পুন্জিভূত লোকসানে থাকা কোম্পানি বোনাস শেয়ার দেয়ার বিধান না থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। এই বিধান লঙ্গণ করে ৩০ জুন, ২০১৯ সমাপ্ত হিসাব বছরের জন্য বোনাস লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত সমতা লেদার কমপ্লেক্স লিমিটেড। এর মাধ্যমে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) আইন লঙ্গণ করার অভিযোগ উঠেছে।ডিএসইতে প্রকাশ করা হয়েছে তাদের লভ্যাংশের খবর। এর পর থেকে হুর হুর করে বাড়ছে কোম্পানির শেয়ারের দর। এতে করে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার সঙ্কা তৈরি হয়েছে বিনিয়োগকারীদের।
তবে আইন ভঙ্গ হলে কোম্পানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশসনের (বিএসইসি) পক্ষ থেকে।
এদিকে গত ৩০ জুন,২০১৮ সালে কোম্পানির পুন্জিভুত লোকসান ছিলো ৭ কোটি ১৭ লাখ ১৭ হাজার টাকা। ৩০ জুন,২০১৭ সালে কোম্পানির পুন্জিভুত লোকসান ছিলো ৭ কোটি ১৩ লাখ ৪২ হাজার টাকা।
ডিএসই সূত্র মতে, গত ২ নভেম্বর কোম্পানির পর্ষদ সভায় ২ শতাংশ বোনাস শেয়ার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কোম্পানিটি। যা গত ৩ নভেম্বর ডিএসইর ওয়েবসাইডে প্রকাশ করা হয়েছে। এ সময় কোম্পানির শেয়ারপ্রতি আয় দেখানো হয়েছে মাত্র ২৮ পয়সা। এর পর থেকে লাগাম ছাড়া কোম্পানির শেয়ারের দর। মাত্র চার কার্যদিবসে দর বেড়েছে প্রায় ২৬ টাকা।
গত ৩ নভেম্বর কোম্পানির প্রতিটি শেয়ারের দর ছিলো ৮১ টাকা ৫১ পয়সা। ৪ নভেম্বর হয়েছে ৮৯ টাকা ৬০ পয়সা, ৫ নভেম্বর দাঁড়িয়ে ৯৮ টাকা। সর্বশেষ ৬ নভেম্বর এসে দাঁড়িয়েছে ১০৭ টাকা ৪০ পয়সা। এর মাধ্যমে দেখা গেছে প্রতিদিনই কোম্পানির প্রতিটি শেয়ারের দর সর্বচ্চো বেড়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে বিনিয়োগকারীদের।
এদিকে গত বছর ৩০ জুন,১৮ সময়ের জন্য কোম্পানিটি কোন লভ্যাংশ দেয়নি। একই বছর আর্থিক প্রতিবেদন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে অডিটর। অডিটর বলছে তাদের আর্থিক প্রতিবেদনে ডেফারটেক্সকে কনসিডার করা হয়নি। গত বছর কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের কোনো লভ্যাংশ না দেওয়ায় ৫০ টাকায় চলে আসে কোম্পানির শেয়ারের দর। এর পর আস্তে আস্তে করে আবারও বাড়তে থাকে। এক বছরে শেয়ারের দর বেড়েছে প্রায় ৫৭ টাকা।
এ বিষয়ে একাধিক বিনিয়োগকারী সানবিডিতে অভিযোগ করে বলেন, বিএসইসি আইন করে, আর ডিএসই সে বিষয়ে খবর রাখেনা। একটি কোম্পানি সংবাদ দিলো, আর যাচাই-বাছাই না করেই প্রকাশ করে দিলো।
সূত্র মতে, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) ২০১৮ সালের ৮ আগস্ট একটি নোটিফিকেশনে বলা হয়েছে কোন প্রতিষ্ঠানের পুন্জিবুত (রিটেইন আর্নিং) লোকসান থাকলে সেই কোম্পানি লভ্যাংশ দিতে পারবে না। এটিকে আরও পরিস্কার করার জন্য গত ২ অক্টোবর একটি নির্দেশনা জারি করে বিএসইসি।
নির্দেশনায় বলা হয়েছে, বিনিয়োগকারী ও পুঁজিবাজারের স্বার্থে তালিকাভুক্ত কোম্পানির লভ্যাংশ ঘোষণা ও বিতরণ সংক্রান্ত একটি নোটিফিকেশন ২০১৮ সালের ২০ জুন প্রকাশ করে এবং পরবর্তীতে বোনাস শেয়ার সংক্রান্ত আরও একটি নোটিফিকেশন চলতি বছরের ২৩ মে প্রকাশ করে। বিষয়টি বিনিয়োগকারী ও কোম্পানির আবেদন পর্যালোচনা পূর্বক বিনিয়োগকারী ও পুঁজিবাজারের স্বার্থে অধিকতর স্পষ্ট করার প্রয়োজনে নগদ লভ্যাংশ সংক্রান্ত ব্যাখ্যা দেয় বিএসইসি।
ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে‘অন্যান্য সিকিউরিটিজ আইন পরিপালন করে, স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত কোম্পানিসমূহ পুঞ্জিভূত লোকসান বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও সংশ্লিষ্ট বছরের অর্জিত মুনাফা হতে নগদ লভ্যাংশ সুপারিশ, ঘোষণা ও বিতরণ করতে পারবে।’
এ বিষয়ে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মূখপাত্র মো. সাইফুর রহমান সানবিডিকে বলেন, বিনিয়োগকারীদের স্বার্থের বিষয়টি মাথায় রেখে কাজ করে বিএসইসি। কোন প্রতিষ্ঠান যদি আইন ভঙ্গ করে কোন কিছু করে, তাহলে আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে কমিশন।
সানবিডি/এসএমএস/জিইউ