১৯৫১ সালে ব্রিটিশ নাগরিক এরিক মোরলে বিশ্বসুন্দরী নির্বাচন করার জন্য মিস ওয়ার্ল্ড প্রতিযোগিতা চালু করলে আমেরিকানরা বসে থাকেনি। পরের বছর ১৯৫২ সালে ক্যালিফোর্নিয়া ভিত্তিক কাপড়ের কোম্পানি প্যাসিফিক মিলস মিস ইউনিভার্স অরগানাইজেশন নামের একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন, যাদের কাজ ছিল বিশ্বসুন্দরী নির্বাচন করা। বর্তমানে এই সংগঠনটির মালিক হলো উইলিয়াম মরিস এনডেভার (ডব্লিউএমই) ও আইএমজি কোম্পানি।
১৯৫২ সাল থেকে নিয়মিতভাবে আয়োজন করা হচ্ছে ‘মিস ইউনিভার্স’। যে নারী বিশ্বসুন্দরীদের এই প্রতিযোগিতায় প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন হন, তিনি হলেন ফিনল্যান্ডের আরমি কুসেলা।
মিস ইউনিভার্সে নারীদের কেবল সৌন্দর্যই দেখা হয় না। তাদের শারীরিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি ব্যক্তিত্ব, বুদ্ধিমত্তা, সাহস, চতুরতা, মানসিকতা ও সাধারণ জ্ঞানও মূল্যায়ন করা হয়। আর মিস ইউনিভার্স নির্বাচিত হওয়ার পর নির্বাচিতকে একটি কোম্পানির হয়ে কাজ করার জন্য চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করতে হয়। চুক্তিপত্র অনুযায়ী নির্ধারিত সময় পর্যন্ত কাজ করতে হয়। চুক্তি ভঙ্গ করলে মিস ইউনিভার্স মুকুটটি কেড়ে নেওয়া হয়। যেমন, ২০০২ সালে রাশিয়ার আক্সানা সানজুয়ানার মুকুটটি কেড়ে নেওয়া হয় চুক্তি অনুযায়ী কাজ না করায়।মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বিতর্ক উঠেছে। এমনকি মূল অনুষ্ঠানের দিনও কিছু কিছু ঘটনা ঘটেছে। এই যেমন মিস ইউনিভার্স ২০১৫ নাম ঘোষণার সময় উপস্থাপক ভুল করে প্রথম রানারআপের নাম বিজয়ী হিসেবে ঘোষণা করে ফেলেন। পরে অবশ্য ক্ষমা চেয়ে আসল বিজয়ীর নাম ঘোষণা করেন।
মিস ইউনিভার্স নিয়ে এমন কয়েকটি আলোচিত ঘটনার খবর রাইজিংবিডির পাঠকদের জন্য তুলে দেওয়া হলো…
১. ১৯৫২ সালে একেবারে শুরুর দিকে মিস ইউনিভার্স বিজয়ী হন ফিনল্যান্ডের আরমি কুসেলা। মাত্র ১৭ বছর বয়সে এই খেতাব জিতে নেন তিনি। কিন্তু মাত্র ১০ মাস সময় পাড় হওয়ার পর মুকুট ফিরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। কারণ মিস ইউনিভার্স জেতার কয়েক দিন পরই বিয়ে করেন তিনি। যে কারণে মিস ইউনিভার্স হয়ে দীর্ঘ দিন রাজত্ব করতে পারেননি। তিনিই সুন্দরের প্রথম রানী যিনি স্বেচ্ছায় নিজের স্থান ছেড়ে দেন। সম্ভবত মিস ইউনিভার্সের প্রটোকলের ব্যাপারে তার উদাসীনতা ছিল।
২. ১৯৬৯ সালে অনুষ্ঠিত মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হন অস্ট্রিয়ার ইভা ভন রোয়েবার স্টেয়ার। কিন্তু প্রতিযোগিতার মাঝখানে কিছু লোক তার ব্যাপারে নাখোশ ছিলেন। কারণ প্রতিযোগিতার নির্দিষ্ট প্রশ্নোত্তর পর্বে বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ ঐতিহাসিক ব্যক্তির নামের জায়গায় তিনি মাও সে তুংয়ের নাম লিখেছিলেন। যদিও তিনি আগেই সেমিফাইনালে পৌঁছে গিয়েছিলেন। এমনকি শেষ পর্যন্ত তিনিই মিস ইউনিভার্স বিজয়ী হন।
৩. ১৯৭৩ সালে মিস ইউনিভার্স হন ফিলিপাইনের মার্গারিটা মোরান। তিনি প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হওয়ার পর কিছু ভুল করেন। যদিও সেগুলো ভয়াবহ পর্যায়ের ছিল না। যেমন বিজয়ী হয়ে তিনি ঘোষণা করেন, রিচার্ড নিক্সন হলেন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষ। মনে রাখা দরকার, সময়টা ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারির মাঝামাঝি সময় ছিল। পরে মোরানকে একটি ধন্যবাদপত্র দেন নিক্সন।
