বর্তমানে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্লাস্টিক খাত বড় ধরনের অবদান রাখছে। প্রতিবছর এ খাতের রফতানি ২০ শতাংশ হারে বাড়ছে। এ খাতের উন্নয়নের স্বার্থে ‘প্যাকেজিং অ্যাক্ট’ প্রণয়নের দাবি জানিয়েছে এ খাতের উদ্যোক্তারা। আগামী ২০ জানুয়ারি রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে চার দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক প্লাস্টিক সামিট শুরু হতে যাচ্ছে। এ উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ প্লাস্টিক দ্রব্য প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির (বিপিজিএমইএ) নেতারা এসব দাবি জানান।
প্লাস্টিক খাতের উদ্যোক্তারা জানান, পাটশিল্পের উন্নয়ন তারাও চান। তবে দুটি শিল্পকে মুখোমুখি দাঁড় করানো সরকারের উচিত হবে না। তারা বাস্তবতার আলোকে প্যাকেজিং নীতিমালা প্রণয়নের দাগিদ দেন। আর ঢালাওভাবে পলিথিন বন্ধের বিরোধিতা করেন। এছাড়া পণ্যের বর্জ্য সংগ্রহ ও রিসাইকেলিং করতে সিটি করপোরেশনকে উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানান।
রাজধানীর পল্টনে সমিতির কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন বিপিজিএমইএ সভাপতি মো. জসিম উদ্দীন। এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির সাবেক সভাপতি মো. ইউসুফ আশরাফ, ফেরদৌস ওয়াহেদ, শাহেদুল ইসলাম হেলাল, সামিম আহমেদ, সিনিয়র সহ-সভাপতি গিয়াস উদ্দীন আহমেদ, সাবেক সহ-সভাপতি কে এম ইকবাল হোসেন, সহ-সভাপতি কাজী আনোয়ারুল হক, গোলাম কিবরিয়া, পরিচালক মো. শাহজাহান ও আবুল খায়ের প্রমুখ।
মো. জসিম উদ্দীন বলেন, প্লাস্টিক খাত দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপক অবদান রাখছে। এই খাতের বিকাশ আরো ত্বরান্বিত করতেই প্লাস্টিক সামিট আয়োজন করা হচ্ছে। বিদেশে বাংলাদেশের প্লাস্টিক পণ্যের ব্যাপক পরিচিতি রয়েছে ও চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। এই সামিটের মাধ্যমে দেশের প্লাস্টিক পণ্যের রফতানি আরো বাড়বে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
তিনি জানান, একই সময়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র ‘১১তম আন্তর্জাতিক প্লাস্টিক ফেয়ার ২০১৬’ অনুষ্ঠিত হবে। এতে ২২টি দেশের ৩৫০টি স্টল থাকবে। এতে থাকবে মেশিনারিজ, মোল্ড, কাঁচামাল। উৎপাদনকারী ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানসহ দেশে ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো অংশগ্রহণ করবে।
আগামী ২০ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ১০টায় সামিটের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে থাকবেন অর্থপ্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান ও এফবিসিসিআই সভাপতি আব্দুল মাতলুব আহমাদ।
এছাড়াও সামিটে থাকছে বিভিন্ন সেমিনার ও কনফারেন্স। দ্বিতীয় দিনের সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন এলজিআরডিমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন। পাশাপাশি প্লাস্টিক পণ্যের ওপর আন্তর্জাতিক মানের গবেষকরা সেমিনারে বক্তব্য দেবেন।
সামিটের সমাপনী দিনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল। শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া, বেঙ্গল গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ ও আরটিভির চেয়ারম্যান মোরশেদ আলম এমপি, বিপিজিএমইএ উপদেষ্টা এ এস এম কামাল উদ্দিন বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।
