নিস্ক্রিয় বন্ড মার্কেটকে চাঙ্গা করার জন্য কাজ করছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটি এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। পূর্বসূরিদের হাত ধরে পুঁজিবাজারকে এগিয়ে নিয়ে যেত চায় নতুন কমিশন। দিতে চান নতুন নতুন পণ্য। ইক্যুইটি মার্কেটের বাহিরে গিয়ে কাজ করছেন বন্ড, ডেরিভেটিভস ও বে-মেয়াদি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের লেনদেন নিয়ে।
কমিশন সূত্র মতে,প্রাণহীন বন্ড মার্কটে প্রাণ দিতে ইত্যোমধ্যে ১২ টি কোম্পানিকে ৫ হাজার ২৬০ কোটি টাকার বন্ড ইস্যু করার অনুমোদন দিয়েছে বিএসইসি। শর্ত দেওয়া হয়েছে তালিকাভুক্ত করে লেনদেন চালু করার।
বাজার সংশ্লিষ্ট বলেন, দীর্ঘ ৪৫ বছর পার হলেও গড়ে উঠেনি আধুনিক পুঁজিবাজার। ফলে সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে বাজারে আসনি নতুন নতুন প্রোডাক্ট। এখনো রয়ে গেছে ইক্যুইটি নির্ভর বাজার। ফলে ঝুঁকি থাকে বিনিয়োগকারীদের। ঝুঁকিপূর্ণ বাজারকে একটি নিরাপদ বিনিয়োগের জায়গা করার জন্য কাজ করছে কমিশন।
তাদের মতে, নতুন কিছু পণ্য বাজারে আসলে, আসবে নতুন বিনিয়োগকারী। নির্ধারিত আয়ের পণ্য থাকলে বাজারে সক্রিয় হবে সিনিয়র সিটিজেনরা। পুঁজিবাজার থেকে অবদান বাড়বে জাতীয় অর্থনীতিতে। পুঁজিবাজারে যুক্ত হবে নতুন মাত্রা।
বিএসইসির সূত্র মতে, নতুন কমিশনের হাত ধরে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে সাথে বিদেশী কোম্পানিগুলোও বন্ড ইস্যু করার জন্য এগিয়ে এসেছে। ১২টি বন্ডের মধ্যে একটি বিদেশী কোম্পানিও রয়েছে।
নতুন কমিশনের অনুমোদন দেওয়া সব চেয়ে বড় বন্ড হলো বহুজাতিক কোম্পানি স্ট্যান্ডার্ড চাটার্ড ব্যাংকের। ব্যাংকটি ৮৫০ কোটি টাকার বন্ড ইস্যু করতে চায়। ইতোমধ্যে কমিশন ব্যাংকটিকে বন্ড ইস্যু করার অনুমোদন দিয়েছে।
স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, ন্যাশনাল ক্রেডিট এন্ড কমার্স ব্যাংক, আল আরাফা ইসলামি ব্যাংক, সাউথ ইস্ট ব্যাংক এবং ডাচ-বাংলা ব্যাংক লিমিটেডকে ৫০০ কোটি টাকা করে বন্ড ইস্যু করার অনুমোদন দিয়েছে বিএসইসি।
চারশ কোটি টাকা করে বন্ড ইস্যুর অনুমোদন পেয়েছে যমুনা ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক এবং মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেড। এছাড়া ২১০ কোটি টাকার বন্ড ইস্যু করার অনুমতি পেয়েছে প্রাণ এগ্রো লিমিটেড। এবং ১০০ কোটি টাকার বন্ড ইস্যু করবে আমরা নেটওয়ার্ক লিমিটেড।
বন্ডের বিষয়ে এএফসি ক্যাপিটালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সানবিডিকে বলেন, বর্তমান কমিশন নিস্ক্রিয় বন্ড মার্কেটকে সক্রিয় করার কাজ করছে। বন্ড মার্কেট সক্রিয় হলে বিনিয়োগের নতুন জায়গা পাবে বিনিয়োগকারীরা। এতে করে বাজারে তারল্য প্রবাহ বাড়বে।
এ বিষয়ে শেলটেক ব্রোকারেজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মেসবাহ উদ্দিন খান (মিঠু) সান বিডিকে বলেন, আমাদের পুঁজিবাজারে শুধুমাত্র ইক্যুইটি প্রোডাক্ট লেনদেন হয়। দুই একটি বন্ড নামকায়াস্থে তালিকাভুক্ত হয়েছে; কিন্তু জনপ্রিয় হয়ে উঠেনি। দীর্ঘ ৪৫ বছর পার হয়ে গেলেও গড়ে উঠেনি আধুনিক পুঁজিবাজার। পুঁজিবাজারে সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে আসনি নতুন নতুন প্রোডাক্ট। বিএসইসির এই উদ্যোগ পুঁজিবাজার যুক্ত হবে নতুন মাত্রা।
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন,অনেক কিছুর সাথে আমরা বন্ড নিয়েও কাজ করছি। বিভিন্ন ধরনের বন্ড কীভাবে বাজারে আনা যায় তার চেষ্টা করছি। ইক্যুইটি নির্ভর বাজারে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য বন্ড হবে বিকল্প পণ্য। নির্ভয়ে যাতে বিনিয়োগকারীরা বাজারে আসতে পারেন সেই ব্যবস্থা করতে চাই। পুঁজিবাজারের মাধ্যমে বন্ড দিয়ে জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখতে চাই।
বন্ড মার্কেটকে শক্তিশালী করতে ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট কথা বলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেন, দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নে একটি শক্তিশালী বন্ড মার্কেট বিকাশের জন্য আমরা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। এর আলোকে বন্ড লেনদেন মূল্যের উপর উৎসে কর কর্তনের পরিবর্তে বিএসইসি লেনদেনে নির্ধারিত কমিশনের উপর উৎসে কর কর্তন করা হবে। এছাড়া বন্ডের সুদ ও বাট্টার উপর উৎসে কর কর্তনের বিধান বাতিল করে সুদ ও বাট্টা পরিশোধকালে উৎসে কর কর্তন করা হয়।
পুঁজিবাজারের সব খবর পেতে জয়েন করুন