ঘর সাজান, পরিবেশ বাঁচান
প্রকাশ: ২০১৫-১২-১৯ ১৩:৫২:৪৭
পরিবেশকে দূষণমুক্ত রাখতে সকলেরই সচেতনতার প্রয়োজন৷ একথা আমরা প্রায়ই শুনে থাকি৷ কিন্ত্ত তা আমাদের ইন্টিরিয়রে কীভাবে প্রয়োগ করা যায়? আলোচনা করলেন ইন্টিরিয়র ডিজাইনার ঊর্বশী বসু৷
বাড়ি বা ফ্ল্যাটে নতুন লুক আনতে গেলে সাধারণভাবেই আমরা পুরনো বা ভাঙা কাঠ, কাঁচ কিংবা কাগজ ফেলে দিয়ে থাকি৷ কিন্ত্ত এইসব জিনিস ফেলে না দিয়ে তা পুনরায় ব্যবহার করে আপনার বাড়ি বা ফ্ল্যাট সাজাতে হবে৷ প্রয়োজন একটু সময় এবং সৃজনশীলতার৷ ভাঙা চেয়ার বা টেবিল থেকে বানিয়ে ফেলুন লিভিং রুমে সুন্দর কিছু শেলফ৷ পাশাপাশি পুরোনো বড়ো আকারের টেবিল, ঘরের আয়তন অনুযায়ী কাটিয়ে তাঁর ওপর ল্যামিনেট তুলে দিয়ে কাঁচ লাগিয়ে ফেলতে পারেন৷
এছাড়াও বাড়িতে যদি কোনও পোষ্য থাকে, তাহলে পুরনো চেয়ার দিয়ে আপনি তাদের প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস বানাতে পারেন৷ দৈনন্দিনের পড়া খবরের কাগজটা জড়ো করে ফেলে দেবেন না৷ কাগজ দিয়ে ভিন্ন রকমের হস্তশিল্প তৈরি করা যায়৷ তাছাড়া হ্যাণ্ডমেড পেপারের ল্যাম্পশেড বা টেবিল ল্যাম্প তো খুবই প্রচলিত৷ মডিউলার কিচেনে নন পেট্রোলিয়াম বেসড রেজিন (একধরণের রাসায়ণিক পদার্থ), ফাইবার এবং কাগজ দিয়ে রান্নাঘরের ক্যাবিনেট তৈরি করাতে পারেন৷ এবার আসি কাঁচের কথায়৷
অনেক সময় ভাঙা কাঁচ বা গ্লাস কিংবা বাটি আমরা ফেলে দিয়ে থাকি৷ সেই ভাঙা কাঁচগুলোকে ফেলে না দিয়ে বিভিন্ন ডেকরেশনের কাজে লাগিয়ে ফেলুন৷ ফ্লাওয়ার ভাসের ওপর ভাঙা কাচের টুকরো রঙ করে নানা ধরণের ডিজাইন করতে পারেন৷ এছাড়াও অনেক বোতল(কাচ বা প্লাস্টিক) এক জায়গায় করে তার ওপর ডিজাইন করে ভিতরে আলো দিয়ে আপনার ফলস সিলিং – এ লাগাতে পারেন৷
রান্নাঘর
ইকো ফ্রেন্ডলি করতে গেলে সবদিকে নজর দেওয়ার প্রয়োজন আছে৷ রান্নাঘরে এমন কিছিু জিনিস রাখুন যাতে তা একাধারে আপনার বিদ্যুত্ সাশ্রয় করবে, অন্যদিকে সৌন্দর্য বজায় রাখবে৷ একালে মডিউলার কিচেনের প্রচলনই বেশি৷ বিশেষ করে রান্নাঘরে যাতে ধোঁয়া কম পরিমাণে হয় তার চেষ্টা করুন৷ তার জন্য ইনডাকশন কুকিং, আভেন ব্যবহার করুন৷ এছাড়া টোস্টার, মাইক্রো-আভেন বা ফ্রিজ তো রয়েছেই৷
