অনিয়ম ও আইন লঙ্ঘনের কারণে পদ্মা ইসলামী লাইফের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। এ জন্য বিভিন্ন মাধ্যম থেকে এই বীমা কোম্পানিটির অনিয়মের তথ্য সংগ্রহ করছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। ইতিমধ্যে আইন লঙ্ঘন করে প্রিমিয়াম আয়ের উপর অতিরিক্ত কমিশন দেয়া ও ভূয়া প্রিমিয়াম আয় দেখিয়ে কোম্পানি থেকে অর্থ তুলে নেয়ার কিছু প্রমাণ হাতে পেছেয়ে আইডিআরএ। অনিয়মের কারণে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত এই বীমা কোম্পানিটির ভ্যালুয়েশনের বেসিস আটকে দিয়ে নিরীক্ষকও নিয়োগ দিয়েছে বীমা নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
আইডিআরএ সূত্র জানিয়েছে, পদ্মা লাইফের দুর্নীতির বিষয়ে বিস্তারিত তদন্ত করে অনিয়মের প্রমাণ পেলে কোম্পানিটির নিবন্ধন সনদ বাতিল করার পরিকল্পনা রয়েছে আইডিআরএ’র চেয়ারম্যান এম শেফাক আহমেদের। এ জন্য বিভিন্ন মাধ্যম থেকে পদ্মা লাইফের অনিয়মের তথ্য সংগ্রহ করে প্রতিষ্ঠানটিতে নিয়োগ করা নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানের কাছে আইডিআরএ’র চেয়ারম্যানের তত্ত্ববধানে গোপনভাবে তথ্য সরবরাহ করা হচ্ছে।
তবে পদ্মা লাইফের একটি সূত্র জানিয়েছে, আইডিআরএ’র তথ্য সংগ্রহের বিষয়ে কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা পর্ষদ অবহিত রয়েছে। কিন্তু তারা আইডিআরএ’র পদক্ষেপকে থোড়াই কেয়ার করছে। একের পর এক অনিয়ম বেরিয়ে আসলেও কোম্পানিটি সকল ধরণের অনিয়ম অব্যাহত রেখেছে।
সূত্র জানিয়েছে, গ্রাহকের দাবি পরিশোধ না করা, অবৈধ বিনিয়োগ, ব্যবসার উন্নয়নের নামে খরচ দেখিয়ে টাকা আত্মসাতসহ পরিচালকদের অবৈধ হস্তক্ষেপের তথ্যও রয়েছে আইডিআরএ’র কাছে। এদিকে ভ্যালুয়েশনের বেসিস আটকে দেয়ার কারণে ২০১৪ সালের জন্য পদ্মা লাইফ থেকে কোন লভ্যাংশ পাবেন না পলিসিহোল্ডার ও শেয়ারহোল্ডররা। আগের বছর ২০১৩ সালেও পদ্মা লাইফ থেকে কোন লভ্যাংশ পায়নি শেয়ারহোল্ডারা। ফলে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার এক বছর পরেই জেড গ্রুপ তালিকায় স্থান হয় প্রতিষ্ঠানটির।
অবশ্য পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির আবেদনের সময়ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) মিথ্যা তথ্য দিয়ে ছিল এ জীবন বীমা কোম্পানি। এ নিয়ে সংবাদ মাধ্যমে একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। তবে সংবাদ মাধ্যমের সেই খবরগুলো আমলে না নিয়েই পদ্মা লাইফকে পুঁজিবাজার থেকে অর্থ তোলার সুযোগ করে দেয় বিএসইসি।
এদিকে আইডিআরএ সূত্রে জানা গেছে, পদ্মা লাইফ ২০১২ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ৩ বছরে ব্যবস্থাপনা ব্যয় খাতে আইন লঙ্ঘন করে ৯১ কোটি ৩৯ লাখ টাকা অতিরিক্ত খরচ করেছে। এরমধ্যে ২০১২ সালে ৩২ কোটি ৮৮ লাখ, ২০১৩ সালে ৩১ কোটি ৪৪ লাখ এবং ২০১৪ সালে ২৭ কোটি ৭ লাখ টাকা। এই অবৈধ ব্যয় কোন কোন খাতে করেছে পদ্মা লাইফ তাও ক্ষতিয়ে দেখছে আইডিআরএ।
সূত্র আরও জানিয়েছে, পদ্মা লাইফের মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ নিয়েও কোম্পানিটির উপর ক্ষুদ্ধ আইডিআরএ’র চেয়ারম্যান। ইতিমধ্যে বিষয়টি নিয়ে পরিচালনা পর্ষদের সব সদস্যকে জরিমানা করা হয়েছে। আপিল করেও সেই জরিমানার হাত থেকে রেহাই পায়নি পদ্মা লাইফের পরিচালনা পর্ষদ। সেই সঙ্গে পদ্মা লাইফ থেকে মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে নতুন একজনের নামের প্রস্থাব করা হলেও তা আটকে দিয়েছে আইডিআরএ।