পৌরসভা নির্বাচনকে ঘিরে সারাদেশের পৌরসভাগুলো এখন উৎসবের নগরীতে রূপ পেয়েছে। নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা সোমবার মধ্যরাতে শেষ হচ্ছে। বিধি অনুযায়ী, ভোটগ্রহণের ৩২ ঘন্টা আগেই শেষ হবে সব ধরণের প্রচারণা।
২৮ তারিখ মধ্যরাত থেকে সব পৌরসভাতে বহিরাগতদের অবস্থানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। একইভাবে আজ মধ্যরাতের পর থেকে ৩১ ডিসেম্বর সকাল ৬টা পর্যন্ত মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধ থাকবে। ২৯ ডিসেম্বর মধ্যরাত থেকে ৩০ ডিসেম্বর রাত ১২টা পর্যন্ত ১২ ধরনের যানবাহন চলাচলও বন্ধ থাকবে।
নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ শাহ নেওয়াজ বলেন, প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকারের নির্বাচন উপলক্ষে পুরো প্রস্তুত নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ৩০ ডিসেম্বর উৎসবমূখর পরিবেশে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ২৮ ডিসেম্বর থেকে ৪ দিনের জন্য মাঠে নামবে নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যরা। পুরো এলাকা নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে দেয়া হবে। পৌর এলাকাগুলোর মোড়ে মোড়ে বসানো হবে নিরাপত্তা চৌকি। নিয়মিত চলবে র্যাব ও বিজিবির টহল।
এদিকে ৩০ ডিসেম্বর ভোটগ্রহণ উপলক্ষে ওই দিন ২৩৪ পৌরসভায় ইতোমধ্যে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে কমিশন। এদিন, সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীন ভোটগ্রহণ চলবে। এ নির্বাচনে মেয়র, সাধারণ কাউন্সিলর এবং সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলরসহ মোট ১২ হাজারের বেশি প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। গত ২৫ ডিসেম্বর থেকে মাঠ পর্যায়ে ভোটের সামগ্রী সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে পৌঁছে দেয়া শুরু করেছে কমিশন। ভোটগ্রহণের দিন সকাল থেকে সেগুলো কেন্দ্রে কেন্দ্রে বিতরণ করা হবে। বুঝিয়ে দেয়া হবে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের।
এই নির্বাচনে সারাদেশের ২৩৩টি পৌরসভার মধ্যে সাড়ে ৩ হাজার কেন্দ্রের মধ্যে প্রায় ১২’শ কেন্দ্রকে নির্বাচন কমিশন (ইসি) ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে, যা মোট ভোটকেন্দ্রের প্রায় ৩৫ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র রয়েছে খুলনা বিভাগে। এই বিভাগের ৪৭১টি কেন্দ্রের মধ্যে ১৯৫টিই ঝুঁকিপূর্ণ। এরপরই রংপুর বিভাগের অবস্থান। এই বিভাগের ৩০৪ কেন্দ্রে মধ্যে ১১৮টি ঝুঁকিপূর্ণ। ঢাকা বিভাগে ৯৯১টির মধ্যে ৩৪৮টি কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ। রাজশাহী বিভাগের ৮০১টি কেন্দ্রের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ ২৪৬টি। সিলেট বিভাগের ১৮৯ কেন্দ্রের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ ৪৫টি। বরিশাল বিভাগের ১৬৭ কেন্দ্রের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রের সংখ্যা ৬৩টি আর চট্টগ্রাম বিভাগের ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রের সংখ্যা ৪৮০টির মধ্যে ১৬৮টি।
এবার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন ১২ হাজার ৪৪ জন প্রার্থী। এর মধ্যে মেয়র পদে ৯২৩ জন ও কাউন্সিলর পদে ৮ হাজার ৫৮৯ জন এবং সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ২ হাজার ৫৩৩ জন প্রার্থী। এরমধ্য থেকে মেয়র পদে ২৩৪, সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৭৩৮, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২৯৫২ জন প্রতিনিধি নির্বাচন করবেন ভোটাররা। ইতোমধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় মেয়র পদে ৬ জন এবং কাউন্সিলর পদে ৯৪ জন নির্বাচিত হয়েছেন।
এ নির্বাচনে ২৩৪ জন রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ তিন শতাধিক সহকারি রিটার্নিং কর্মকর্তা নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব পালন করছেন। এ ছাড়া ২৩৪ পৌরসভায় ৬১ হাজার ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করবেন। প্রতি কেন্দ্রে ১ জন করে ৩ হাজার ৫৮২ জন প্রিজাইডিং অফিসার, প্রতি বুথে ১ জন করে ১৯ হাজার ১৮৭ জন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার এবং প্রতি বুথে ২ জন করে ৩৮ হাজার ৩৭৪ জন পোলিং অফিসার নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
এ নির্বাচনে ৩ হাজার ৫৮২টি ভোটকেন্দ্রে ভোটগ্রহণ করা হবে। ভোটার ৭২ লাখ ৭২ হাজার ৬০৩ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ৩৬ লাখ ৩৯ হাজার ৬৭ জন এবং নারী ভোটার ৩৬ লাখ ৩৩ হাজার ৫৩৬ জন।
পৌর নির্বাচনে মাঠে থাকবে ১ হাজার ২০৩ জন ম্যাজিস্ট্রেট। এরমধ্যে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ৯৬৮জন এবং বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট ২৩৫ জন। গত ১৪ ডিসেম্বর থেকে আচরণবিধি তদারকিতে মাঠে রয়েছে ২৩৪ জন ম্যাজিস্ট্রেট। আর বাকিরা ২৮ থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবেন।
সর্বশেষ ২০১১ সালে ৩১৯টি পৌরসভার মধ্যে ২৮৫ টি পৌরসভায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই বছর ১২ জানুয়ারি ৭৭টি, ১৩ জানুয়ারি ৪৭টি, ১৭ জানুয়ারি ৪৫টি এবং ১৮ জানুয়ারি ৩৫টি পৌরসভায় নির্বাচন হয়। বাকিগুলো পর্যায়ক্রমে অনুষ্ঠিত হয়।
আইন অনুযায়ী মেয়াদ শেষ হওয়ার ৯০ দিনের আগে নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এবার ২৩৪ পৌরসভাতে একদিনে নির্বাচন হচ্ছে। গত ২৪ নভেম্বর তফসিল অনুযায়ী ৩০ ডিসেম্বর ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।