এইসব ইলেকট্রনিক জিনিস কেনার সময় একটু দেখে নিন, তা যেন অধিক স্টারযুক্ত (যেমন ফাইভ স্টার বা থ্রি স্টার) হয়৷ তাহলে তা অনেকটা বিদ্যুত্ সাশ্রয় হবে৷ এছাড়াও রান্নাঘরে ফসেট যেন উন্নতমানের হয়৷ কোনও জায়গা পাইপ লাইন যেন লিক না থাকে৷ যথেষ্ট পরিমাণ জামাকাপড় বা বাসন না থাকলে দিসওয়াশার বা ওয়াশিং মেশিন ব্যবহার করবেন না অথবা করলেও হাফ লোড মোডে করুন৷
বাথরুম
প্রথমেই দেখে নিন, বাথরুমে যাতে প্রয়োজনের বেশি পানির অপচয় না হয়৷ কারণ পানির এই মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার আমাদের সবাইকে এক গভীর বিপদের দিকে নিয়ে যাচ্ছে৷ পানির বেহিসেবি ব্যবহারে মাটির নীচে থাকা পানির ভাণ্ডার ধীরে ধীরে ফুরিয়ে যাচ্ছে৷ তাই নতুন বাথরুম হোক বা পুরনো৷ বদলে ফেলতে হবে কিছু জিনিস৷
উন্নতমানের কনসিল পাইপ ব্যবহার করলে আপনার ফ্ল্যাট বা বাড়ির পানি অনেক সাশ্রয় হবে৷ পুরনো কলের বদলে পানি যাতে স্বচ্ছ হয় এবং একভাবে পড়ে ও চারদিকে ছড়িয়ে না যায় তাই অ্যারোটার লাগাতে হবে৷ এছাড়াও পুরনো শাওয়ার বদলে রেন শাওয়ার লাগিয়ে ফেলুন৷ আর সম্ভব হলে নতুন বাথরুমের বেসিনে সেনসর লাগিয়ে নিন৷ কমোডে ডুয়াল ফ্ল্যাশ ব্যবহার করুন৷
আলো
একালে হরেক রকমের এলইডি আলো পাওয়া যায়৷ যা দামেও সহজলভ্য, দীর্ঘস্থায়ী এবং বিদ্যুত্ সাশ্রয়কারী৷ এগুলো বিভিন্ন ওয়াট এবং রঙের হয়ে থাকে৷ তবে খেয়াল রাখবেন এক জায়গায় অতিরিক্ত আলো চোখের পক্ষে ক্ষতিকর৷ তাই উচিত্ কম ওয়াটের বেশি সংখ্যক আলো ব্যবহার করা৷ ইলেকট্রিসিটি বোর্ডের ধারণ ক্ষমতা অনুযায়ী একাধিক কানেকশন করে রাখুন ৷ তবে খেয়াল রাখবেন ইলেকট্রিকের সরঞ্জামগুলো যেন উন্নতমানের হয়৷
মাথায় রাখুন
সফট ফার্নিশিং – এর ক্ষেত্রে যতটা সম্ভব ন্যাচারাল ফেবরিক বা সূতীর কাপড় ব্যবহার করুন৷
উন্নতমানের ইউপিভিসি বা আলুমিনিয়ামের জানলা তৈরি করান৷ কারণ কাঠের জানলা স্বাভাবিকবাকেই একটু খরচসাপেক্ষ৷ জানলায় টাফেন গ্লাস লাগিয়ে নিন৷
এছাড়া ইনডোর প্ল্যান্ট তো রয়েছেই৷ আপনার ব্যরান্দায়, ছাদে বা বাগানে কিছু গাছ রাখতে পারলে তো কথাই নেই৷ আপনি যদি বাড়ি বা বাঙলো থাকে তাহলে বিদ্যুতে্র সাশ্রয়ের জন্যে সৌরশক্তি ব্যবহারের কথা ভাবতে পারেন৷ বাড়ি বা ফ্ল্যাটের কোনও জিনিস কেনার আগে খেয়াল রাখবেন, যাতে তা ইকো ফ্রেন্ডলি হয়৷
সানবিডি/ঢাকা/এইসময়/এসএস