ঐতিহ্যই হোক, অথবা নস্টালজিয়া, এ হল সমৃদ্ধ বাঙালির চিরন্তন বৈশিষ্ট্য। এসবের মধ্যেও বাঙালির বিশেষ কতকগুলি বৈশিষ্ট্য আছে যেগুলি দিয়ে সহজেই আলাদা করা যায় অন্যদের থেকে। সেগুলি খানিকটা এই রকম:
ভাঁড়ে চা আর হাতে সিগারেট নিয়ে আড্ডায় মজে থাকা বাঙালিদের খুব পরিচিত চিত্র। আড্ডা ছাড়া বাঙালি বাঁচতে পারে না। আড্ডা বাঙালির একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য। সব বয়সের বাঙালিরাই আড্ডার সঙ্গে অভ্যস্ত। বয়সের তারতম্যের ক্ষেত্রে আড্ডার বিষয়েরও পরিবর্তন ঘটে থাকে। কিন্তু, আড্ডা চলতেই থাকে। সাহিত্য, সিনেমা, রাজনীতি, খেলাধুলো সব কিছুই হতে পারে আড্ডার বিষয়। সেটা স্থানীয় বা জাতীয় হোক কিংবা আন্তর্জাতিক। বিশ্বকাপ ফুটবলে ভারত না থাকলেও বিশ্বকাপ নিয়ে বিতর্কের ঝড় ওঠে বাঙালিদের আড্ডায়।
যে কোনও বিষয়ের প্রতিবাদ জানাতে বাঙালি সিদ্ধহস্ত। বন্ধ-অবরোধ হচ্ছে সাধারণ বাঙালির প্রতিবাদের ভাষা। বন্ধ-অবরোধ করে পরিবহণ বা অন্যান্য পরিষেবা বন্ধ করলেও মুখে মুখে চলতে থাকে স্লোগান। হাজার বনধেও কখনও বন্ধ হয় না বাঙালির মুখ।
বাঙালী প্রবীণ হলেই সে পরিপূর্ণ জ্ঞানের ভাণ্ডারে পরিণত হয়ে যায়। একইসঙ্গে বয়সে ছোটদের জ্ঞান দেওয়ার অধিকার জন্মে যায়। জ্ঞান না থাকলেও সে জ্ঞান দেবে। কারণ, সে এখন প্রবীণ। নবীনদের থেকে অনেক বেশি সূর্যোদয় দেখেছে। অনেক বেশি বসন্ত কাটিয়ে এসেছে।
সাংস্কৃতিক প্রিয় বাঙালির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে আবৃত্তি। বাঙালি জীবনের সঙ্গে যেমন জড়িয়ে আছেন রবি ঠাকুর. ঠিক সেই রকমই বাঙালির যেকোনও অনুষ্ঠানের সঙ্গে জড়িয়ে আছে আবৃত্তি। সব কবিতা রবি ঠাকুরের লেখা নাও হতে পারে। কিন্তু, আবৃত্তি থাকতেই হবে।
‘পরনিন্দা পরচর্চা’ বাঙালি জীবনের অঙ্গ। অনেকে বলে থাকে গৃহবধূরা শুধু পিএনপিসি করে থাক। কিন্তু, বাস্তবে দেখা গিয়েছে কর্মরতা পুরুষ-মহিলারাও এর ব্যতিক্রম নয়। অফিসে বা ট্রেনেও চলতে থাকে অন্যের আলোচনা। অবৈধ সম্পর্ক এই আলোচনার প্রধান আলোচ্য বিষয়।
শিক্ষিত বাঙালি নিজের অর্জিত জ্ঞান শুধু নিজের মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখেই ক্ষান্ত হয় না। সকলের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়ে নিজের পাণ্ডিত্য জাহির করতে চায়। সেই কারণে বাঙালীরা খুব ভালো বক্তব্য রাখতে পারে।
যে কোনও বিষয় নিয়ে বিতর্ক চালাতে বাঙালি বেশ ওস্তাদ। আগে এই বিষয়টি চায়ের আড্ডার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও এখন কলেবরে বৃদ্ধি পেয়েছে। টেলিভিশন সংবাদমাধ্যমের এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে বিতর্ক। বিভিন্ন সংবাদপত্র বা পত্রিকাগুলিও এখন বিতর্কসভার আয়োজন করে।
বিতর্কের সঙ্গে আলাপ-আলোচনাও বাঙালির বৈশিষ্ট্য। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সমস্যা নিয়েও গঙ্গাপাড়ে বসে আলোচনা চালায় বাঙালিরা। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বড় বড় আলোচনা সভারও আয়োজন করা হয়।
আপনি ভালো খেতে-পরতে পাওয়া ‘কালচারড’ বাঙালি হয়ে থাকলে এই বৈশিষ্ট্যগুলির সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে আপনার সম্পর্ক থাকবেই থাকবে।
সানবিডি/ঢাকা/রাআ