‘এক সাগর রক্তের বিনিময়ে বাংলার স্বাধীনতা আনলে যারা, আমরা তোমাদের ভুলব না’ মহান মুক্তিযুদ্ধে বীর সেনানীদের স্মরণে এমন মর্মস্পর্শী গান আর সুর যেনো সাড়ে চার দশকের স্বাধীনতাকে আরো অর্থবহ করে তোলে। জাতি ভোলেনি তাদের বীরত্বের কথা। ভোলা যে যায় না।
বিজয়ের ৪৪ বছরে বাঁধভাঙ্গা উল্লাসে মেতেছে জাতি। এ যেন স্বাধীনতা নামের পরশ পাথর ক্ষণে ক্ষণে স্পর্শ করা। হৃদ আঙিনা বিজয় আনন্দে নাচিয়ে তোলা।
এমন আনন্দের জোয়ারে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় চলার পথকে শাণিত করে সবাই যেন দেশ মাতৃকার তরে নিবেদিত হতে চাইছে। জরা আর গ্লানি মুছে দীপ্ত শপথে পবিত্র হতে চাইছে।
জাতি, ধর্ম, বর্ণ আর রাজনীতির ঊর্ধ্বে থেকে বিজয় আনন্দ যেন সবাই নিজের করে নিচ্ছে। হিংসে, বিদ্বেষ ভোলানো আনন্দ ভাগাভাগিতে কারোই কোনো কার্পণ্য ছিল না।
বিজয় দিবস উপলক্ষে রাজধানী ঢাকা আজ অন্যরকম সাজে সেজেছে। রাত থেকেই পুরো ঢাকা এক আলোকসজ্জার শহরে রূপ নেয়। সরকারি ভবন, মহাসড়ক, সড়কের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট, শপিং মল, পাঁচ তারকাসহ আবাসিক হোটেলগুলোয় ব্যাপক আলোকসজ্জা করতে দেখা যায়।
ঢাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বিজয় দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে। সকাল থেকেই শিক্ষক-শিক্ষার্থী এ সব কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে বিজয়ের আনন্দে মেতে ওঠেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজে, ইডেন কলেজসহ গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নিতে মানুষের যেন ঢল নামে।
পুরো রাজধানীই যেন লাল-সবুজের পতাকায় মোড়ানো। পরনে লাল-সবুজের ফতুয়া, পাঞ্জাবি আর শাড়িতে বাঙালিয়ানার পাশাপাশি স্বাধীনতার গুরুত্ব তুলে ধরতে সবাই যেন প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। হাতে পতাকা। গাড়ির সামনে বা বাড়ির ছাদেও পতাকা। রং তুলিতে শিশু, তরুণ-তরুণীরাও গালে পতাকা এঁকে যেন দেশপ্রেমের কথাই মনি করিয়ে দিচ্ছে।
ঢাকার অদূরে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধ সকাল থেকেই বিজয় আনন্দে মুখরিত। রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর পরপরই সকলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয় স্মৃতিসৌধ চত্বর। সর্ব সাধারণের ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত হয়ে ওঠে জাতীয় স্মৃতিসৌধ।
দিবসটিকে কেন্দ্র করে সশস্ত্র বাহিনী সকাল থেকেই প্যারেডসহ নানা কর্মসূচি পালন করে আসছে। জাতীয় প্যারেড ময়দানে রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রী সশস্ত্র বাহিনীর প্যারেড প্রত্যক্ষ করেন।
ঢাকার মতো পুরো দেশই বিজয় আনন্দে মাতোয়ারা। প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্ব-মহিমায় বিজয় দিবস উপলক্ষে কর্মসূচি পালন করছে। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আলোচনাসহ খেলাধুলারও আয়োজন করতেও দেখা গেছে। অনেক আবার দিবসটি উপলক্ষে বনভোজনেরও আয়োজন করছে বলে জানা গেছে।
বিজয় দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো দিনব্যাপি কর্মসূচি পালন করছে। সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে নানা অনুষ্ঠানের আয়েজন করা হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় টিএসসি চত্বরে বান্ধবী রতিকাকে নিয়ে ঘুরতে এসেছেন রায়ের বাজার থেকে আলভী সরকার। দু’জনেই লাল-সবুজের শাড়ি পরা। ওরা কলেজে পড়ে। বিজয় দিবসের আনন্দ প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, ‘এবারের আনন্দ একেবারেই অন্যরকম লাগছে। আগে কখনও এভাবে বের হয়নি। সন্ধ্যায় বাসায় ফিরবো। বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছি। বিকেলে টিএসসিতে অনুষ্ঠান দেখব। খুব ভালো লাগছে।’
আলভীর কথায় সায় দিয়ে পাশে থাকা বান্ধবী রতিকা বলছিল, ‘মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতার ইতিহাস জানা। কিন্তু এমন বিশেষ দিনে বাইরে এলে দেশের প্রতি আবেগ, ভালোবাসা আরো বেড়ে যায়। আজকের আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করবার নয়। বিজয় আনন্দের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ দীর্ঘজীবী হোক।’