তিনি আরো জানান, বিশ্ব বাজারে টেক্সটাইল এবং অ্যাপারেলস পণ্যের মতো বড় খাত হচ্ছে প্লাস্টিক ও প্লাস্টিক জাত পণ্যের। ২০১৩ সালের হিসাবে দেখা যায়, প্লাস্টিক পণ্যের সামগ্রিক গ্লোবাল ইমপোর্টের পরিমাণ ৫৭০ বিলিয়ন ইউএস ডলার, যেখানে টেক্সটাইল এবং অ্যাপারেলস সেক্টরের অবস্থান হচ্ছে ৭৭২ বিলিয়ন ইএস ডলার। এর মধ্যে শুধু অ্যাপারেলস সেক্টরের অবদান ৪০৩ বিলিয়ন ইউএস ডলার। ২০০১ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত সময়ে কাঁচামাল, মধ্যবর্তী পণ্য, তৈরি পণ্য এবং তাদের আমদানির ক্ষেত্রে বিশ্বে প্লাস্টিক মার্কেট ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
অন্যদিকে চীন, আমেরিকা, ইইউ বর্তমানে প্লাস্টিকের বিশ্ব বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। বিশ্বের প্লাস্টিক উৎপাদনে চীন ২৪%, ইউরোপ ২০%, আমেরিকা ১৯.৪%, জাপান ৪.৪% নিয়ন্ত্রণ করছে। অন্যদিকে বাকি এশিয়ান কান্ট্রি ১৬.৪%, মধ্যপ্রাচ্য আফ্রিকা মিলে ৭.৩%, ল্যাটিন আমেরিকা ৪.৮% বাজার নিয়ন্ত্রণ করে। বিশ্ব বাজারে বাংলাদেশের প্লাস্টিক মার্কেটের শেয়ার অবদান খুবই সামান্য অর্থাৎ ০.০১%। তবে আশার কথা হচ্ছে বাংলাদেশি প্লাস্টিক বাজার দ্রুত বাড়ছে।
মো. জসিম উদ্দীন আরো বলেন, প্লাস্টিক সেক্টরের ক্রমবর্ধমান গ্রোথ, বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান, অভ্যন্তরীণ ও রফতানি বাণিজ্যে উল্লেখযোগ্য ও দৃশ্যত পরিবর্তন অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা ত্বরান্বিত করছে। অভ্যন্তরীণভাবে বর্তমানে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদন ও বিপনন হচ্ছে। এই সেক্টর সরকারের কোষাগারে প্রতি বছর আনুমানিক প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব দিয়ে থাকে। প্লাস্টিকের তৈরি প্রচ্ছন্ন রফতানি পণ্যের পরিমাণ প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা এবং সরাসরি রফতানির পরিমাণ ১ হাজার কোটি টাকার উপরে। বর্তমানে রফতানিতে দেশের প্ল¬¬¬াস্টিক শিল্পখাতের অবস্থান ১২তম। অন্যদিকে দেশে ছোট-বড় মিলিয়ে বর্তমানে প্রায় ৫০০০ প্লাস্টিক ইন্ডাস্ট্রি গড়ে উঠেছে। এই খাতের ওপর প্রায় ১২ লাখের উপরে মানুষ নির্ভরশীল। প্ল¬¬¬াস্টিক পণ্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত বিভিন্ন দেশ সহ সমগ্র ইউরোপ এবং এশিয়ার বিভিন্ন দেশ যেমন চীন, ভারত, নেপাল সহ অন্যান্য বাজারে রপ্তানী হয়ে আসছে। প্ল¬¬¬াস্টিক ব্যবহারের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে ২০% হারে ।
বিপিজিএমইএ সভাপতি বলেন, প্লাস্টিক শিল্পনগরী প্রকল্পটি সম্প্রতি একনেকে পাস হয়েছে। আমরা এজন্য সরকারকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। শিল্প মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে বিসিক কর্তৃক মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে ধলেশ্বরী ব্রিজের পশ্চিম পার্শ্বে বড়বর্ত্তা মৌজার বড়বর্ত্তা এলাকায় ৫০ একর জমির উপর প্ল¬াস্টিক শিল্পনগরী গড়ে তোলার জন্য ইতোমধ্যে জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে। রফতানিতে কমপ্লায়েন্স ইস্যু বর্তমানে পূর্ব শর্ত। কমপ্লায়েন্স ইস্যু প্রতিপালনে প্লাস্টিক শিল্পনগরী যেন দ্রুত বাস্তবায়িত হয় সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ কাম্য। এ শিল্পনগরী চালু হলে দেশের প্লাস্টিক খাতের রফতানি আরো বাড়বে বলে তিনি জানান।