করোনার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এক ইঞ্চি জায়গাও খালি রাখেনি খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার শত-শত কৃষক। সব্জির রাজ্য নামে খ্যাত এই উপজেলায় এবার ফুলকপির বাম্পার উৎপাদন হয়েছে। ফলনে খুশি হলেও এক মাসের ব্যবধানে ফুলকপির অনাকাঙ্খিত দরপতনে হতাশ চাষীরা। গেল নভেম্বরের প্রথমদিকে প্রতি কেজি ফুলকপি ৮০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
গত বুধবার (৯ ডিসেম্বর) সকালে উপজেলার মালতিয়া আড়তে ফুলকপির বিক্রি হয়েছে কেজি প্রতি ৪ টাকা দরে। এই দামে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন উপজেলার আরশনগর গ্রামের সঞ্জয় দেবনাথ। আর আড়তে এসে হতাশ হয়েছেন মালতিয়া গ্রামের চাষী আব্দুল মজিদ।
ডুমুরিয়ার মালতিয়া গ্রামের কাজী মজিদ জানান, একই গ্রামের লতিফ গাজী, শুভঙ্কর কুন্ডু, তফসে শেখ দুই বিঘা করে জমিতে ফুলকপির আবাদ করেছেন। মজিদ কাজী মালতিয়া আড়তে আজ কেজি প্রতি ৪ টাকা দরে কপি বিক্রি করেছেন। তিনি আশঙ্কা করেছেন জানুয়ারিতে ফুলকপি, সিম, টমেটো ক্ষেতেই থাকবে। দিনমজুর ও উৎপাদন খরচ না ওঠায় কৃষক এসব সব্জি বাজারে আর আনবে না।
কৃষকরা জানায়, ডুমুরিয়ার বরাতিয়া, গোবিন্দকাটি, ঠাকুন্দিয়া, খর্নিয়া, আরশনগরে শত-শত বিঘা জমিতে ফুলকপির আবাদ হয়েছে। নভেম্বরের প্রথমদিকে চাষিরা প্রতি কেজি ফুলকপি ৮০ টাকা দরে বিক্রি করে। নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে প্রতি কেজির পাইকারি মূল্য ছিল ৪০ টাকা। আজ কৈয়া বাজার, খর্নিয়া ও মালতিয়া আড়তে প্রতি কেজির মূল্য ছিল চার টাকা।
স্থানীয় সূত্র জানায়, বরাতিয়া, চাকুন্দিয়া, রু—মপুর, আরশনগর ও মালতিয়ায় ফুলকপির বাম্পার ফলন। গতবারের চেয়ে বেশি জমিতে উৎপাদন হয়েছে।
বরাতিয়া গ্রামের ললিত দাস বলেন, এক বিঘা জমিতে ৬ হাজার আর ১০ কাঠা জমিতে তিন হাজার ফুলকপির আবাদ করেছেন। বীজ, সার, কীটনাশক ও দৈনিক শ্রমিকের ব্যয়সহ ২০ হাজার টাকা খরচ হয়। অক্টোবরের প্রথমদিকে ফুলকপির চারার গোড়ায় পঁচন ধরে। আবাদ রক্ষা করতে নানা উপকরণ ব্যবহার করতে হয়। সব্জির আবাদ করতে যেয়ে মহাজনদের কাছ থেকে তিনি পাঁচ টাকা সুদে ঋণ নিয়েছেন। তার জমিতে ফুলকপির বাম্পার উৎপাদন হয়েছে। বড় আশা ছিল গ্রীস্মকালীন সব্জিতে করোনায় ধাক্কায় লোকসান সামলে নিতে পারবেন। ফল হলো উল্টা। আজ সাড়ে চার মন ফুলকপি বিক্রি করেছেন। কাঙ্খিত দাম পাননি।
আরশনগর গ্রামের সঞ্জয় দেবনাথ আশা ও গ্রামীন সমিতি থেকে এক লাখ টাকা ঋন নিয়েছেন। তিনি আজ মালতিয়া বাজারে ১০ মন ফুলকপি বিক্রি করতে আসেন। প্রতি কেজির মূল্য চার টাকা দেখে হতাশ হয়েছেন।
ফুলকপির আবাদ করে গোবিন্দকাটি গ্রামের মো: হাবিবুর রহমান, লিটন মোড়ল, আবু সাইদ, কানাই মল্লিক, রমেশ সরকার, কিংকর বশাক ও ঠাকুন্দিয়া গ্রামের আব্দুল জলিল গাজী লোকসানের সম্মুখিন হচ্ছেন। এসব চাষিরা জানিয়েছেন ক্ষেত্রবিশেষ দু’একদিন ছয় টাকা কেজি দরেও বিক্রি হয়। চাষিরা হাতাশার কথা ব্যক্ত করে বলেন, করোনার ক্ষতি পোষানো গেল না, তারপরে শীতের সব্জি আবাদ করে লোকসান ও ঋণী হতে হয়েছে।
সানবিডি/নাজমুল