সিকিউরিটিজ আইর লঙঘন করে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত শতাধিক কোম্পানি তাদের সহযোগী প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দিয়েছে। এর মাধ্যমে বঞ্চিত করা হয়েছে শেয়ারহোল্ডারদের। সহযোগী প্রতিষ্ঠানের ঋণ দিয়ে বিপদে মূল কোম্পানি। এর থেকে মুক্তি পেতে ইস্যু করছে রাইট ও বোনাস শেয়ার। এর মাধ্যমে দ্বিতীয়বার বঞ্চিত হচ্ছে শেয়ারহোল্ডার। এবার এই টাকা ফেরত নেওয়ার উদ্যোগ নিচ্ছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সুত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালে সহযোগী কোম্পানিকে ঋণ দেয় তালিকাভুক্ত ১৩১টি কোম্পানি। চলতি বছর এর পরিমাণ ১০০-এর কাছাকাছি নেমে এসেছে। সহযোগী কোম্পানিকে এভাবে ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে এসব কোম্পানি সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘন করেছে।
২০০৬ সালের ১০ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত এসইসির এক প্রজ্ঞাপনে তালিকাভুক্ত কোম্পানি থেকে অন্য কোম্পানিকে ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে বেশ কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। এতে বলা হয়, তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানি তার কোনো পরিচালকের অন্য কোনো কোম্পানিকে কোনো প্রকার ঋণ বা ঋণের বিপরীতে জামানত দিতে পারবে না। তবে কোম্পানির পর্ষদ ঋণ দেওয়ার সুপারিশ করলে এবং সাধারণ সভায় শেয়ারহোল্ডাররা অনুমোদন করলে পরিশোধিত মূলধনের সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ ঋণ দেওয়া যাবে। সিকিউরিটিজ আইনে এমন বিধান থাকলেও কোম্পানি সাধারণ সভায় সহযোগী কোম্পানিকে ঋণ দেওয়ার প্রস্তাব উত্থাপন করেনি। এ ধরনের ঋণে কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালকরা লাভবান হলেও শেয়ারহোল্ডাররা বঞ্চিত হয়েছেন।
এদিকে ২০১৬ সালে আইন তৈরি হলেও এতদিন তা প্রয়োগ করেনি এসইসি। এমনকি নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানও কোনো পর্যবেক্ষণ বা আপত্তি দেয়নি। ডিএসই এ বিষয়ে দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করে ২০১৯ সালে ১৩১ কোম্পানিতে সহযোগী প্রতিষ্ঠানে বেআইনি ঋণের বিষয়টি উদঘাটন করলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
এ বিষয়ে ড. খায়রুল হোসেন কমিশনের নজরে আনলেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। তবে বর্তমানের পুনর্গঠিত কমিশন তালিকাভুক্ত কোম্পানিতে প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন নিশ্চিত করতে বেআইনি ঋণ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে। কমিশনের সুনির্দিষ্ট আদেশ লঙ্ঘনের দায়ে ইতিমধ্যেই তালিকাভুক্ত একটি কোম্পানির পরিচালকদের বড় অঙ্কের জরিমানা করা হয়েছে।
একই কারণে জেএমআই হসপিটাল রিক্যুইজিট ম্যানুফ্যাকচারিংয়ের আইপিও আবেদন বাতিল করেছে। একই সঙ্গে স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে গত ১৩ আগস্ট সহযোগী কোম্পানিকে দেওয়া ঋণের সব তথ্য চেয়ে তালিকাভুক্ত সব কোম্পানিকে চিঠি দিয়েছে এসইসি। তথ্য পাওয়ার পর দোষীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থার পাশাপাশি ঋণ ফেরত নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হবে বলে বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে।