আমার বয়স তখন ১৩ কি ১৪। নবীনগর লঞ্চ ঘাটে তিতাস (বুড়ি) নদীর তীরে মানুষের জটলা দেখে এগিয়ে গেলাম। দেখলাম দুই পাগলী নদীর পানিতে একে অপরকে চুবাচ্ছে। অপেক্ষাকৃত দুর্বল পাগলী যখন সবলটিকে চুবিয়ে পানির নিচে নিয়ে যায়, তখন ফুটবল খেলার মতো উচ্ছ্বস ছড়িয়ে পড়ে দূরের সেই মনো বাবুর ঘাটলা (ঘাট) অব্দি। এভাবে ভীর আর উচ্ছ্বাস পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে। এই উচ্ছ্বাস আরও বেড়ে যায়, যখন একটি পাগলি পানির নিচ থেকে কোন রকমে উঠেই ফিক করে হেঁসে উঠে, তখন। এভাবে ঘন্টার কাঁটা পেড়িয়ে যায়। কিন্ত কি এক আশ্চর্য ঘটনায় প্রতিটি মানুষ ভয়ে হিম হয়ে গেল। কেন এই পিন পতন নিরবতা?
সহজ উত্তর ছিল, সেই পাগলীরা ছিল স্বাধীন। আর তীরের উচ্ছ্বসিত জনতা ছিল পরাধীন। অর্থাৎ তাদের বিচার বুদ্ধি ছিল। মুহুর্তে চার-পাঁচজন দর্শক পানিতে নেমে তাদের জোরপূর্বক উপরে উঠিয়ে নিয়ে এলেন। এতে তাদের জীবন রক্ষা পেয়েছিল। আগুনের তাপ, শুকনো কাপড়, খাদ্য দিয়ে তাদের প্রাণ বাঁচানোর পর, এক পাগলি বলে উঠলো, "ও আস্ত একটা পাগল! আর পানিতে চুবালে পাগল ভাল হয়, সেজন্য চুবাচ্ছিলাম"।
অপরজন অনেকটা ফিসফিস করেই বলল, "ওর মাথা ঠিক নাই, ও একটা বেন্ডা পাগল! ওর কথা বিশ্বাস করবেন না!" বলেই হেসে ফেলল। তার হাসিতে জনতা আবার হৈ হৈ করে উঠল।
উত্তরঃ নিচের প্রশ্নটির উত্তর যদি হ্যা হয়, তবে এর পরিনতি কি হবে তা বুঝাতে।
প্রশ্ন প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাঁক্র উন্মাদ হতে পারে! কিন্ত ফ্রান্সের সব জনগণ কি উন্মাদ হয়ে গেছে?
তারা কি জানে না, বাক স্বাধীনতার মানে যা খুশি তা বলা বা করা নয়! তারা কি জানে না, ধর্ম নিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা বা অপরের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করা নয়!!
আমি ফ্রান্সের জনগণ ও বিশ্ব বিবেকের কাছে প্রশ্ন রাখতে চাই, ধরুন, আপনাকে নিয়ে কেউ ব্যাঙ্গ চিত্র তৈরি করল, হয়তো আপনি তা মেনে নেবেন। কিন্ত আপনার মেয়ে বা মাকে নিয়ে উলঙ্গ চিত্র কি আপনি মেনে নেবেন?
না। কখ্খনোই মেনে নেবেন না।
অথচ বিশ্বের কোটি কোটি তৌহিদী জনতা যারা নিজের মা-বোন, ভাই-ছেলে, এমন কি নিজের জীবনের চেয়েও যাঁকে বেশি ভালবাসে, সেই প্রিয় রসুল (সাঃ) এর অপমান কিভাবে তাঁরা মেনে নেবে?
ইসলাম শান্তির ধর্ম। মক্কা বিজয়ের পর প্রিয় নবী প্রতিশোধ নেননি। বরং তাদের বুকে টেনে নিয়েছিলেন। কুরআন মুসলিম জাতিকে শিক্ষা দিয়েছে, "লা কুম দীনু কুম ওলিয়া দীন"। তাই তারা বিশ্বের শান্তি বজায় রাখতে ফ্রান্সের মত অতি ব্যক্তি স্বাধীন দেশ বা মতের বেহায়াপনার (সমকামীতা কিংবা নগ্ন হয়ে রেস্তরায় যাওয়া, যেখানে রেস্তুরার পরিবেশকসহ সবাই নগ্ন) দিকে আঙুল তুলছে না হয়তো।তাই বলে আমাদের প্রিয় রসুল (সাঃ) কে নিয়ে বার বার ব্যঙ্গচিত্র তৈরী করে বেয়াদবি করা? কিভাবে একজন মুসলিম মেনে নেবে?
