গভীর রাত। শহরের বেশিরভাগ মানুষ শান্তির ঘুমে নিমগ্ন। ঠিক সেই রাতে শত্রুর বুটের শব্দ, মটার শেল আর রাইফেলের গুলিতে ছন্দপতন হয় নিশুতি রাতের। শহরের কোণায় কোণায় তৈরি হয় আতঙ্ক আর ভয়। কিছুক্ষণ পর পর আর্তনাদ শহরের রাতের নিরবতাকে খানখান করে দেয়। বুক ফাটা কান্না আর আহাজারিতে রাতের নগরী ভয়াল রূপ ধারণ করে। রাত শেষে আসে ভোর। সেই ভোরের আালোতে বাঙালিরা পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে অস্ত্র হাতে নিয়ে গড়ে তোলে প্রতিরোধ। এভাবেই দীর্ঘ নয় মাসের গেরিলা যুদ্ধ শেষে আসে বিজয়ের মাস।
আর এই মহান বিজয়ের মাসে একদল তরুণ অবমুক্ত করলো ‘হিরোজ অব ৭১’ নামের একটি অ্যানড্রয়েড গেম। ঢাকা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) একদল মেধাবী তরুণ আপনাকে নিয়ে যাবে মুক্তিযুদ্ধের সময়কালে। অস্ত্র হাতে আপনিও হবেন মুক্তিযোদ্ধা। প্রবলবেগে এগিয়ে যাবেন শত্রুর বুকে পদচিহ্ন এঁকে দিতে। রাইফেলের বুলেটের গন্তব্য হবে নিখুঁত নিশানা।
রক্তস্নাত বিজয়ে রঞ্জিত আমাদের চিরঞ্জীব স্বাধীনতা। আমাদের বেশিরভাগ বাংলাদেশীদের মনে জেগে উঠে অক্ষেপ। ইশ! আমি যদি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে পারতাম। ভিকপ২, নিনজা অ্যাসেসাইন, কল অব ডিউটি খেলা অভিজ্ঞ তরুণরা একসময় চিন্তা করল গেম খেলায় যদি পাওয়া যায় মুক্তিযুদ্ধের অভিজ্ঞতা। সেই থেকে শুরু। বুয়েটের ছাত্র মাশা মুস্তাকিম ও অপ্রতিম চক্রবর্তী পরিকল্পনা করলেন মুক্তিযুদ্ধ হবে এবার গেমে। ধীরে ধীরে যোগ দিলেন পাপনজিত দে, আর আরিফুর রহমান,অভিক চৌধুরী, আবদুল জাওয়াদ, রেহাব উদ্দিন, রাকিবুল আলম। তারা সবাই মিলে বানিয়ে ফেলেন গেমটি।
২০১১ থেকে শুরু হওয়া পরিকল্পনা সফলতার মুখ দেখলেন ২০১৫ সালে। তাও ডিসেম্বর মাসে। বিজয়ের স্বাদ এবার গেমেও।
শনির চর ১৯৭১। শামসু, বদি, তাপস, সজল ও কবিরের পাঁচজন মুক্তিযোদ্ধা। তাদের দলে নাম ছিল শামসু বাহিনী। পাকিস্তানীরা ঘাঁটি করেছে এই গ্রামে। গ্রামকে শত্রু মুক্ত করতে শুরু হয় তাদের মিশন। গভীর রাতে গেরিলা দল হামলা করে পাকিস্তানি ক্যাম্পে। হঠাৎ আক্রমণে পাকিস্তানি বাহিনী দিশেহারা হয়ে পড়ে। ক্যাম্প ছেড়ে পালিয়ে যায়। কিন্তু এ পালিয়ে যাওয়া পরবর্তীতে আসবে ভয়ঙ্কর হয়ে। তাই শামসু বাহিনীর দুই সদস্য যায় আরও মুক্তিযোদ্ধাদের একত্রিত করতে। আর তিন সদস্য শামসু, সজল এবং তাপস জীবন বাজি রেখে ঝাঁপিয়ে পড়ে শত্রুদের এলাকা ছাড়া করতে। শুরু হয় হিরোস অব ৭১ গেম।
মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাসের সাথে মিল রেখে ওমর রশীদ চৌধুরী লিখেছেন গেমের পুরো গল্প। আবহসংগীত ও শব্দসংযোজন করেছেন তপেশ চক্রবর্তী। বিপণন ও প্রচারণা দেখছেন প্রিয়ম মজুমদার ও হাসান আল রাজি।
বাংকারের নিচে বসে আছে মুক্তিযোদ্ধা। তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখছে সড়কের দিকে। কেননা সেখান দিয়ে শত্রুর গাড়ি বহর আসছে। গাড়ি থামতে না থামতেই নেমে আসছে পাকিস্তানি সেনারা। শত্রুর গুলি ছুটে আসার আগেই পাকিস্তানী সৈন্যদের ধুলোয় লুটিয়ে দেয়ায় আপনার কাজ।
‘জয় বাংলা’ স্লোগানে গ্রেনেড ছুড়তে ছুড়তে আপনি পাবেন অবিকল রক্ত গরম করা উল্লাস। এভাবে ১৬ টি ধাপ অতিক্রম করে খেলা শেষ করতে পারলেই সফলতা আপনার পায়ে চুম্বন খাবে। প্রতিধাপেই বৃদ্ধি পাবে পাকিস্তানি সেনা। গোলাবারুদের পরিমাণ। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক নির্দিষ্ট কুইজের উত্তর দিয়ে আপনি যোগ করতে পারবেন অস্ত্র, গোলাবারুদ, জীবন শক্তি বাড়ানোর বুস্ট।
১৬ ই ডিসেম্বর মুক্তি পায় গেমটি। এ পর্যন্ত গুগল প্লে স্টোর থেকে গেমটি এক লক্ষ বারেরও বেশি নামানো হয়েছে। আর মোবাইল টু মোবাইল শেয়ার তো আছেই। ২৬ শে মার্চে গেমের নতুন ভার্সন দেয়ার চেষ্টায় পোর্টব্লিস নামের গেম নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটি। ৮৪ মেগাবাইটের হিরোস অব ৭১ নামানোর ঠিকানা: https://goo.gl/LVuIlm
গেমটির গেমপ্লে দেখুন ভিডিওতে:
https://www.youtube.com/watch?v=P0PdbcDl8a0