দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলীয় জেলাগুলোয় কৃষি উৎপাদনে লবণাক্ততা বৃদ্ধিকেই সবচেয়ে বড় বাধা হিসেবে দেখা হয়। এজন্য লবণসহিষ্ণু জাত উদ্ভাবনের মাধ্যমে সেই সংকট মোকাবেলায় অগ্রগতি হয়েছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে লবণাক্ততার পাশাপাশি পোল্ডার অব্যবস্থাপনা বড় সংকট তৈরি করছে। পোল্ডারগুলো যাদের নিয়ন্ত্রণে, তারা কৃষি উৎপাদন সহায়ক কার্যক্রম পরিচালনা করতে ব্যর্থ হচ্ছে। অন্যদিকে কৃষকের যখন পানি প্রয়োজন তখন পোল্ডারগুলো থেকে পর্যাপ্ত পানি পাচ্ছেন না।
আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ইরি) আয়োজিত ‘পাথওয়েজেস অব স্কেলিং এগ্রিকালচারাল ইনোভেশনস ফর সাসটেইনেবল ইনটেনসিফিকেশন ইন দ্য পোল্ডারস কোস্টাল বাংলাদেশ (এসআইআইএল-পোল্ডার প্রজেক্ট)’ শীর্ষক ভার্চুয়াল ইনসেপশন ওয়ার্কশপে এসব তথ্য উঠে এসেছে। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইরির জ্যেষ্ঠ পানি বিজ্ঞানী ড. মনোরঞ্জন মণ্ডল, বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএলআরআই) মহাপরিচালক ড. নাথু রাম সরকার, এসিআই এগ্রিবিজনেসেসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য ড. ফা হ আনসারী।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে কৃষি সচিব মো. মেসবাহুল ইসলাম বলেন, দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলীয় জেলাগুলোয় কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য সরকার বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। শস্যের বহুমুখীকরণ ও শস্যের নিবিড়তা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ অঞ্চলের কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য মহাপরিকল্পনার পাশাপাশি সব ধরনের নীতি সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে সরকার।
সেমিনারে বক্তারা বলেন, দক্ষিণাঞ্চলের চারটি জেলায় ১৩টি উপজেলায় ২২টি পোল্ডার রয়েছে। এর মধ্যে খুলনায় ১১টি, সাতক্ষীরায় একটি, পটুয়াখালীতে আটটি এবং বরগুনায় দুটি। এসব পোল্ডার তদারকি ও পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। কিন্তু তারা কৃষকের কখন পানি প্রয়োজন, সেটি অনুধাবন করতে না পেরে তাদের ইচ্ছানুসারে পানি ছাড়ে। এতে অনেক সময় কৃষকরা ক্ষতির শিকার হন। আবার অনেক ক্ষেত্রে কৃষকের পানি যখন প্রয়োজন তখন পোল্ডারগুলো থেকে পর্যাপ্ত পানি পাওয়া যায় না। এতে সামঞ্জ্যহীনতা দেখা যায়। ফলে পোল্ডারগুলোর পরিচালনার ভার কৃষি মন্ত্রণালয়ের ওপর থাকা প্রয়োজন বলে মতামত দেন বক্তারা। এ অঞ্চলের মানুষের খাদ্যনিরাপত্তায় কার্যকর পোল্ডার ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন। টেকসই ও কার্যকর পোল্ডার ব্যবস্থাপনার অভাবে কৃষি উৎপাদনের পাশাপাশি খাদ্যনিরাপত্তা সংকট দীর্ঘায়িত হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে ইরির ডেপুটি মহাপরিচালক ড. অজয় কোহলি, কানসাস স্টেট ইউনিভার্সিটির ড. ভারা প্রসাদ ও ড. কৃষ্ণ জগদীশ, ইরির বাংলাদেশ প্রতিনিধি ড. হামনাথ ভাণ্ডারি, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের (বিএআরসি) নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার, কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ড. জীবন কৃষ্ণ বিশ্বাস বক্তব্য রাখেন।