যখন কুয়েত থেকে লিবিয়া, সিরিয়া থেকে গাজা উপত্যকা, বাংলাদেশ থেকে আফগানিস্তান, মালয়েশিয়া থেকে তুরস্ক ফুসে উঠে; বিক্ষোভে ফেটে পড়ে; তখন মুসলিম বিশ্ব হয়ে যায় উগ্র পন্থি কিংবা উগ্রবাদী!!!
২০১৫ সালে এরূপ কার্টুন প্রকাশের পর ফরাসি ব্যঙ্গ-পত্রিকা শার্লির বিরুদ্ধে মুসলিম বিশ্ব বিক্ষোভে ফেটে পরলেও আজকের মত সেদিনও ফ্রান্সের কিছুই যাই আসেনি! তাই এবদোর ১২ জন এক হামলায় মারা যেতে দেখেছে বিশ্ব।যদি ফ্রান্স অপরের ধর্মীয় অনুভূতির প্রতি নূন্যতম সম্মানও দেখাত, তবে স্কুল শিক্ষক স্যামুয়েল পাটি এভাবে খুন হতো না।
এখানে ফ্রান্সের জনগণকে বলতে চাই, দয়া করে বিষয়টি হালকা করে নেবেন না। এক পাগলের সাথে সবাই পাগল হবেন না। যেখানে হৃদয়ের রক্ত ক্ষরণ বা আবেক অনুভূতির বিষয়, সেখানে কতদিন একজন মুসলিম যুবককে আটকে রাখবেন?
এই ঘটনার পর ফ্রান্সের উন্মাদ প্রেসিডেন্ট বলেছে "এটা ফ্রান্সের বাক-স্বাধীনতার, এটা আমাদের ঐতিহ্য, তাই আমরা কার্টুন ছাড়ব না"।
বেশ ভাল। কার্টুন ছাড়তে কে বলেছে আপনাকে? কোটি কোটি কার্টুন তৈরী করুন। তবে মুসলিমদের জিহাদ করতে হয়, কিংবা তাদের অন্তরে রক্ত ক্ষরণ হয়,
এ ধরনের একটিও না। সাবধান! তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান যখন বলেন: "ইসলাম এবং মুসলিমদের নিয়ে ম্যাক্রঁর মতো ব্যক্তিদের কী সমস্যা?ম্যাঁক্রর পাগলের চিকিৎসা প্রয়োজন"।
তখন বিশ্ব বিবেক মি: এরদোয়ান কিংবা পাকিস্তানের ইমরান খানের বক্তব্যে উগ্রবাদ খুঁজে বেড়াতে ব্যস্ত থাকেন, তাদের সমালোচনায় স্বচ্চার হয়ে উঠেন! অথচ ম্যাঁক্রর পাগলামি তাদের চোখে পড়ে না!!!
যখন সারা বিশ্বের মুসলিম রসুল (সাঃ) এর বার বার অপমানের প্রতিশোধ নিতে, তাদের হৃদয়ের বেদনা কিছুটা কমাতে ফ্রান্সের পন্য বর্জন করতে থাকে, তখন তাদের কিছুটা টনক নড়ে (বিবিসি সংবাদ)। তখন বিশ্ব আবর দেশগুলোকে ফ্রান্সের পন্য বর্জন না করতে অনুরোধ করে। এ আচরণ হাস্যকর নয় কি?
প্রেসিডেন্ট ম্যাঁক্র বলেছিল, "ইসলাম সংকটে আছে"! আপনাদের কাছে পাল্টা প্রশ্ন রেখে গেলাম, কে সঙ্কটে আছে? ইসলাম নাকি ফ্রান্স?
গত রবিবার, উন্মাদ ম্যাক্রঁ এক টুইটে ফরাসি মূল্যবোধের অহংকার নিয়ে বলেছিলেন, "আমরা কখনোই আমাদের মূল্যবোধ বা বাক-স্বাধীনতারকে বিসর্জন দেবো না।" আমরা পন্য বর্জন করে ফ্রান্সকে সাফ বার্তা দিতে চাই যে, আপনাদের মূল্যবোধ নিয়ে আপনারা থাকুন, তবে ফ্রান্সের লাখ লাখ মুসলিমদের কোণঠাসা করতে কঠোর আইন প্রণয়ন করবেন না এবং বাক স্বাধীনতার নামে বিশ্বের শত কোটি তৌহিদী জনতার হৃদয়কে বার বার ক্ষত-বিক্ষত করবেন না। খামোশ হয়ে যান।
বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে বিশ্বে রোল মডেল। ইসলাম অন্যের ধর্ম বা অনুভূতির প্রতি সবসময়ই শ্রদ্ধা পোষন করে। কোন প্রকার উগ্র পন্থায় না গিয়ে আমরা শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ করতেই পারি। তবে সবচেয়ে উৎকৃষ্ট পন্থা পন্য বর্জন করা। যাকে বলে,অর্থনৈতিক মাইর।
লেখকঃ জি এম কিবরিয়া।
প্রধান সমন্বয়ক
ক্লিন গ্রীন বাংলাদেশ