পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার কুমড়িমাড়া গ্রামের সবজী চাষিদের কথা কেউ রাখেনি। উপজেলার নীলগঞ্জ নীলগঞ্জ সবজি চাষিরা নিজ উদ্যোগে তৈরি করেছে দীর্ঘ ও অভিনব এক ভাসমান সেতু।
দূর থেকে থেকে দেখা যায় পানির উপর ভাসমান নীল আর সাদা রঙের এই সেতু। বেশ মনোরম এ দৃশ্য, প্রথম দেখায় যে কেউ ভাবতে পারে, বিদেশি কোনো কোম্পানি স্বল্প খরচে তৈরি করে দিয়েছে এ সেতুটি।
কোন ধরণের প্রকৌশল বা কারিগরি জ্ঞান ছাড়াই স্বল্পশিক্ষিত কুমিড়মারা গ্রামের সাধারণ মানুষের প্রচেষ্টায় তৈরি হয়েছে সেতুটি। ভাসমান এ সেতু পাল্টে দিয়েছে এ জনপদের চিত্র। সেতুটি হওয়ার ফলে আশেপাশের ছয়টি গ্রামের মানুষের যোগাযোগে এসেছে আমূল পরিবর্তন। স্কুল, কলেজের শিক্ষার্থীসহ গ্রামের সকল শ্রেণি পেশার মানুষ এখন সহজেই পাখিমারা খাল পার হতে পারছে।
সম্পূর্ণ নিজেদের অর্থায়নে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার পাখিমারা খালে ১১৬ মিটার দৈর্ঘ্যের এ ভাসমান সেতুটি সবজি চাষিদের উদ্যোগে নির্মিত হয়েছে। নিজেরা চাঁদা তুলে প্লাস্টিকের ড্রামের ওপর কাঠের পাটাতন দিয়ে পাখিমারা খালের ওপর ভাসমান এই সেতুটি নির্মাণ করেন তারা। আগামী ৯ অক্টোবর সেতুটি চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে।
সেতুটি নির্মাণে প্রায় আড়াই লাখ টাকা ব্যয় হচ্ছে। এখনো কিছু কাজ বাকি আছে। গত ২৯ সেপ্টেম্বর সেতুটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ৭২টি প্লাস্টিকের ড্রামের ওপর পাটাতন করতে ২৫০ ঘনফুট কাঠ লেগেছে। আর প্লাস্টিকের তারকাটা ও রশি লেগেছে তিন মণ।
সবজির গ্রাম খ্যাত কুমিরমারা, মজিদপুর,বাইনতলা, ফরিদগঞ্জ, সলিমপুর, এলেমপুরের প্রায় সহস্রাধিক সবজি চাষিরা বছরব্যাপী উৎপাদিত মৌসুমি শাক-সবজি বিক্রি করতে কলাপাড়া উপজেলা শহরে যোগাযোগের একমাত্র পথ ছিল এই সেতু। পাখিমারা খালের ওপর কলাপাড়া উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে ৩০ লাখ টাকা ব্যয় প্রায় ১১৬ মিটার দীর্ঘ ওই আয়রন ব্রিজ নির্মাণ করে।
সেতু নির্মাণের উদ্যোক্তা আজিজ হাওলাদার, নুরুল আমীন গাজী, জাকির হোসেন বলেন, 'কোনো উপায় না পেয়ে নিজেদের সংগঠন 'আদর্শ কৃষক সমবায় সমিতি’র সদস্যরা জোট বেধে নিজেদের অর্থায়নে সেতুটি নির্মাণের উদ্যোগ নেই। কুমিরমারা, মজিদপুর গ্রামের অধিকাংশ মানুষ সহায়তা করেন। এ সেতুতে একই সঙ্গে ১০ জন মানুষ পারাপার হলেও কোনো ঝুঁকি নেই।’
এ ব্যাপারে নীলগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন মাহমুদ বলেন, ২৪ সেপ্টেম্বর পাখিমারা বাজারে স্থানীয় চাষিরা সভা করেছেন। পাখিমারা-কুমিরমারা খালের ওপর সেতু নির্মাণের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির মাধ্যমে চাষিরা চাঁদা তুলে সেতু নির্মাণ করেছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে সহযোগিতার কথা বলেছি।
সানবিডি/এনজে/৯:২৪/৭.১০.২০২০