সম্প্রতি সরকারি চাকরিজীবীদের বহুল প্রত্যাশিত অষ্টম পে-স্কেলের গেজেট প্রকাশিত হয়েছে । এর মাধ্যমে তাদের দীর্ঘদিনের প্রাণের চাওয়া পূরণ হল। তাহলে বেসরকারি চাকরিজীবীরাই বা পড়ে থাকবেন কেন ? এবার তাদের জন্যও থাকছে দারুণ সুখবর !
অবশেষে সরকার প্রায় চূড়ান্ত করে এনেছে বেসরকারি খাতে পেনশন চালুর সকল কার্যক্রম । এর জন্য বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ‘প্রাইভেট পেনশন রেকর্ড কম্পানি’ ও ‘প্রাইভেট পেনশন ট্রাস্ট’ গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। ২০১৭-১৮ অর্থবছর থেকে পরীক্ষামূলকভাবে সংগঠিত খাতের জন্য এ পেনশন চালুর পর ২০২১ সাল থেকে তা পরিপূর্ণভাবে শুরু হবে।
এ প্রসঙ্গে অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব মাহবুব আহমেদ জানান, ‘সরকার সামাজিক সুরক্ষা নীতি প্রণয়ন করছে, যা মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত হয়েছে। এর জন্য সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় সরকারি চাকরিজীবীদের বাইরে থাকা সব জনগোষ্ঠীর জন্য সোশ্যাল পেনশন স্কিম চালু করা হবে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ বেসরকারি খাতের পেনশন ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করবে।’
এর আগে বেসরকারি খাতে পেনশন চালু করা নিয়ে গত ৬ নভেম্বর অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কাছে একটি সারসংক্ষেপ পাঠান ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব ড. এম আসলাম আলম। সেখানে এ বিষয়ে খুব দ্রুতভাবে সম্ভাব্যতা যাচাই করার কথা বলা হয়। সামাজিক বীমা ও বেসরকারি খাতে পেনশন স্কিম ডেভেলপমেন্টের কাজ বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে প্রায় ১০ কোটি ডলার ব্যয়ে চলমান ‘বাংলাদেশ ইনস্যুরেন্স অ্যান্ড প্রাইভেট পেনশন মার্কেট ডেভেলপমেন্ট’ প্রকল্পের আওতায় চলছে। তা ছাড়া ন্যাশনাল সোশ্যাল সিকিউরিটি স্কিম প্রণয়ন এবং প্রাইভেট পেনশন ব্যবস্থা প্রবর্তনে প্রয়োজনীয় সমীক্ষা, কাঠামো স্থির করা ও পরীক্ষামূলক ব্যবস্থা চালুসহ আরও বিভিন্ন কার্যক্রম এই প্রকল্পের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হবে।
বর্তমানে সরকার তিন ধরনের বীমা ব্যবস্থা চালু করতে যাচ্ছে সরকারি চাকরিজীবীদের জন্যে। জাতীয় বেতন ও চাকরি কমিশনের সুপারিশ, সশস্ত্র বাহিনী বেতন কমিটি এবং এ-সংক্রান্ত সচিব কমিটির সুপারিশে সরকারি চাকুরেদের জন্য জীবন বীমা, স্বাস্থ্য বীমা ও দুর্ঘটনা বীমা প্রবর্তনের এ উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এসব বীমার প্রিমিয়াম সরকার বহন করবে। সাধারণ বীমা করপোরেশন, জীবন বীমা করপোরেশন ও বেসরকারি বীমা কম্পানিগুলো সরকারি কর্মচারীদের বীমা করার বিষয়ে আলাদা প্রস্তাব পাঠিয়েছে। মন্ত্রণালয় এখন সেগুলো পর্যালোচনা করছে।
এদিকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সুত্রে জানা গেছে, পেনশন পেতে হলে কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীকে একটি প্রতিষ্ঠানে কমপক্ষে ১০ বছর চাকরি করতে হবে। এই হিসাবে, ২০২১ সাল থেকে এ ব্যবস্থা চালু হলে বেসরকারি খাতের চাকরিজীবীরা ২০৩২ সালে পেনশন পেতে পারেন।
এ ছাড়া সরকারের তরফ থেকে ‘প্রাইভেট পেনশন ট্রাস্ট’ গঠনের যে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে, সেখানে যেকোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারী অথবা সাধারণ যেকোনো নাগরিক প্রতি মাসে নিজ উদ্যোগে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ জমা করতে পারবেন। অর্থ জমাকারী ব্যক্তিরা নির্দিষ্ট সময় পর ট্রাস্টের কাছ থেকে প্রতি মাসে নির্দিষ্ট হারে পেনশন পাবেন।
এদিকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের নির্ভরযোগ্য আরো একটি সুত্রে জানা গেছে , ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান, মাল্টিন্যাশনাল কম্পানি, টেলিকম খাতসহ সংগঠিত বেসরকারি খাতের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রথমদিকে পেনশনের আওতায় আসবেন। মূলত যেসব প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে দেওয়া হয়, হিসাব-নিকাশে প্রযুক্তির ব্যবহার রয়েছে—এসব খাতে পরীক্ষামূলকভাবে ২০১৮ সাল থেকে পেনশন চালু হবে।
এ ক্ষেত্রে সরকার ভর্তুকি দেবে। কোন প্রক্রিয়ায়, কী পরিমাণ অর্থ পেনশন দেওয়া যায়, সে বিষয়ে এখন পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকাসহ বিভিন্ন দেশে বেসরকারি পেনশন ব্যবস্থা চালু রয়েছে। তাদের ব্যবস্থাপনা পর্যালোচনা করা হচ্ছে। অস্ট্রেলিয়ায় মূল বেতনের ৯.৫ থেকে ১২ শতাংশ পর্যন্ত পেনশন তহবিলে রাখেন মালিকরা। মাসে ৪৫০ ডলারের ঊর্ধ্বে বেতনভোগী কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও তাঁদের বেতনের ৯.৫ শতাংশ ওই তহবিলে জমা দেন। তবে বেতন ৪৫০ ডলারের কম হলে তাঁকে অর্থ জমা দিতে হয় না।
বাংলাদেশে সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য সাধারণ ভবিষ্যত তহবিল বা প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্র্যাচুইটির পাশাপাশি পেনশনও চালু রয়েছে, যার পুরোটাই সরকার দেয়। আর বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রভিডেন্ট ফান্ড ও গ্র্যাচুইটি রয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় বলছে, গ্র্যাচুইটি বহাল রেখে কিভাবে পেনশন চালু করা যায়, সেটাই এখন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে।
এর আগে সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য তিনটি বীমা ও বেসরকারি খাতের জন্য পেনশন ব্যবস্থা চালুর উপায় বের করতে অর্থসচিব মাহবুব আহমেদ এবং ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব ড. এম আসলাম আলমকে লিখিত নির্দেশনা দেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
সানবিডি/ঢাকা/রাআ