বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে পুঁজিবাজারে আসার অপেক্ষায় থাকা এনার্জিপ্যাক পাওয়ার জেনারেশন লিমিটেডের ছয়টি স্বতন্ত্র বিক্রয় বিভাগ রয়েছে যেগুলো আলাদাভাবে পৃথক কোম্পানী গঠনের যোগ্যতা রাখে । কোম্পানিটি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়ে বিনিয়োগকারীদের আস্থার প্রতিফলন ঘটাতে চায় ।
কোম্পানি সূত্র মতে, এনার্জিপ্যাকের মুনাফা বিভাগগুলোর মধ্যে Motor Vehicle Division, LPG Division, Generator, Steelpac উল্লেখযোগ্য । কোম্পানী-র অন্যান্য ব্যাবসার মধ্যে রয়েছে EPC, Service & Maintenance, CNG Station অন্যতম । এছাড়াও কোম্পানিটির subsidiary হিসেবে তিনটি আইপিপি কোম্পানি রয়েছে ।
কোম্পানিটির সবচেয়ে বেশি মুনাফা আসে মোটর ভেইক্যাল বিভাগ থেকে । এর মধ্যে রয়েছে গাড়ি বিক্রি, পিকাপ বিক্রি, সিএনজি conversion, প্যাসেঞ্জার কার ইত্যাদি । এই গাড়িগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় দেড় টনের ট্রাক । এখাতের মার্কেট লিডার এনার্জিপ্যাক । কোম্পানিটি বিআরটিএর অনুমোদন নিয়ে এই খাতের সকল ধরণের কাজ করে । এনার্জিপ্যাক এর নিজস্ব গাড়ী সংযোজন কারখানা রয়েছে যেটি গাজীপুরে অবস্থিত ।
এনার্জিপ্যাক এলপিজি ব্যবসা (যেটি জি-গ্যাস নামে বাজারজাত করা হয়) থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ মুনাফা অর্জন করে । এই ব্যবসা করার জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হলো স্টোরেজ ক্ষমতা । এই ব্যবসার মূলমন্ত্র যার যতো স্টোরেজ ক্যাপাসিটি এবং ডিস্ট্রিবিকউটিং চ্যানেল ভালো । এটি হলো তারা ভালো করতে পারে । জি-গ্যাসের এই মূহুর্তে স্টোরেজ ক্যাপাসিটি রয়েছে ৫,৪০৫.৮৩ মেট্রিক টন । খুব শিগগিরই এটা ৬ হাজার ৮০০ মেট্রিক টন-এ উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে কোম্পানিটির । কোম্পানিটি রূপগঞ্জে একটা ডটার স্টেশন গঠনের প্রক্রিয়া কার্যাধীন রয়েছে । খরচ কমাতে কোম্পানিটি মংলা থেকে নৌ রুটে ঢাকায় কাচামাল আনতে চায় । সেই জন্যই এটি করা হবে বলে জানান কোম্পানি সচিব আলাউদ্দিন শিবলী ।
তিনি জানান, কোম্পানিটি তার নিজস্ব উৎপাদন কারখানায় সিলিন্ডার উৎপাদন করে । কোম্পানিটি ইহার নিজের উৎপাদিত সিলিন্ডার দিয়েই সারা দেশে বিতরণের কাজ সম্পন্ন করে । এটার একটা সুবিধা রয়েছে । ফলে ক্রস ফলিং হওয়ার প্রবণতা কম হয় । কারণ এখানে সিকিউরিটি ক্যাপের একটা ব্যাপার ও সিকিউরিটি কোডের একটা ব্যাপার থাকে । আপনি যদি ক্রস ফিলিং করেন, এই সিলিন্ডারটা যদি আরডিসিতে (Regional Distribution Center) যায় তারা এটাকে ধরে ফেলবে । কারণ এখানে হেলথ সেফটি টা খুব জরুরি ।
কোম্পানি সচিব জানান, ১৯৯৫ সালে এনার্জিপ্যাক ব্যবসা শুরু করে । ওই সময়ে কোম্পানিটি লো-ভোল্টেজ এক্সসরিজ এবং জেনারেটর বিতরণের সাথে যুক্ত ছিল । ওই সময়ে কোম্পানিটির ডিস্ট্রিবিউটিং চ্যানেল যা ছিলো, তা দিনে দিনে বাড়িয়েছে । বর্তমানে কোম্পানিটির ৪৫০ জন ডিষ্ট্রিবিউটর রয়েছে ।
ব্যবসার শুরুর দিকে আমরা Rolls Royce, Perkins, Guascor ইত্যাদি আমদানি করে বিক্রি করতাম । এই ইঞ্জিনগুলো gas বা fuel দুই ভাবেই চলে । বর্তমানে আমরা আমাদের নিজস্ব কারখানায় GLAD নামে সম্পূর্ণ দেশীয়ভাবে জেনারেটর সংযোজন করি । এটার মূল্য, গুনগত মান এবং সার্ভিস এর জন্য যেকোনো সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রথম পছন্দের তালিকায় এটি অবস্থান করছে । এখন হয়ত আগের মত লোডশেডিং হয়না কিন্তু এক মিনিট, দুই মিনিট বা পাঁচ মিনিটের পাওয়ার ফ্লাকচুয়েশন আমাদের জন্য অনেক বড় ব্যাপার হয়ে উঠে । আগে যখন ২০ ঘণ্টা লোডশেডিংয়ে ছিলাম এখন দুই ঘণ্টাও থাকতে চাই না । সুতরাং উন্নত সার্ভিসের কারণে জেনারেটর স্বয়ংক্রিয় এবং বাধাহীন ভাবে দীর্ঘদিন চলে । আমাদের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সার্ভিস টিম যেটি দক্ষতা এবং আস্থার সাথে প্রদান করে আসছে ।
জনাব শিবলীর মতে, Steelpac division স্টিল ফেব্রিকেশন বিল্ডিং বা কারখানা তৈরি করে থাকে । এই খাতে এনার্জিপ্যাকের একটি সুদৃঢ় অবস্থান ইতোমধ্যে তৈরী হয়েছে । Steelpac রূপপুর পারমানবিক প্রকল্পে সফলতার সাথে কাজ সম্পন্ন করেছে যেটি নিঃসন্দেহে একটি গর্বের বিষয় ।
আমাদের তিনটি Subsidiary পাওয়ার প্লান্ট কোম্পানি রয়েছে যেগুলো হবিগঞ্জ (১১ মেগাওয়াট), চট্টগ্রাম (১১৫ মেগাওয়াট) এবং ঠাকুরগাঁও-এ (১০৮ মেগাওয়াট) অবস্থিত । বলাবাহুল্য যে, এনার্জিপ্যাক একমাত্র কোম্পানী হিসেবে আন্তর্জাতিক দরপত্রে অংশগ্রহন করে ফরিদপুর (৫০ মেগাওয়াট) এবং গোপালগঞ্জ (১০০ মেগাওয়াট) পাওয়ার প্লান্টে-র EPC (Engineering, Procurement & Construction) যথাসময়ে সম্পন্ন করে হস্তান্তর করেছে ।
আরো উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, গত একদশক যাবত আমরা প্রতিষ্ঠানে সুশাসন নিশ্চিতকল্পে নির্দেশিত Corporate Governance Code পালন করে আসছি । এর-ই ধারাবাহিকতায় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্রফেশনাল দ্বারা কোম্পানিটি পরিচালিত হয়ে আসছে ।