চিকিৎসার নামে কসাইখানা খুলেছে কিছু ডাক্তার: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

প্রকাশ: ২০১৫-১২-১৯ ১২:৪১:২২


nasim-hm_87385
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। ফাইল ছবি

কিছু কিছু ডাক্তার চিকিৎসার নামে কসাইখানা খুলে বসে আছে। কিছু ভুয়া চিকিৎসক জনগণের সঙ্গে চিকিৎসার নামে প্রতারণা করছে বলে মন্তব্য করেছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম।

শুক্রবার রাজধানীর কৃষিবিদ ইনিস্টিটিউট মিলনায়তনে দুদিনব্যাপী ‘নবম সার্ক রেডিওলজিকাল সম্মেলনে’ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। ১৯৯৯ সালে রেডিওলজিকাল সোসাইটি অব সার্ক কান্ট্রিস (আরএসএসসি) গঠিত হয়। সার্কভুক্ত দেশগুলোকে নিয়ে গড়া এ সংগঠনটির প্রথম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় নেপালে। দীর্ঘ ১৭ বছরে সার্ক অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোতে এ সম্মেলন হলেও এবারই প্রথমবার অনুষ্ঠিত হল ঢাকায়।

অনুষ্ঠানে মন্ত্রী ভুয়া চিকিৎসকদের প্রতিরোধ করতে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) ও স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) নিকট সহায়তাও চেয়েছেন মন্ত্রী।

এসময় মন্ত্রী উপস্থিত চিকিৎকদের উদ্দেশে বলেন, ‘চিকিৎসা ক্ষেত্রে রেডিওলজি অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। যারা এর সঙ্গে জড়িত আপনার সময় নিয়ে জেনে, শিখে, অভিজ্ঞতা অর্জন করে দক্ষ চিকিৎসক হবেন। তাড়াহুড়ো নয়, আপনারা ভালো করে শিখবেন। তারপর দেশ সেবার আত্মনিয়োগ করবেন।’

তিনি আরো বলেন, ‘বিভিন্ন সময়ে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে নানা রকম সমালোচনা হয়েছে এবং হচ্ছে। স্বাস্থ্যখাতের ব্যর্থতা আমি স্বীকার করছি। তবে এ সরকারের আমলে স্বাস্থ্য খাতে উল্লেখযোগ্য অর্জন হয়েছে।’

অর্জনের বিষয় উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘এখন আর কাউকে হৃদরোগের চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে হয় না। বর্তমান সরকারের আমলে দক্ষ চিকিৎসক ও উন্নত যন্ত্রপাতির সমন্বয়ে রাজধানীতে বসেই দেশের মানুষ এ সেবা গ্রহণ করতে পারছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘শিশু মৃত্যুর হার কমছে। প্রসূতি মায়ের মৃত্যুর হারও কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। দেশ আজ পোলিও মুক্ত। যক্ষা রোগ নিরাময়ে সরকার কাজ করে যাচ্ছে।’

মন্ত্রী বলেন, ‘সংবিধান পরিবর্তন করে ৬ হাজার প্রশিক্ষিত ডাক্তরকে তাদের জেলা, উপজেলা ও থানা পর্যায়ে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। যাতে প্রত্যন্ত অঞ্চলে স্বাস্থ্য সেবা পোঁছে দেয়া সম্ভব হয়।’

তিনি বলেন, ‘সরকার নার্সদেরকে ২য় শ্রেণির মর্যাদা দিয়েছে। ১০ হাজার নার্সকে সারা দেশের বিভিন্ন স্বাস্থ্যখাতে নিয়োগ দেয়ার প্রক্রিয়া অব্যহত আছে।’

বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় প্রফেসর ডা. ইকবাল আর্সনাল বলেন, ‘ব্রিটিশ ভারত সময় থেকে রেডিওলজিকাল চিকিৎসার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ঝুঁকি ভাতা প্রদান করা হতো। কিন্তু বর্তমানে অদৃশ্য কারণে এ ভাতা বন্ধ করা আছে।’ অবিলম্বে এ ভাতা পুনরায় চালু করার অহব্বান জানিয়েছেন ডা. ইকবাল আর্সনাল।

তিনি আরো বলেন, ‘এর আগে দুএকটি দেশে একাধিক বা ততোধিক বার এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সংস্থাটির প্রতি দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, দুই একটি দেশে নয় প্রত্যক বছর যাতে একটি করে দেশে এ অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।’

রেডিওলজিকাল বাস্তবিক বিদ্যা। এক্ষেত্রে হাতে কলমে প্রশিক্ষণ অনেক জরুরি। হাতে-কলমে প্রশিক্ষণের উপর এর ফলাফল নির্ভর করে। বলেছেন আয়োজক কমিটির সম্পাদক, ঢাকা মেডিকেল কলেজের রেডিওলজি বিভাগের প্রফেসর ডা. মো. মিজানুর রহমান।

তিনি বাংলমেইলকে বলেন, ‘রেডিওলজির বিষয় ভিত্তিক উৎকর্ষতায় আমরা এখনো অনেক পিছিয়ে। এ বিষয়ে আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত অনেক দুর এগিয়ে আছে।’

তিনি বলেন, সরকারিভাবে বিদেশি গিয়ে প্রশিক্ষণ নেয়ার সুযোগ এখন নেই। যারা যাচ্ছেন তারা ব্যক্তি উদ্যোগে এসব বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। এক্ষত্রে পারস্পরিক সৌহার্দপূর্ণ হওয়া খুবই জরুরি। নিজেদের মধ্যে তথ্য অভিজ্ঞতা ও প্রযুক্তিগত সহায়তা আদান-প্রদানের জন্যই আমাদের এ আয়োজন।’

প্রথমবারের মতো এ আয়োজন করতে পেরে উচ্ছ্বসিত ডা. মিজানুর রহমান বলেন, ‘অনেক পরে হলেও আমরা এ আয়োজন করতে পেরেছি। আশা করি রেডিওলজি বিভাগে পারস্পরিক সম্প্রীতি বজায় রখে আমরা অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারবো।’

দুদিনব্যাপী অনুষ্ঠানে রেডিওলজি সংশ্লিষ্ট যন্ত্রপাতি যেমন সিআর সিস্টেম, ডিআর এক্সরে সিস্টেম, এমআরআই মেশিনসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতিও প্রদর্শিত হচ্ছে।

এ বিষয়ে ফুজিফিল্ম মেডিকেল ডিভিশনের সেলস ও মার্কেটিং ম্যানেজার মো. আবদুল আলিম বাংলামেইলকে বলেন, ‘প্রদর্শনীতে ফুজি সিআর সিস্টেম, ফুজি ডিআর এক্সরে সিস্টেম, হিটাচি এমআরআই, হিটাচি সিটি স্কেন, শিমানজু এক্সরে ও ফিলিপসের সিটি জিএমআরআই সহ বেশ কিছু রেডিওলজির যন্ত্রপাতির প্রদর্শনী চলছে।’

বাংলাদেশ সোসাইটি অব রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিংয়ের (বিএসআরআই) আয়োজনে অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন স্বাধীনতা চিকৎসক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর এম এ আজিজ, নেপাল রেডিওলজি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শিপ বাহাদুর, সাধারণ সম্পাদক উমেশ প্রসাদ খান্না, বিএসআরআই’র সহ-সভাপতি আবু সালেহ মহিউদ্দিনসহ অন্যান্যরা।