দেশের গুরুত্বপূর্ণ পাটশিল্প রক্ষায় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এ খাতের উদ্যোক্তারা। গত মঙ্গলবার এ দাবি জানিয়ে পৃথক চিঠিও দেওয়া হয়েছে কয়েকটি মন্ত্রণালয়ে। সংশ্নিষ্ট সূত্রে এ খবর জানা গেছে।
এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর কাছে লেখা চিঠিতে বলা হয়েছে,দেশের পাত খাত টিকিয়ে রাখা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। মৌসুমেই এখন কাঁচা পাটের অভাব। কৃষকের হাতছাড়া হওয়ার পর দাম এখন গত বছরের প্রায় দ্বিগুণ। অস্বাভাবিক বেশি দামের কারণে পাটপণ্য উৎপাদন ব্যয় বাড়ছে। বাড়তি দামেও মিলছে না কাঁচা পাট। কাঁচা পাটের অবৈধ মজুদ এবং অস্বাভাবিক রপ্তানির কারণে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। পাটের অভাবে আর কয়েক মাস পর মিলের উৎপাদন বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন উদ্যোক্তারা। এতে আগামী মৌসুমে দেশে পাটের চাহিদা থাকবে না। চাহিদা না থাকলে দাম পড়ে যাবে। ফলে আগামীতে পাটের আবাদ কমে যাবে। পাট খাতে এখন প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে চার কোটি মানুষের জীবিকা চলছে। ফলে গোটা অর্থনীতিতে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়ে পাটপণ্যের উদ্যোক্তাদের দুই সংগঠন জুট মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিজেএমএ) এবং জুট স্পিনার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজেএসএ) এ চিঠি দিয়েছে। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি খাত উন্নয়ন উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানকে পৃথক চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠিতে বলা হয়, দফায় দফায় বন্যাসহ এবার পাট উৎপাদন কম হয়েছে ২০ লাখ টন। এ কারণে মণপ্রতি দাম বেড়ে হয়েছে তিন হাজার টাকা, যা গত মৌসুমের প্রায় দ্বিগুণ। এর মধ্যে কাঁচা পাট রপ্তানি বাড়ছে অস্বাভাবিক হারে। চিঠিতে গত জুলাই মাসের তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। ওই মাসে রপ্তানি বেশি হয়েছে ৫৯ শতাংশ। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য থেকে জানা যায়, দ্বিতীয় মাসেও রপ্তানিতে গতি অব্যাহত আছে।
পাঠানো এই চিঠিতে পাটের মাধ্যমে জাতীয় অর্থনীতির স্বার্থে কাঁচা পাট মজুদ বন্ধ করা, একজন লাইসেন্সধারী এক হাজার মণের বেশি যাতে সংগ্রহ করতে না পারে এবং এক মাসের বেশি যাতে মজুদ রাখতে না পারে, সে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে। স্থলবন্দরের পরিবর্তে সমুদ্রবন্দর দিয়ে রপ্তানির ব্যবস্থা করা। স্থলবন্দর দিয়ে কাঁচা পাট পাচার হচ্ছে। এ ছাড়া কাঁচা পাট রপ্তানি নিয়ন্ত্রণে টনপ্রতি অন্তত ২৫০ ডলার রপ্তানি শুল্ক্কারোপ করা।
এ ব্যাপারে বিজেএমএর চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান পাটোয়ারী বলেন, রপ্তানি খাতের বড় পণ্যের মধ্যে একমাত্র পাটপণ্যেই প্রায় শতভাগ মূল্য সংযোজন হয়। এক টন কাঁচা পাট রপ্তানি করে যে আয় হয়, তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি পাটপণ্য রপ্তানি থেকে আসে। কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে সুবিধার ব্যবধানটা আরও বড়। এক টন কাঁচা পাট রপ্তানিতে পাঁচ থেকে ছয়জনের কর্মসংস্থান হয়। অথচ এক টন পাটপণ্য রপ্তানিতে ৭০ থেকে ৮০ জনের কর্মসংস্থান হয়। তিনি জানান, বছরে প্রায় সাত লাখ টন পাটপণ্য রপ্তানি করেন তারা। রপ্তানি আয়ের পরিমাণ প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা। অন্যদিকে কাঁচা পাট রপ্তানির পরিমাণ সাত থেকে আট লাখ টন। তার প্রশ্ন, তাহলে দেশের স্বার্থে কোনটা বিবেচনা করা দরকার।
গত অর্থবছরে পাট ও পাটপণ্য রপ্তানি থেকে আয় এসেছে ৮৮ কোটি ডলার। এর মধ্যে কাঁচা পাটের অংশ ছিল ১৩ কোটি ডলারের কম। চলতি অর্থবছরের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা ১১৭ কোটি ডলার। এই লক্ষ্যমাত্রায় কাঁচা পাট রপ্তানি থেকে ১৮ কোটি ডলার আসার কথা। বাকি প্রায় ১০০ কোটি ডলার আসবে পাটপণ্য রপ্তানি থেকে। গত জুলাই-আগস্টে রপ্তানি হয়েছে ২০ কোটি ডলারের পাট ও পাটপণ্য।
এই চিঠিতে বলা হয়, পাট রপ্তানি বন্ধ চান না তারা। বেশি হারে রপ্তানি শুল্কারোপ করা হলেও ভারতসহ অন্যান্য দেশ পাট আমদানি করবে। এতে দেশই লাভবান হবে। এর চেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে, ভারত-চীন বেশি দামে পাট কিনলে সমজাতীয় পণ্যে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ কাছাকাছি চলে আসবে।
সানবিডি/এনজে/৭:৫৪/৩.১০.২০২০