনিয়োগকারীর নিকট বিক্রয় করতে হবে। সিএসই এখনো আইন অনুযায়ী কৌশলগত বিনিয়োগকারী নির্ধারণ করতে পারেনি । কৌশলগত বিনিয়োগকারীর নিকট শেয়ার বিক্রয়ের জন্য চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জকে (সিএসই) পাঁচ বছরের জন্য কর অব্যহতির সুবিধা দেয়া হলে ডিমিঊচ্যুয়ালাইজেশন আইন অনুযায়ী কৌশলগত বিনিয়োগকারী পেতে সহায়ক হবে এবং একই সাথে তুলনামূলক ছোট এক্সচেঞ্জ হিসেবে দেশের পুঁজিবাজারে যথাযথ ভূমিকা পালনে সক্ষম হবে ।
৭. স্টক ব্রোকারদের উৎসে কর কর্তনের হার পুনঃ নির্ধারনের জন্য বারংবার অনুরোধ সত্ত্বেও এই হার পূর্ববর্তী ০.০৫% এ বহাল রাখা হয়েছে। অধিকাংশ ব্রোকিং হাউজ বর্তমানে লোকসানী প্রতিষ্ঠানে পরিবর্তিত হওয়া সত্ত্বেও এসকল ব্রোকারেজ হাউজগুলো থেকে ক্রম বর্ধমান হারে কর আদায় আয়করের মৌলিক নীতিরও পরিপন্থী বলে আমরা মনে করি। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে স্টক ব্রোকারদের উৎসে কর কর্তনের হার ২০০৬ সালে চালুকৃত হারে, অর্থাৎ ০.০১৫% এ পূনঃনির্ধারনের জোর দাবী জানাচ্ছি।
এবারের বাজেটে অপ্রদর্শিত আয় নির্দিষ্ট কর প্রদান সাপেক্ষে বৈধ করনের বিধান রাখা হয়েছে যা ফ্ল্যাট, জমি কনো এবং ইকোনমকি জোনে বিনিয়োগ করা যাবে। এক্ষেত্রে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য কোন বিশেষ সুবিধা দেয়া হয়নি। পাচার রোধ করা ও বনিয়িোগরে র্স্বাথে অপ্রর্দ্রশতি র্অথ বনিা প্রশ্নে নর্দিষ্টি পরমিান কর দওেয়া সাপক্ষেে পুঁজবিাজারওে বনিয়িোগরে সুযোগ দওেয়ার জন্য অনুরোধ করছি ।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন সিএসইর কোম্পানি সচিব রাজীব সাহা, সচিব রাজিব শাহা, ডিজিএম হাসনাইন বারী প্রমুখ।
সান বিডি/এসকেএস