৪. ১৯৭৪ সালের মিস ইউনিভার্সের আলোচিত বিষয় কোনো প্রতিযোগী নন। আয়োজক দেশের তৎকালীন ফার্স্ট লেডি। নিজেকে প্রাক্তন সুন্দরের রানী দাবি করা ইমেলা মারকস ফিলিপাইনকে খুব করে শোআপ করতে চেয়েছিলেন। এজন্য ওই বছরের আয়োজক দেশ হিসেবে ফিলিপাইনের নাম ঘোষণার পরই তিনি ১০ হাজার আসন বিশিষ্ট একটি থিয়েটার হল নির্মাণের কথা বলেন। তিন মাসের মধ্যে মিলিয়ন ডলার খরচ করে ওই হল নির্মাণ করতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তখন ফিলিপাইনের নাগরিকদেরই সাহায্যের দরকার ছিল। এটা নিয়ে বেশ হইচই পড়ে যায়।
৫. ১৯৭৪ সালে আরো একটি বিতর্কিত ঘটনা ঘটে ম্যানিলা মিস ইউনিভার্স অনুষ্ঠানে। বলা যায়, ওই বছর প্রতিযোগীরা বিক্ষোভ করে। মিস ইউনিভার্স বিজয়ী স্পেনের আমপারা মুনোজ মিস ফিনিল্যান্ডকে টেনে মুকুট যাচ্ছেতাইভাবে দিয়ে দিতে চান। পরে রানার আপ মিস ওয়েলসকে মুকুট নিতে বলা হয়। কিন্তু তত দিনে মিস ওয়ার্ল্ডের জন্য মিস ওয়েলসের নাম ঘোষণা করা হয়। যদিও শেষ পর্যন্ত তিনি মিস ওয়ার্ল্ডও পাননি। কারণ কর্তৃপক্ষ খতিয়ে দেখল মিস ওয়েলস মা হয়েছেন। শেষে আমপারাকেই মুকুট পরানো হয়। কারণ কর্তৃপক্ষ দ্বিতীয় রানার আপা মিস ফিনল্যান্ডের ব্যাপারে ভাবেননি।
৬. ১৯৮৭ সালে সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতাও অন্য একটি কারণে আলোচিত হয়েছিল। সেবার অনুষ্ঠানের আয়োজক ও অ্যানিমাল অ্যাক্টিভিস্ট বব বারকার প্রতিযোগিতায় বিজয়ী ও রানার-আপকে পশমের পোশাক পরতে এবং বন্যপ্রাণীর নিষ্ঠুরতার সঙ্গে সংযুক্ত সব পুরস্কার বর্জনের অনুরোধ জানিয়ে আলোচিত হন। কিন্তু কথা না রাখায় ২০ বছরের অভিজ্ঞ এই আয়োজক প্রতিযোগিতা থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করেন।
৭. অনেকের নিশ্চয় মনে আছে ১৯৯৬ সালের মিস ইউনিভার্স ভেনিজুয়েলার আলিসিয়া ম্যাচাডোর কথা। যাকে কর্তৃপক্ষ সাবধান করেছিল যে, তিনি মোটা হয়ে যাচ্ছেন এবং তার বদলে রানার-আপের নাম ঘোষণা করবেন। ম্যাচাডো স্বাস্থ্য কমিয়েছিলেন, তবে তা তাকে খুব যে সাহায্য করেছে, তা বলা যায় না। কারণ তাকে কর্তৃপক্ষের এক ব্যক্তি খাদক মেশিন বলেছিলেন।
৮. ১৯৯৯ সালে মিস ইউনিভার্স বিজয়ী গর্ভবতী ছিলেন। প্রতিযোগিতার এক পর্যায়ে তিনি ডিসকোয়ালিফাইড হলেন। কর্তৃপক্ষ এটাকে সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করে এই ভেবে যে, বাকি প্রতিযোগীদের এই ব্যাপারে প্রশ্ন করবেন। যদি একজন মিস ইউনিভার্স গর্ভবতী হয়, তবে তাকে কি তার খেতাব ধরে রাখতে দেওয়া উচিত? সকল প্রতিযোগী এই প্রশ্নে ধাক্কা খেল। কিন্তু মিস বতসোয়ানা উত্তর তৈরি করলেন এবং বললেন, মিস ইউনিভার্স ব্যাপারটা দেখার সুন্দরের ব্যাপার। গর্ভবতী হলে তা থাকা যায় না। মিস বতসোয়ানা এটিও বললেন যে, তিনি শুধু মুকুট নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে চান না, বরং নিজের নারীত্বের উদযাপনও করতে চান। তারপর তিনি মুকুট জিতে গেল।
৯. ১৯৭৯ সালে অস্ট্রেলিয়ার পার্থে মিস ইউনিভার্স অনুষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল ভয়াবহ দুর্ঘটনার কারণে। কারণ অনুষ্ঠানের সময় স্টেজ ধসে ২০ প্রতিযোগী ও সাংবাদিক আহত হয়েছিলেন।
সানবিডি/ঢাকা/রাইজিংবিডি/এসএস