‘বিচারের রায় বাংলায় লেখার উদ্যোগ গ্রহণের অনুরোধ প্রধানমন্ত্রীর’
নিজস্ব প্রতিবেদক আপডেট: ২০২০-১১-০৪ ১৪:২৮:৫৫
আইনমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতিকে উদ্যোগে গ্রহণের অনুরোধ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বিচারের রায় বাংলায় লেখার ব্যবস্থা নিতে হবে। এটা আমি চাই, আপনারা একটু ব্যবস্থা নেন। কারণ এর অনেক কথা, অনেক শব্দ, অনেক টার্ম, যেগুলো আমাদের সাধারণভাবে ব্যবহার হয় না। কারণ বিচারের ফলে কি রায়টা পেল, সে নিজে দেখতে পারবে, জানতে পারবে, বুঝতে পারবে। আমি মনে করি এটা একান্তভাবে দরকার। এব্যাপারে যদি কোনো ফান্ড লাগে, সেটাও ব্যবস্থা করবো। কিন্তু আমি চাই, এটা যেন হয়।’
গতকাল বুধবার সকালে নবনির্মিত ঢাকা চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবন, ঢাকা-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ঢাকা চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবনে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক গণভবন প্রান্তে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন তার বাসভবন থেকে যুক্ত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী আইন পেশার সংশ্লিষ্ট সকলের সুযোগ-সুবিধা গ্রহণের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে বলেন, আমি সবসময় মনে করি, যারা এই কাজগুলি করবেন বা বিচার দেবেন বা বিচারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তারা যেন একটু ভালোভাবে ভালো পরিবেশে বসবাস করতে পারেন, চলতে পারেন। তার জন্য যেটা করা দরকার আমরা সেটা ইতোমধ্যে করেছি।
বিচারকদের নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির দিকও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বিচারকদের সংখ্যা আরও বেশি বৃদ্ধি করার প্রয়োজন উল্লেখ করে বিচারক নিয়োগের সাথে সাথে আরও বেশি প্রশিক্ষণ দেওয়ার প্রয়োজন আছে বলে জানান।
তিনি বলেন, আমাদের যে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। কাজেই সেই আনুপাতিক হারে এই দিকটার দিকে দৃষ্টি দেয়া দরকার।
এছাড়া প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি আরেকটি অনুরোধ করবো, আমাদের মামলার রায়গুলি কিন্তু ইংরেজিতে দেওয়া হয়। ফলে অনেক সময় আমাদের দেশে এখন হয়তো একটু লেখাপড়ার সংখ্যা বাড়ছে। তারপরও অনেকে সেই রায়টা বুঝতে পারে না। তিনি তার সহায়ক যে থাকেন তিনি যা বুঝান তাই বুঝতে বাধ্য হয়। রায় যদি কেউ বাংলায় না লিখতে পারেন, তাতে আপত্তি নাই কিন্তু সাথে সাথে সেটা বাংলায় ট্রান্সলেশন করে এটা যেন প্রচার হয় সে ব্যবস্থাটা করে দিতে হবে।
‘আমি খুব প্র্যাকটিক্যাল চিন্তা করি, দীর্ঘদিন ধরে ইংরেজিতে লিখতে লিখতে অনেকে অভ্যস্ত হয়ে গেছেন, এখন আমি যদি ওটাকে খুব চাপ দেই বাংলায় সব লিখে ফেলতে হবে তাহলেই কিন্তু এটা থেমে যেতে পারে। কাজেই সেখানে বলবো, আর এখন ট্রান্সলেশন করা এমন কোনো কঠিন কাজ না। আর অনেকে প্রফেশনাল ট্রান্সলেটরও থাকে এবং তাদেরকে আপনারা কিছু ট্রেনিং করিয়ে নিতে পারেন।’
