কার্যক্রম শুরু করতে চায় পিপলস লিজিং!

নিজস্ব প্রতিবেদক আপডেট: ২০২০-০৯-২২ ০৯:৪১:১৫


আদালতের আদেশে বন্ধ হওয়া পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত আর্থিক খাতের পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স সার্ভিসেস লিমিটেডের আবারও কার্যক্রম শুরু করতে চায়। কোম্পানিটি যাদের হাতে গড়ে উঠেছে তারাই আবার প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্ব নিয়ে তা শুরু করতে চায়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্র মতে, আবাসন খাতের মালিকদের সংগঠন রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) সভাপতি শামসুল আলামিন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলমগীর শামসুল আলামিনসহ কয়েকজন ব্যবসায়ী আগ্রহ দেখিয়েছেন। এর জন্য তারা অর্থমন্ত্রণালয়ের সাথে বৈঠকও করেছেন। বিষয়টি ইতিবাঁকভাবে দেখছে মন্ত্রণালয়। তবে কবে থেকে কার্যক্রম শুরু হতে পারে তা নিশ্চিত না।

এদিকে বিষয়টির আইনি ব্যাংখ্যা চেয়েছে মন্ত্রণালয়। ব্যাংলাদেশ ব্যাংকরে আইনজীবী আইনজীবী ব্যারিস্টার তানজিব উল আলমের মতামত নিয়ে তা পাঠানো হয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে। বিশিষ্ট এ আইনজীবী আর্থিক প্রতিষ্ঠানটি চালুর পক্ষে মত দিয়েছেন বলে জানা গেছে।

সূত্র মতে, কোম্পানিটিকে বন্ধ না করে আবারও চালু করার জন্য অনুরোধ করেন উদ্যোক্তাতা পরিচালকসহ কয়েকজন ব্যবসায়ী। বিষয়টি নিয়ে বৈঠকে বসেন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে। পরে তার আইনী ব্যাংখ্যা চাওয়া হয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে। এই প্রতিষ্ঠানটি নিয়ে শুরু থেকই কাজ করা আইনজীবী ব্যারিস্টার তানজিব উল আলমের মতামত নিয়ে তা পাঠানো হয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে। বিশিষ্ট এ আইনজীবী আর্থিক প্রতিষ্ঠানটি চালুর পক্ষে মত দিয়েছেন বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার তানজিব উল আলমের কাছে জানতে চাইলে সরাসরি কোন কথা বলেননি। তবে তিনি বলেন, আদালত চাইলে বন্ধ হওয়া প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম চালু করতে পারে।

এ বিষয়ে আলমগীর শামসুল আলামিন বলেন, পিপলস লিজিং এক সময় ভালো প্রতিষ্ঠান ছিল। তার পরিবারের লোকজন যখন ছিল প্রতিষ্ঠানটি ভালো চলছিল। পি কে হালদার দলবল নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি লুটেপুটে খেয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। এ অবস্থা পুরো আর্থিক খাতের জন্য খারাপ। পিপলস লিজিংয়ের এ অবস্থা পুরো আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতকে আস্থাহীনতায় ফেলেছে। পুনরায় চালু করা গেলে এর প্রতি মানুষের আস্থা বাড়বে। তিনি বলেন, সার্বিক বিবেচনায় তারা প্রতিষ্ঠানটি চালুর জন্য আবেদন করেছেন। ইতিবাচক সাড়া পেলে পরবর্তী উদ্যোগ কার্যক্রম শুরু করবেন। অর্থ মন্ত্রণালয়, কেন্দ্রীয় ব্যাংক, ঋণগ্রহীতা ও আমানতকারী সবার সহযোগিতা নিয়ে ভালোভাবে চালাতে পারবেন বলে তিনি আশা করেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, পিপলস লিজিংয়ে আমানতকারীদের জমা আছে ২ হাজার ৩৬ কোটি ২২ লাখ টাকা। এর মধ্যে ব্যক্তি পর্যায়ের আমানত রয়েছে সাড়ে ৭শ’ কোটি টাকা। প্রতিষ্ঠানটির বিতরণ করা ঋণের বড় অংশই নানা অনিয়মের মাধ্যমে বের হয়ে যাওয়া। এসব অর্থ ফেরত আসার তেমন কোনো সম্ভাবনা দেখছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। নানাভাবে যারা এখান থেকে অর্থ নিয়েছেন তাদের অনেকেই এখন পলাতক। ফলে প্রতিষ্ঠানটির সম্পদ বিক্রির মাধ্যমে অর্থ ফেরত পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। যে কারণে এখন প্রতিষ্ঠানটি চালুর মাধ্যমে অর্থ ফেরতের বিকল্প ভাবা হচ্ছে। তবে কী উপায়ে কতদিনের মধ্যে আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দেওয়া হবে এবং বাদপড়া কর্মীদের কী হবে আলোচনার ভিত্তিতে তা ঠিক হবে।

আদালতের নির্দেশনার আলোকে বর্তমানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডিজিএম আসাদুজ্জামান খান পিপলস লিজিংয়ের প্রতিষ্ঠানের সাময়িক অবসায়ক হিসেবে কাজ করছেন। আর সাবেক কর্মীদের মধ্য থেকে ২০ জনকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির ব্যাংক হিসাবে জমা হয়েছে মাত্র ১৬ কোটি টাকা।

ডিএসই সূত্র মতে, কোম্পানটি পুঁজিবাজারে তালিভুক্ত হয়েছে ২০০৫ সালে। কোম্পানিটির মোট পরিশোধিত মূলধন ২৮৫ কোটি ৪৪ লাখ টাকা ১০ হাজার টাকা। মোট শেয়ারের সংখ্যা ২৮ কোটি ৫৪ লাখ ৪০ হাজার ৫৮৭টি। এর মধ্যে উদ্যোক্তা পরিচালকদের কাছে আছে ২৩ দশমিক ২১ শতাংশ। বাকী শেয়ারের প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে মধ্যে ৮ দশমিক ৬২ শতাংশ,বিদেশীদের কাছে দশমিক ১৯ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছ  ৬৭ দশমিক ৯৮ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।

আদালতের আদেশে বন্ধ হওয়া কোম্পানিটি বর্তমানে পুঁজিবাজারে লেনদেন বন্ধ রয়েছে। দফায় দফায় ২২ বার বন্ধের সময় বাড়িয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)।