ফ্যাশন ইতিহাস বদলে দিয়েছে যে জুতা

প্রকাশ: ২০১৫-১২-১৯ ১৮:৩৮:২২


fashionফ্যাশন ইতিহাসে দশ জোড়া জুতা আজো জায়গা করে আছে। নানান কারণেই এই জুতাগুলো গুরুত্বপূর্ণ  বিশেষ করে জুতার ডিজাইনার এবং গবেষকদের কাছে। আসুন জেনে নেই সেই দশ জোড়া জুতার ইতিহাস।

১। গোল্ড স্যান্ডেল (খ্রিষ্টপূর্ব ৩০ – ৩০০)
এই স্যান্ডেল আমাদের মনে করিয়ে দেয় – স্যান্ডেল ছিল এক প্রকার সামাজিক সম্মানের প্রতীক। সোনালী প্যাপিরাস এই স্যান্ডেল রোমান এবং মিশরীয়রা পরতো করত। খাঁটি সোনার পাত দিয়ে তৈরি এই স্যান্ডেলটি ছিল বেশ সরু। তবে এতটাই সরু ছিল যে মানুষের আসল পায়ের পাতার আকৃতির সাথে এর সামঞ্জস্য ছিল না। সেজন্য এটা মাঝে মাঝে পায়ের পাতায় প্রচণ্ড ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াত।

২। গোল্ড মোজারি (১৭৯০ – ১৮২০)
এই পাদুকা খুব সম্ভব ভারতের হায়দ্রাবাদে তৈরি হত। এটা পুরানো মিশরীয় স্টাইলে তৈরি এবং এতে খাঁটি স্বর্ণ ব্যবহার করা হত। সাধারণত চামড়ার উপর সম্পূর্ণ অংশ স্বর্ণ দিয়ে কাজ করা থাকত। ‘নাজিম অব হায়দ্রাবাদ’ গোষ্ঠী এই পাদুকা এক জরা ক্রয় করেছিলেন। তবে তাদের কাউকে এটি কখনও পরতে দেখা যায় নি।

৩। রেড ব্যালেট সুজ (১৯৪৮)
এই পাদুকা ছিল এক প্রকার ফ্যান্টাসির প্রতীক। এটি ছিল চকচকে রেশমি কাপর এবং চামড়া দিয়ে তৈরি। ১৯৪৮ সালে মাইকেল পাওয়েল এবং এমারিক প্রেসবারগারের ‌’দ্য রেড সুজ’ ফিল্মে মইরা শেরার এটি পরেছিলেন। ওই ফিল্মটি ছিল ক্রিশ্চিয়ান অ্যান্ডারসনের একটি ফেইরি টেল।

৪। পুলাইন (১৩৭৫ – ১৪০০)
মধ্যযুগে ইউরোপীয় ফ্যাশনিস্টরা হাইহিল নিয়ে কোন তোয়াক্কা করতেন না। তারা ফ্ল্যাট এবং সামনের দিকে সরু এক সু তৈরি করেছিলেন যা চামড়া দিয়ে তৈরি ছিল। পরবর্তীতে এর থেকে নানা রকম মডেল বের হয়েছে কিন্তু সেই সময়ে এর নাম ছিল পুলারিন (ফরাসি – পলিশ)। এর আকৃতি বজায় রাখার জন্য সামনের দিকটা চোখা ও একটু উঁচু ছিল।
 
৫। বাথ ক্লগস্ (উনবিংশ শতাব্দী)
১৬’শ শতাব্দীতে পুরুষ ও স্ত্রী উভয়ই হাম্মান (ইউরোপীয় এক প্রকার গোসলখানা) কিংবা স্পেশাল কোন গোসলখানায়  বাথ ক্লগস পরে যেত। দিনে একবার হাম্মানে যাওয়া ছিল নিত্যনৈমিত্তিক কাজ এবং এই বাথ ক্লগসের একটি বিশেষ উপকারিতা ছিল – এটি অনেক উঁচু ছিল যাতে করে এটা গরম, ময়লা এবং পিচ্ছিল মেঝে থেকে রক্ষা করত। উনিশের দশকে মিশরীয়রা বাথ ক্লগ ডিজাইনে এক প্রকার পাদুকা তৈরি করে যার উচ্চতা ছিল ২৮.৫ সেন্টিমিটার (১১.২ ইঞ্চি)। এতে কাঠের তৈরি দু’টি লম্বা পাত ব্যবহার করা হয়েছিলো।