‘আর মাননীয় প্রধান বিচারপতিকে আমি অনুরোধ করবো, আপনারা একটু ব্যবস্থা নেন। কারণ এটা জুডিশিয়াল ব্যাপার। কারণ এর অনেক কথা, অনেক শব্দ, অনেক টার্ম, যেগুলো আমাদের সাধারণভাবে ব্যবহার হয় না। কিন্তু সেটা সহজভাবে যেন পারা যায়, কাজেই এই ট্রান্সলেশন করার জন্য কিছু লোককে যদি আপনারা ট্রেনিং দিয়ে দেন এবং তাদের কাজেই থাকবে যেটাই লেখা হোক, সাথে সাথে ট্রান্সলেশন হয়ে যাবে এবং সেটাই প্রচার হবে, সঙ্গে সঙ্গে সাধারণ মানুষগুলি জানতে পারবে।’
‘আইনমন্ত্রী এখানে আছেন, আর এব্যাপারে যদি কোন ফান্ড লাগে, সেটাও আমি ব্যবস্থা করবো। কিন্তু আমি চাই, এটা যেন হয়। যাতে ট্রান্সলেশনের সাথে সাথে প্রচার হয়, আর এখন তো অনলাইনে চলে যাবে। আরও সুবিধা মানুষ জানতে পারবে।
ইতোমধ্যে বেশ কতকগুলি মামলা; যা দেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকারক। যেমন-১৫ আগস্টের হত্যকাণ্ডের বিচার, ৩ নভেম্বর হত্যাকাণ্ডের বিচার, ২১ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের এই ধরনের বিচারগুলি হয়ে গেছে। এখন কিন্তু আরও অনেক বিচার বাকি রয়ে গেছে। সেগুলি আস্তে আস্তে কিন্তু শেষ করতে হবে, সম্পন্ন করতে হবে।’
বিডিআর বিদ্রোহে হত্যাকাণ্ডের ঘটনার মামলা, দশ ট্রাক অস্ত্র মামলা, নারায়ণগঞ্জে সাত খুনের মামলা হলি আর্টিজান হামলার মামলাসহ চাঞ্চল্যকর মামলাগুলি দ্রুততার সঙ্গে বিচারকি কার্যক্রম শেষ করার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘আপনারা জানেন যে, আমরা যখন কেরানীগঞ্জে জেলখানার নতুন বিল্ডিং করলাম, সেই বিল্ডিং করার সময় সেখানে কিন্তু আলাদাভাবে যাতে একটা ভার্চুয়াল কোর্ট বসতে পারে, তার আদালত ভবন আমরা করে দিয়েছিলাম। ওইসব আসামিদের আর টানাহেচড়া করতে হবে না। ওখানেই তাদের বসানো যাবে। একেবারে ঢাকা থেকেই বসে তাদের বিচারটা করতে পারবেন। সেই ব্যবস্থাটা করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমিকভাবে আমি মনে করি প্রতিটি কারাগারের সাথেই এর ধরনের একটা সুব্যবস্থা থাকা দরকার। যারা একেবারে বড় ধরনের ক্রিমিনাল; তাদেরকে নেওয়া-আনা না করে ওখানে বসেই যেন তার বিচার কার্য সম্পন্ন করা যায়, সেখানেই যেন হাজির করা যায়।
সেই ব্যবস্থাটাও আমরা করে দিতে চাই। ভার্চুয়াল কোর্টের মাধ্যমেই কিন্তু এই অল্প দিনের মধ্যে অনেকগুলি কেস নিষ্পত্তি করা হয়েছে। এটা আমি মনে খুবি কার্যকর হয়ে গেছে, সেজন্য সবাইকে আমি ধন্যবাদ জানাই। বিশেষ করে প্রধান বিচারপতিকে। কারণ তিনি যদি রাজি না হতেন এটা হয়ত কখনো করা সম্ভব হতো না ‘
তিনি আরও বলে, ‘আমি যখন বলেছিলাম তখনি কিন্তু সাথে সাথে তিনি রাজি হয়ে গেলেন এবং আমরা মহামান্য রাষ্ট্রপতির সাথে এ ব্যাপারটা আলোচনা করলাম এবং আমাদের সকলে মিলে আলোচনা করে করেছি। আমাদের আইনজীবীদের জন্যও সুবিধা হয়ে গেছে। কাজেই আমরা এটাই চাই।’
সানাবিড/নাজমুল/০২:২৮/০৪.১১.২০২০