চাঁদপুরে মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের জন্য করোনা টেস্টিং ল্যাবের মাধ্যমে ব্যাপক সফলতা পাওয়া গেছে। জেলাটিতে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুত কমছে। বর্তমানে আক্রান্তের হার শতকরা ৭ ভাগ। আর শুরুর দিকে ছিল ২৮ ভাগ।
চাঁদপুর জেলায় করোনা সংক্রমণ শুরুর পর প্রথম তিন মাসের তুলনায় গত দুই মাসে আক্রান্তের হার খুবই কম। মৃত্যুর সংখ্যা গত দুই মাসে ২ জন। চাঁদপুর শহরে গত ছয় মাসে মোট আক্রান্ত হয়েছে ৮০৮ জন। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছে ৭৭৭ জন। শতকরা হিসাবে সুস্থতার হার হচ্ছে ৯৬ ভাগ। এ তথ্য জানিয়েছেন চাঁদপুরের সিভিল সার্জন ডা. মো. সাখাওয়াত উল্লাহ।
গত ৮ এপ্রিল প্রথমে চাঁদপুর জেলায় করোনা রোগী শনাক্ত হয়। এটি হয় মতলব উত্তর উপজেলায়। এরপর থেকে ক্রমান্বয়ে চাঁদপুরে করোনা আক্রান্ত রোগী বাড়তে থাকে। এ সংক্রমণ বৃদ্ধির হার জুলাইয়ের মাঝামাঝি পর্যন্ত ছিল। তখন আক্রান্তের হার পুরো জেলায় ছিল ২৮ ভাগ। সেই হিসাবে তখন মৃত্যুর সংখ্যাও তুলনামূলক একটু বেশি ছিল।
শতকরা হারে তখন মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ৮ ভাগ। জুলাইয়ের মাঝামাঝিতে আড়াইশ' শয্যাবিশিষ্ট চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্লান্ট স্থাপন হওয়ায় পর মৃত্যুর হারও কমতে থাকে। বর্তমানে মৃত্যুর হার আক্রান্তের তুলনায় এক ভাগেরও কম। গত দুই মাসে পুরো জেলায় করোনায় মারা গেছে মাত্র দুইজন। আর চাঁদপুর শহরে মারা গেছে মাত্র একজন।
এ ব্যাপারে সিভিল সার্জন ডা. মো. সাখাওয়াত উল্লাহ আরও জানান, চাঁদপুরে করোনা টেস্টিং ল্যাব স্থাপন হওয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুত কমতে থাকে। গত এক মাসে চাঁদপুর পৌর এলাকায় করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা হচ্ছে ৭৬ জন। এদের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ৬২ জন, আর মারা গেছেন মাত্র একজন।
এদিকে চাঁদপুর জেলায় করোনা রোগী শনাক্ত হওয়া থেকে শুরু করে বর্তমান সময় পর্যন্ত প্রায় ছয় মাসে নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ১০ হাজার ৭২০ জনের। এর মধ্যে পজিটিভ রিপোর্ট এসেছে ২ হাজার ২৬১ জনের। এদের মধ্য থেকে সুস্থ হয়ে গেছেন (২২ সেপ্টেম্বর পযন্ত) ১ হাজার ৮৮২ জন। আর মোট আক্রান্ত রোগীর মধ্যে পুরো জেলায় মারা গেছেন ৭৭ জন।
জেলায় অবস্থিত আড়াইশ' শয্যাবিশিষ্ট চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালের আরএমও ডা. সুজাউদ্দৌলা রুবেল জানান, হাসপাতালে বর্তমানে করোনায় আক্রান্ত রোগী ভর্তি আছে মাত্র চারজন। আর করোনা সন্দেহজনক ভর্তি মাত্র ১১ জন।
চাঁদপুরে করোনা শনাক্ত হওয়া থেকে শুরু করে প্রথম সাড়ে তিন মাসের মতো আক্রান্তের শতকরা হার ২৮ থেকে ২৩ ভাগের মধ্যে থাকলেও বর্তমানে আক্রান্তের হার মাত্র ৭ ভাগে নেমে আসার বিষয়ে সিভিল সার্জন আরও জানান, চাঁদপুরে কোভিড-১৯ শনাক্তকরণ পরীক্ষাগার স্থাপনের আগপর্যন্ত এ জেলার স্যাম্পল পরীক্ষা করার জন্য ঢাকায় পাঠানো হতো। আর ঢাকা থেকে রিপোর্ট আসতে সময় লেগে যেত এক সপ্তাহ থেকে ১২-১৩ দিন পর্যন্ত। এ সময়েই সংক্রমণ বেড়ে যেত। স্যাম্পল দেয়ার পর রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত মানুষ অবাধে চলাচল করত। আর তা থেকেই সংক্রমণ বাড়ত।
কিন্তু যখন চাঁদপুরে স্যাম্পল পরীক্ষা করার কাজ শুরু হয়ে গেল, তখন দিনের রিপোর্ট দিনেই পাওয়া যেত। ফলে আক্রান্ত রোগীকে ১০ থেকে ১২ ঘণ্টার মধ্যেই রিপোর্ট জানিয়ে তাকে আইসোলেশনে নিয়ে যাওয়া হয়। এতে তার থেকে আর কেউ সংক্রমিত হতে পারেননি। এভাবেই চাঁদপুরে করোনায় আক্রান্তের প্রাদুর্ভাব কমতে থাকে এবং মৃত্যুর হারও অনেক কমতে থাকে। বর্তমানে চাঁদপুর জেলায় নমুনা পরীক্ষার হিসাবে আক্রান্তের হার মাত্র ৭ ভাগ। আর পৌর এলাকায় পাঁচ ভাগেরও কম।
সানবিডি/এনজে