একটি নদী বন্দর দক্ষিণ পশ্চিম অঞ্চলের অর্থনৈতিক অগ্রসরে রাখতে পারে ব্যাপক ভূমিকা

জেলা প্রতিনিধি আপডেট: ২০২০-১২-১৪ ১৮:৫৯:১০


রাকিবুল ইসলাম রাফি: উন্নয়নে বন্দর সুবিধার গুরুত্ব অপরিসীম। বাংলাদেশের দক্ষিণে বিস্তৃত বঙ্গোপসাগর। এর বিশাল সুবিধা আমরা গ্রহণ করতে পারিনি। চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দরের মাধ্যমে আমাদের আমদানি-রফতানি হয়ে থাকে। তবে এককভাবে চট্টগ্রাম বন্দর দেশের বহিঃবাণিজ্যের প্রায় পুরোটা নিয়ন্ত্রণ করে। প্রয়োজন ছিল বঙ্গোপসাগরের সাথে সংযুক্ত নদীতে আরো বন্দর নির্মাণ করা, সেটি আমরা করতে পারিনি। ফলে আমাদের বহিঃবাণিজ্যে কাংক্ষিত উন্নয়ন ঘটেনি।

একইভাবে নদী বন্দরগুলো বাংলাদেশের বাণিজ্যের বিপুল সম্ভাবনাও কাজে লাগানো যায়নি। গড়ে তোলা যায়নি বিস্তৃত নদীবন্দর সুবিধা। একীভূত ইউরোপের সুবিধা গড়ে ওঠার পেছনে নদীবন্দরের অবদান বিপুল। অর্থনীতিতে সমৃদ্ধ অন্য দেশগুলোও নদীবন্দর নির্মাণ ও এর কার্যক্রম সুচারুভাবে সম্পন্ন করছে। বিশেষ করে তথ্যপ্রযুক্তির পুরো সুযোগ তারা কাজে লাগিয়েছে। নদীবন্দরের সংখ্যা কম হওয়াই এতে করে নানাভাবে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন বন্দর ব্যবহারকারীরা।

রাজবাড়ী ব্রিটিশ আমল থেকে প্রসিদ্ধ। যাতায়াতের করিডোর হিসেবে এটি ব্যবহার হয়ে আসছে। রাজবাড়ীর ভূ-খন্ড দিয়ে পরিবাহিত পদ্মা দিয়ে বছরে প্রায় দশ হাজার ক্ষুদ্র ও মাঝারি আকৃতির জাহাজ যাতায়াত করে। দেশের শনৈঃ শনৈঃ উন্নতির কথা যখন বলা হচ্ছে, তখন একটি নদী বন্দর কেন হচ্ছেনা এখানে? এমনটাই প্রশ্ন ছিল এখানকার শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীদের।

রাজবাড়ীর এই পদ্মায় প্রতিবছরই নোঙর করে দুই হাজারের মতো ক্ষুদ্র ও মাঝারি আকারের জাহাজ। সেখান থেকে ট্রলার যোগে পণ্য পরিবহন করা হয়ে থাকে। মাঝ নদী জাহাজ নোঙরের ফলে পণ্যের ক্ষতির সম্ভাবনাও কম নয়। এছাড়াও রাজবাড়ী, কুষ্টিয়া, ফরিদপুর ও পাবনার বিভিন্ন শিল্পকারখানায় উৎপাদিত পণ্য সড়ক যোগে মোংলা ও চট্রগ্রাম সমুদ্র বন্দরে পাঠাতে হয় বিদেশে রফতানি করার জন্য। কিন্তু এক্ষেত্রে যদি এখানে একটি বন্দর থাকে তাহলে পণ্যগুলো জাহাজ যোগে সহজেই তারা পরিবহন করতে পারবে। এতে করে দেশের অভ্যন্তরে যেমন জাহাজ শিল্পের ব্যবহার বাড়বে অন্যদিকে জাতীয় অর্থনীতি প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি এখানকার মানুষের আর্থসামাজিক অবকাঠামোর উন্নয়ন হবে।

রাজবাড়ীর পদ্মার কোল ঘেষে উত্তরে পাবনা। পাবনায় গড়ে ওঠা স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, এডরুক লিমিটেড, ইউনিভার্সেল ফার্মাসিউটিক্যালসে উৎপাদিত ওষুধ বিদেশে রফতানি হচ্ছে। কিন্তু এই ওষুধ রফতানিতে দেশের অভ্যন্তরের পরিবহন ক্ষাতে পোহাতে হচ্ছে নানা ভোগান্তি।

অপরদিকে রাজবাড়ীর সীমানা ঘেষে পশ্চিমের জেলা কুষ্টিয়াতে রয়েছে বিআরবি গ্রুপস, নাসির গ্রুপস, কেএনবি, উডল্যান্ড গ্রুপের মতো রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠান। যারা প্রতিনিয়ত জাহাজ যোগে পণ্য পাঠান বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। এছাড়াও রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ টেক্সটাইল, রাজবাড়ী জুট মিলস, রাজবাড়ী অর্গানিকস সহ বেশ কয়েকটি বৃহৎ আকৃতির প্রতিষ্ঠান পাট, কাপড় সহ বেশ কিছু পণ্য চট্রগ্রাম বন্দর দিয়ে জাহাজ যোগে রফতানি করে থাকে। তাছাড়া রাজবাড়ীর কোল ঘেষে থাকা ফরিদপুর, মাগুরায় রয়েছে বেশ কয়েকটি ভারতীয় মালিকানাধীন পোশাক শিল্প কারখানা।

এখন আমাদের দেশের উন্নয়নের মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন হতে দেখা যাচ্ছে। মাত্র কয়েক হাজার কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে রাজবাড়ীতে একটি আধুনিক ও চৌকস নদী বন্দরের রূপ দেয়া যায়। যার সুবিধা পাবে দক্ষিণ-পশিচম অঞ্চলের ১১ টি জেলা। আর এতে একদিকে যেমন এখানে গড়ে ওঠা শিল্প কারখানার উৎপাদিত পণ্য রফতানি বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে অন্যদিকে জাতীয় অর্থনীতিতেও আসতে পারে প্রবৃদ্ধি। উন্নত যোগাযোগের মাধ্যমে বিশ্ব এখন একটি গ্রামে পরিণত হয়েছে।

এব্যাপারে কথা বলতে গেলে রাজবাড়ী ১ ও ২ আসনের সংসদ সদস্য কেরামত কাজী ও জিল্লুল হাকিম সানবিডিকে বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমরা এর সাথে সম্পৃক্ত মন্ত্রণালয়ের সাথে কথা বলবো ও একটি প্রস্তাব উপস্থাপন করবো।

 

সানবিডি/নাজমুল