পুলিশের গোপন প্রতিবেদন : ৩৫ শতাংশ কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ
প্রকাশ: ২০১৫-১২-২৪ ১০:২০:৪৩
পৌরসভা নির্বাচনে ২৩৩টি পৌরসভার ৩৫ শতাংশ ভোট কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। অর্থাৎ ৩ হাজার ৪০৩টি কেন্দ্রের মধ্যে ১ হাজার ১৮৪টি ভোটকেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ। আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পুলিশের করা এক গোপন প্রতিবেদনে এমন তথ্যই উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পৌরসভা নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকা পৌরসভার কেন্দ্রগুলোতে দলীয় প্রার্থীদের জয়ী করাতে এবং নির্বাচনকে বিতর্কিত করতে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলে চেষ্টা করছেন বিএনপি, জামায়াত ও শিবির নেতাকর্মীরা। এর ফলে নির্বাচনে ব্যাপক নাশকতা ও গোলাযোগ করতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে পুলিশ।
এছাড়া স্থানীয় আওয়ামী লীগে আন্তঃকোন্দল ও বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় তারাও বিভিন্ন ধরনের নাশকতা সৃষ্টি করতে পারে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এজন্যে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে পুলিশের পক্ষে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে বলেও জানা গেছে।
বুধবার পুলিশের প্রতিবেদনের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনকে অবহিত করেছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় বলে ইসির একটি বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নির্বাচন অনুষ্ঠিতব্য ২৩৩ পৌরসভায় মোট ৩ হাজার ৪০৩টি কেন্দ্রের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রের সংখ্যা ১ হাজার ১৮৪টি। যা মোট কেন্দ্রের ৩৪ দশমিক ৮০ শতাংশ।
এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছে খুলনা বিভাগ। যার ৪৭১টি কেন্দ্রের মধ্যে ১৯৫টি কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ। এরপরেই ঝুঁকি বিবেচনায় দ্বিতীয় অবস্থানে আছে রংপুর বিভাগ। যার ৩০৪টি কেন্দ্রের মধ্যে ১১৮টি ঝুঁকিপূর্ণ। তৃতীয় অবস্থানে বরিশাল বিভাগ। যার ১৬৭টি কেন্দ্রের মধ্যে ৬৩টি ঝুঁকিপূর্ণ।
এছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগের ৪৮০টি কেন্দ্রের মধ্যে ১৬৯টি কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ। ঢাকা বিভাগের ৯৯১টি কেন্দ্রের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ ৩৪৮টি। রাজশাহী বিভাগের ৮০১টি কেন্দ্রের মধ্যে ২৪৬টি কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ এবং সবচেয়ে কম ঝুঁকিতে থাকা সিলেট বিভাগের ১৮৯টি কেন্দ্রের মধ্যে ৪৫টি কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
কেন্দ্রগুলোতে ঝুঁকির বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব মো. মোখলেসুর রহমান বলেন, ‘কমিশনের কাছে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র বলতে কিছু নেই। এগুলোকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে আখ্যায়িত করে থাকি। এগুলোতে আমরা বাড়তি নিরাপত্তা প্রদানের চেষ্টা করবো। এজন্য গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে ৮ জন অস্ত্রধারীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ২০ জন সদস্য মোতায়েন থাকবে।’
এছাড়া পৌর নির্বাচনে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা জন্য র্যাব, পুলিশের পাশাপাশি বিজিবি ও কোস্টগার্ড মোতায়েন করা হবে। এছাড়া জুডিশিয়াল ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করবেন বলেও জানান তিনি।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, কয়েকটি বিষয় বিবেচনায় রেখে নির্বাচনে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র নির্ধারণ করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে, কেন্দ্রের আশপাশে প্রভাবশালী কোনো ব্যক্তির বসতবাড়ি ও প্রভাবাধীন এলাকা হলে, কোন দল বা গোষ্ঠীর প্রভাবাধীন এলাকার কেন্দ্রগুলো, প্রার্থীর বাড়ির সন্নিকটে কেন্দ্র হলে, যাতায়াতে দুর্গম এলাকায় অবস্থিত কেন্দ্রগুলোকে ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করা হয়। এছাড়া বিগত নির্বাচনে কোনো কেন্দ্রে সহিংসতা হলে সেগুলোকেও ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনা করা হয়।
খুলনায় চরমপন্থীদের আনাগোনা রয়েছে। বরিশালে বিগত স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে সহিংসতার পরিমাণ বেশি ছিল। উত্তরাঞ্চলে জামায়াত-শিবিরের প্রভাব ও জঙ্গিদের তৎপরতা বেশি থাকায় এ এলাকার পৌরসভাগুলোতে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র বেশি। এ কারণে এখানে সহিংসতার আশঙ্কা করা হচ্ছে বলে ইসি কর্মকর্তারা জানান।
গত ১৯ ডিসেম্বর আইনশৃঙ্খলা বৈঠকে পৌর নির্বাচনে সভা-সমাবেশগুলোতে জঙ্গি হামলার আশঙ্কা করা হয়। বিশেষ করে রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের বিষয়ে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বনের জন্য বলেছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো বলে ইসি কর্মকর্তারা জানান।
এছাড়া প্রতিবেদেনে ৫টি শঙ্কার কথা করে বলা হয়েছে, বিএনপি, জামায়াত ও শিবির নেতাকর্মীরা তাদের প্রার্থীদের নির্বাচনে জয়লাভ করানোর উদ্দেশ্যে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে ভোট কেন্দ্রে যাওয়া থেকে বিরত রাখার জন্য নাশকতা বা গোলাযোগ সৃষ্টি করতে পারে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল সমর্থিত প্রার্থীরা কেন্দ্রে গোলাযোগ সৃষ্টি করে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও একচেটিয়া ভোট লাভের চেষ্টা করতে পারে। নির্বাচনকে বিতর্কিত কিংবা রাজনৈতিক পরিবেশ অস্থিতিশীল করতে বিএনপি-জামায়াত নাশকতায় লিপ্ত হতে পারে। ভোটগ্রহণ পরবর্তী সময়ে পরাজিত প্রার্থীর সমর্থকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে বা পূর্ব শত্রুতার জের ধরে কিংবা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত গোলাযোগ সৃষ্টি করতে পারে।
স্থানীয় আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল এবং আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থীর প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র এলাকায় গোলাযোগ সৃষ্টি করতে পারে।
পৌরসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সারাদেশে হামলার শঙ্কা করছে পুলিশ। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দলীয় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিভিন্ন পৌরসভায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক প্রার্থী (বিদ্রোহী) থাকায় দলীয় আন্তঃকোন্দলের কারণে বিভিন্ন কেন্দ্রে সহিংসতা হতে পারে। এছাড়া বিভিন্ন ধর্মীয় উগ্রপন্থি গোষ্ঠী দেশকে অস্থিতিশীল করার লক্ষ্যে বিভিন্ন কেন্দ্রে গোলাযোগ করতে পারে।
পৌরসভা নির্বাচনে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা হিসেবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য জোরদার করার পাশাপাশি ভোটগ্রহণের ৪৮ ঘণ্টা আগ থেকে নির্বাচন শেষ হওয়ার ৪৮ ঘন্টা পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা অব্যাহত রাখা যেতে পারে বলেও প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়। সূত্র: বাংলামেইল