এ বিষয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাবেক সভাপতি শাকিল রিজভী বলেন, “এটি পুঁজিবাজারের জন্য একটি ইতিবাচক উদ্যোগ। এতে কিছু ব্যাংকের শেয়ার কেনার সক্ষমতা বাড়বে। পাশাপাশি বিক্রির চাপ কমবে। আর সাধারণ বিনিয়োগকারীদেরও আস্থা বাড়বে।”
নতুন বছরের শুরুর দিন থেকে এই নিয়ম কার্যকর হবে বলে সার্কুলারে জানানো হয়েছে। এতদিন ব্যাংকের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ হিসাব করার ক্ষেত্রে সহযোগী কোম্পানিকে দেওয়া মূলধনও বিনিয়োগ হিসাবে ধরা হত।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, দেশের ৪৮টি ব্যাংকের সাবসিডিয়ারি (সহযোগী প্রতিষ্ঠান) রয়েছে। ব্যাংকগুলো এসব কোম্পানিতে ৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। নতুন নির্দেশনার ফলে ১ জানুয়ারির পর পুঁজিবাজারে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ হিসাব করার ক্ষেত্রে এই ৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা বাদ পড়বে।
ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী, কোন ব্যাংক তার মূলধনের (পরিশোধিত মূলধন, স্ট্যাটিউটরি রিজার্ভ, রিটেইনড আর্নিং ও শেয়ার প্রিমিয়ামের যোগফল) সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ বিনিয়োগ করতে পারে। ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে সার্কুলার জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক এই বিনিয়োগ সীমা বেঁধে দিয়েছিল।
২০১০ সালে বেশ কিছু ব্যাংক পুঁজিবাজারে ব্যাপক পরিমাণে বিনিয়োগের প্রেক্ষিতে ব্যাংকিং খাতে ঝুঁকির কথা বিবেচনা করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ওই সীমা বেঁধে দেয়। একইসঙ্গে যেসব ব্যাংকের বিনিয়োগ তাদের মূলধনের ২৫ শতাংশের বেশি আছে তাদের তা কমিয়ে সীমার মধ্যে নিয়ে আসার জন্য ২০১৬ সালের ২১ জুলাই পর্যন্ত সময়ও বেঁধে দেওয়া হয়েছিল।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হিসাব মতে, নভেম্বর শেষে ব্যাংকগুলোর যে পরিমাণ বিনিয়োগ রয়েছে পুঁজিবাজারে তা তাদের মূলধনের ৩৪ শতাংশ, যা টাকার অঙ্কে ২৩ হাজার কোটি টাকা। তবে এরই মধ্যে কোনো কোনো ব্যাংকের বিনিয়োগ ২৫ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে, যেগুলোর সংখ্যা ২৬টি। আর ২২টি ব্যাংক রয়েছে যাদের বিনিয়োগ মোট মূলধনের ২৫ শতাংশের বেশি। সাবসিডিয়ারি কোম্পানিকে দেওয়া মূলধন বাবদ ৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা হিসাব থেকে বাদ দিলে ব্যাংকিং খাতের এই বিনিয়োগের হার নেমে আসবে ২৫ দশমিক ৮৭ শতাংশে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এই সিদ্ধান্তের ফলে কোনো কোনো ব্যাংক নতুন করে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করার সুযোগ পাবে। আবার অনেক ব্যাংক যাদের শেয়ার বিক্রি করে বিনিয়োগ কমিয়ে আনার দরকার রয়েছে তাদের বিক্রি করার প্রয়োজন নাও হতে পারে। আবার যাদের দরকার রয়েছে তাদের তার চেয়েও কম বিক্রি করলেও চলবে।
সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আতিউর রহমান পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ সীমা শিথিল করার আভাস দিয়েছিলেন। এর আগে ব্যাংকের বিনিয়োগ বেঁধে দেওয়া সীমার মধ্যে নামিয়ে আনতে সময় বাড়ানো হবে বলে জানিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।