৬। সুপার এলিভেটেড গিলি সুজ (১৯৯৩)
ব্রিটিশ ডিজাইনার ভিভিনে ওয়েস্টউড চামড়া ও সিল্কের কাপড় দিয়ে নীল রঙের এই হাইহিল তৈরি করেন। এর উচ্চতা ছিল ২১ সেন্টিমিটার। ১৯৯৩ সালে সুপারমডেল নাওমি ক্যাম্পবেল প্যারিস ফ্যাশন উইকে এটি ক্যাটওয়াকের সময় পরিধান করেন।

৭। ব্রোগিউড অক্সফোর্ডস্ (১৯৮৯)
যেকোন ‘সেক্স এন্ড দ্য সিটি’ ফ্যানই হয়তো বিশ্বাস করবে ম্যানোলো ব্লাহনিকের হতে-কুচার খুবই দামি। একই ভাবে হাতে বানানো যে কোন বেসপোক অক্সফোর্ড সু এর দাম ৩,০০০ পাউন্ড পর্যন্ত হতে পারে। ১৭৮৬ সালে ব্রিটেনের শার্ট ও সুমেকার কোম্পানি ‘নিউ এন্ড লিংউড’ এক প্রকার শক্ত জুতা তৈরি করে যা ব্রোগিউড অক্সফোর্ডস্ নামে পরিচিত। এতে রাশিয়ান গরুর চামড়া ব্যাবহার করা হয় এবং ভিতরে ডেনমার্কের ভেড়ার লোম ব্যবহৃত হয়। ১০০ বছরেরও বেশি পুরানো এ চামড়ার জুতা এখনও ব্যবহার করার যোগ্য কারণ এর বাইরে তৈলাক্ত চামড়া ব্যবহার হয়েছে। এই এক জোড়া চামড়ার জুতা খুবই ব্যবহুল কারণ এতে ২০০ জনেরও বেশি স্পেশালিষ্টের হাত হয়ে এসেছে।

৮। ফারি অ্যাঙ্কেল বুটস (১৯৪৩)
১৯৪৩ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে লন্ডনে এটি তৈরি হয়। এটি এক প্রকার হাইহিল এবং এর সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হচ্ছে এতে ব্যবহার করা হয় অসলেটের (মধ্য অ্যামেরিকায় এক প্রকার চিতাবাঘের মত প্রাণী) চামড়া!

৯। পেয়ার অব গীতা (১৮৮০ – ১৯০০)
পুরুষদের আকর্ষণের জন্য জুতাও ছিল অন্যতম এক হাতিয়ার। এই জুতাটি সাধারণত জাপানের পতিতরা পরিধান করত। এর স্টাইল ছিল অনেকটা ক্লগসের মতো। ক্লগসের চেয়ে এতে বেশ চিকন দুটি পাত ব্যবহার করা হয়। এর উচ্চতা ছিল ২০ সেন্টিমিটার।

১০। ইমেল্ডা মারকস’স বেলট্রামি স্যান্ডেলস (১৯৮৭ – ৯২)
কোন ফুট এক্সিবিউশন নেই যেখানে ইমেল্ডা মারকসের কালেকশন বাদ রাখা হয়। ইমেল্ডা মারকস ছিলেন ফিলিপিনের সাবেক প্রেসিডেন্ট ফারডিন্যান্ড মারকসের স্ত্রী যিনি ছিলেন প্রচণ্ড সপাহলিক। তিনি ১৯২৯ সালে জন্মগ্রহণ করেন এবং ধারণা করা হয় তার কালেকশনে প্রায় ৩,০০০ জোড়া পাদুকা ছিল। এর মধ্যে ছিল অন্যতম স্লিং-ব্যাক হাইহিল। এতে রাইন পাথর ব্যবহার করা হয়েছিলো আর সাথে ছিল কাল রঙের সূচিকর্ম। ইটালিয়ান ডিজাইনার বেলট্রামির করা এই পাদুকা জোড়া বর্তমানে টরন্টোর বাটা সু মিউজিয়ামে সংরক্ষিত আছে।