প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেছেন,মিউচ্যুয়াল ফান্ডের কাঠামো হাস্যকর। একটি প্রতিষ্ঠানের নামে ফান্ড; কিন্তু ফান্ডের অবস্থা খারাপ হলে তার কিছু করার নেই। এর কাঠামোগত পরিবর্তন প্রয়োজন।বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহ ২০২০ উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) আয়োজিত ‘বাংলাদেশের উন্নয়নে পুঁজিবাজারের ভূমিকা’ শীর্ষক ওয়েবিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ওয়েবিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অব সিকিউরিটিজ কমিশনসের (আইওএসকো) সঙ্গে যৌথভাবে ৫-১১ অক্টোবর দেশে বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহ উদযাপনের উদ্যোগ নিয়েছে বিএসইসি। কভিড-১৯-এর কারণে ভার্চুয়াল মাধ্যমে এবার দিবসটি উদযাপিত হচ্ছে। এ উপলক্ষে আয়োজিত উদ্বোধনী ওয়েবিনারে সভাপতিত্ব করেন বিএসইসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম।
তিনি বলেন,গত ১২ বছরে বাংলাদেশের অকল্পনীয় উন্নতি হয়েছে। কিন্তু ট্যাক্স টু জিডিপি রেশিও ও মার্কেট ক্যাপ টু জিডিপি রেশিওতে উন্নতি হয়নি। প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে হলে পুঁজিবাজারকে শক্তিশালী করতে হবে। বন্ড মার্কেটের উন্নয়নে বর্তমান কমিশন বেশকিছু উদোগ নিয়েছে। ডেরিভেটিভসের প্রয়োজন আছে, কিন্তু এর আগে প্রেফারেন্স শেয়ার ও কনভার্টিবল বন্ডের মতো পণ্যকে প্রাধান্য দেয়া প্রয়োজন।
মিউচুয়াল ফান্ডকে দেশের পুঁজিবাজারের একটি দুর্বলতা হিসেবে উল্লেখ করে সালমান এফ রহমান বলেন, এর কাঠামোও হাস্যকর। আইএফআইসি ব্যাংকের একটি মিউচুয়াল ফান্ড রয়েছে। কিন্তু এর কাঠামো এমনভাবে করা, যেখানে আইএফআইসি ব্যাংকের কিছু করার নেই। অথচ ফান্ডটির পারফরম্যান্স খারাপ হলে ব্যাংকেরও ব্র্যান্ডিং খারাপ হয়। এক্ষেত্রে কাঠামোগত সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে। এছাড়া আমাদের দেশে পুঁজিবাজারের বড় সমস্যা হলো প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর অভাব। এখানে ব্যক্তি বিনিয়োগকারী অনেক বেশি। অথচ ম্যাচিউরড, ইমার্জিং, ফ্রন্টিয়ার মার্কেটগুলোতে ৮০ শতাংশই প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী। সেখানে ব্যক্তি বিনিয়োগকারী নেই তা না। বরং ব্যক্তি বিনিয়োগকারীরা মিউচুয়াল ফান্ড ও ব্রোকারেজ হাইজের ডিসক্রিশনারি অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে বিনিয়োগ করে। এজন্য আমাদের পুঁজিবাজারকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে হলে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী বাড়াতে হবে।
তিনি বলেন, সম্প্রতি মাত্র ১ শতাংশ শেয়ার ইস্যু করে ওয়ালটন পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে এবং বাজার মূলধনের দিক দিয়ে দ্বিতীয় শীর্ষ কোম্পানিতে পরিণত হয়েছে। অথচ আগে আসা কোম্পানিগুলো এর চেয়ে অনেক বেশি শেয়ার ইস্যু করেছে। এখন অন্য যেকোনো কোম্পানিও একইভাবে ১ শতাংশ শেয়ার ইস্যু করে পুঁজিবাজারে আসতে চাইতে পারে। তাই এক্ষেত্রে নীতিগত ধারাবাহিকতা থাকা প্রয়োজন। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে বেশকিছু সমস্যা রয়ে গেছে। এজন্য প্রতিষ্ঠানটির মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মানসিকতা পরিবর্তন করা প্রয়োজন।
ওয়েবিনারে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিএসইসির কমিশনার অধ্যাপক ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিএসইসির কমিশনার অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান। আলোচনায় অংশ নেন মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এমসিসিআই) চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার নিহাদ কবির, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) চেয়ারম্যান ইউনুসুর রহমান, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম, সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান শেখ কবির হোসেন, বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংক আসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) প্রেসিডেন্ট ছায়েদুর রহমান, বাংলাদেশে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি সভাপতি আজম জে চৌধুরী, ডিএসই ব্রোকারস এসোসিয়েশনের সভাপতি শরিফ আনোয়ার হোসেন,ডিএসইর শেয়ারহোল্ডার পরিচালক মো. রকিবুর রহমান, পদ্মা ব্যাংকের চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিস সরাফাত, অ্যাসোসিয়েশন অব অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিজ অ্যান্ড মিউচুয়াল ফান্ডসের প্রেসিডেন্ট ড. হাসান ইমাম, ভেঞ্চার ক্যাপিটাল অ্যান্ড প্রাইভেট ইকুইটি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ভিসিপিইএবি) প্রেসিডেন্ট শামীম আহসান প্রমুখ।