‘জঙ্গিবাদ ঠেকাতে সব রাষ্ট্রকে এক হয়ে লড়তে হবে’
প্রকাশ: ২০১৫-১০-০১ ১৩:১৮:৫৭
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদকে বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে তার মোকাবিলায় সব রাষ্ট্রকে এক হয়ে লড়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
বিশ্বের নানা প্রান্তে জঙ্গিদের হামলা, বাংলাদেশে ইতালির এক নাগরিক খুন এবং হত্যার দায় স্বীকার করে জঙ্গি দল আইএসের কথিত বার্তার প্রেক্ষাপটে বুধবার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ভাষণে এই আহ্বান জানান তিনি।
বুধবার বাংলাদেশ সময় রাত ১০টা ৫৫ মিনিটে নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে বাংলায় ভাষণ দেন শেখ হাসিনা। অধিবেশনে একাদশ বক্তা হিসেবে ভাষণ দিতে দাঁড়ান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস ও তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী আহমেত দুভাতগ্লুর পর তার পালা আসে। প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ জাতিসংঘের ওয়েব টিভিতে সরাসরি দেখা যায়।
ভাষণের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুধু জাতিসংঘ নয়, সামগ্রিক অর্থে সারা বিশ্বের জন্য এ বছরটি আমূল পরিবর্তনের। এ বছর জাতিসংঘের ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত হচ্ছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বিশ্ব সংস্থার গৌরবময় ইতিহাস তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ‘আমাদের নিয়তি একইসূত্রে গাঁথা’ আমাদের পূর্বসূরিদের এই বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে যে বিশ্ব সংস্থার গোড়াপত্তন, প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তা এবং উন্নয়ন ও মানবাধিকারের অগ্রগতির জন্য জাতিসংঘ গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়ে আসছে। সত্তর বছর ধরে জাতিসংঘ মানব সম্প্রদায়ের জন্য আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক হয়ে আছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিশ্বে মানবসভ্যতার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে আজ আমরা সবচেয়ে বড় দুটি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছি, যার প্রথমটি হচ্ছে সন্ত্রাসবাদ ও সহিংস জঙ্গিবাদ। বিশ্বশান্তি ও উন্নয়নের পথে এটি প্রধান অন্তরায়।
তিনি বলেন, ‘সন্ত্রাসীদের কোনো ধর্ম নেই। সন্ত্রাসবাদ এবং জঙ্গিবাদ একটি বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সব রাষ্ট্রকে একযোগে কাজ করতে হবে।’ নিজের সন্ত্রাস ও সহিংস জঙ্গিবাদের শিকার হওয়ার কথা উল্লেখ করে ১৯৭৫ সালের ১৫ অাগস্টের ট্র্যাজেডি এবং ২০০৪ সালের ২১ অাগস্টের গ্রেনেড হামলার কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার জঙ্গিবাদ, মৌলবাদের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি নিয়ে কাজ করছে বলেও জানান শেখ হাসিনা। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং বিচারহীনতার সংস্কৃতির অবসান ঘটাতে তার সরকারের অঙ্গীকারের কথা তুলে ধরে এ ক্ষেত্রে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচারের কথাও বলেন।
বিশ্বে উন্নয়ন ও শান্তির ক্ষেত্রে দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জ হিসেবে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনজনিত চ্যালেঞ্জ কার্যকরভাবে মোকাবিলা করা সম্ভব না হলে আমাদের উন্নয়ন প্রচেষ্টা কোনোভাবেই এগিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে না।’
শেখ হাসিনা আরো বলেন, ‘আমাদের সামনে সামান্যই সুযোগ অবশিষ্ট আছে। এ বিশ্বকে নিরাপদ, আরো সবুজ এবং আরও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিতে আমাদের অবশ্যই সফলকাম হতে হবে।’
পরবর্তী প্রজন্মের জন্য নিরাপদ ভবিষ্যৎ গড়তে নৈতিক সাহস ও রাজনৈতিক প্রজ্ঞাকে কাজে লাগাতে বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আসুন, আমরা সবাই মিলে আমাদের সামষ্টিক অঙ্গীকার অনুযায়ী এমন একটি শান্তিপূর্ণ, নিরাপদ উন্নত বিশ্ব গড়ে তুলি, যেখানে দারিদ্র্য এবং অসমতা, সন্ত্রাস ও সহিংস জঙ্গিবাদ, জলবায়ু পরিবর্তন ও সংঘাত এবং বিদ্বেষ ও বৈষম্য থাকবে না।
আসুন, আমরা আমাদের নৈতিক সাহস এবং রাজনৈতিক প্রজ্ঞাকে কাজে লাগিয়ে আমাদের সন্তান এবং পরবর্তী প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর ও নিরাপদ জীবন ও উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ রেখে যাওয়ার সর্বাত্মক উদ্যোগ গ্রহণ করি।’
শেখ হাসিনা বলেন, টেকসই উন্নয়নের জন্য এই বছরটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি আদ্দিস আবাবায় অনুষ্ঠিত উন্নয়নের জন্য অর্থায়ন শীর্ষক শীর্ষ সম্মেলন এবং নিউইয়র্কে সদ্যসমাপ্ত ২০১৫-পরবর্তী উন্নয়ন শীর্ষ সম্মেলনের কথা স্মরণ করে বলেন, গোটা বিশ্বের জনগণের জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনার ক্ষেত্রে নতুন আশার সঞ্চার করেছে এই উদ্যোগ।
জাতিসংঘের ৭০তম অধিবেশনে যোগ দিতে গত ২৩ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্ক যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে সাধারণ অধিবেশনের মূল পর্ব শুরু হয় ২৮ সেপ্টেম্বর। ওই দিন থেকেই বিশ্বনেতারা এর মূল বিতর্কে অংশ নিচ্ছেন।
সানবিডি/ঢাকা/রাআ