দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) শেয়ারধারী পরিচালক রকিবুর রহমান। তিনি আবার পরিচালক হয়েছেন সেন্ট্রাল কাউন্টারপার্টি বাংলাদেশ লিমিটেডে (সিসিবিএল)। সিসিবিএল গঠন সংক্রান্ত সিকিউরিটিজ আইনে পরিচালক পদে ট্রেডিং পার্টিসিপ্যান্ট ও তাদের প্রতিনিধিদের অযোগ্য নির্ধারণের পরও রকিবুরকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তার নিয়োগটি প্রশ্নবিদ্ধ বলে মনে করছেন বিএসইসি,ডিএসই,সিএসই ও বাজার সংশ্লিষ্টরা।
গত জুনে ১৩ সদস্যের সিসিবিএল বোর্ডকে অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি), যেখানে সিসিবিলের পরিচালক হিসেবে রকিবুর রহমানকেও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ডিএসই এই নিয়োগের জন্য সুপারিশ করেছে। রকিবুর রহমান ডিএসইর একজন প্রভাবশালী পরিচালক, যিনি স্টক এক্সচেঞ্জ ডি-মিউচুয়ালাইজেশনের আগে একাধিকবার ডিএসইর প্রেসিডেন্ট পদে ছিলেন।
ডিএসইর ব্যবস্থাপনাতে তার ব্যাপক প্রভাব রয়েছে বলে অভিযোগ আছে। স্টক এক্সচেঞ্জের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোর নিয়োগ ও পদোন্নতিতেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। যদিও স্টক এক্সচেঞ্জের মালিকানা থেকে ব্যবস্থাপনা পৃথক করতে ডি-মিউচুয়ালাইজেশন করা হয়েছিল। ডিএসই পর্ষদে সাতজন স্বতন্ত্র পরিচালক, পাঁচটি শেয়ারহোল্ডিং পরিচালক এবং একজন ব্যবস্থাপনা পরিচালক রয়েছেন।
মূলত স্টক এক্সচেঞ্জের শেয়ার লেনদেন নিষ্পত্তি হবে সিসিবিএলের প্রধান কাজ। এ কারণেই স্টক এক্সচেঞ্জের শেয়ারধারী কোনো ব্রোকারেজ হাউজ বা এর কোনো প্রতিনিধিদের সিসিবিএলের বোর্ডে থাকা অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে আইনে। যাতে শেয়ার নিষ্পত্তিতে তারা কোনো প্রভাব বিস্তার না করতে পারেন।
বিএসইসি, ডিএসই এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) কর্মকর্তারা বলেছেন, সিসিবিএল বোর্ডে রকিবুরের নিয়োগ বিএসইসির ক্লিয়ারিং অ্যান্ড সেট্লম্যান্ট বিধিমালার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (ক্লিয়ারিং অ্যান্ড সেট্লম্যান্ট) বিধিমালা, ২০১৭ এর তফসিল ২ এর বিধি ১৮ (চ) অনুসারে, কোনো ট্রেডিং পার্টিসিপ্যান্ট অথবা তাদের প্রতিনিধি সিসিবিএলের পরিচালক হতে পারবেন না। এর ফলে কোনো ব্রোকারেজ হাউজ বা এর প্রতিনিধি সিসিবিএলের পরিচালক হওয়ার যোগ্য নন বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান।
তারা জানান,বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. খায়রুল হোসেনর আমলে ডিএসইর সাবেক একজন পরিচালক সিসিবিএলের পরিচালক হওয়ার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করে। পরে সিসিবিএলের আইন তৈরির সাথে সম্পৃক্ত একজনের সাথে দেখা করে ডিএসইর উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও ওই পরিচালক। ওই সময় তার কাছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (ক্লিয়ারিং অ্যান্ড সেট্লম্যান্ট) বিধিমালা, ২০১৭ এর তফসিল ২ এর বিধি ১৮ (চ) আইনের ধারার ব্যাখ্যা চাওয়া হয়। পরে তিনি আইন দিয়ে প্রমাণ করে দেন কোনো ট্রেডিং পার্টিসিপ্যান্ট অথবা তাদের প্রতিনিধি সিসিবিএলের পরিচালক হতে পারবেন না। পরে তিনি আর সিসিবিএলের পর্ষদে যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেননি।
সিকিউরিটিজ আইন অনুসারে, মিডওয়ে সিকিউরিটিজ লিমিটেড, যার চেয়ারম্যান রকিবুর, তিনি একজন ট্রেডিং পার্টিসিপ্যান্ট। মিডওয়ে সিকিউরিটিজ ডিএসইর শেয়ারহোল্ডার ও ট্রেকহোল্ডারের পাশাপাশি সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের ডিপোজিটরি অংশগ্রহণকারীও। যদিও সম্প্রতি রকিবুর রহমান তার পুত্র আশেকুর রহমানকে ট্রেকহোল্ডারের প্রতিনিধি নিযুক্ত করেছেন। ডিএসই এবং সিএসইর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, একজন ট্রেডিং অংশগ্রহণকারী কেবল ট্রেকহোল্ডিংই নয়, এটি সামগ্রিকভাবে একটি ব্রোকারেজ হাউজকেও বোঝায়।
রকিবুর রহমানকে সিসিবিএলের পরিচালক পদে মনোনয়ন দিতে অস্বীকার করেছিলেন ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদের আগের চেয়ারম্যান আবুল হাশেম। তবে ইউনুসুর রহমানের নেতৃত্বে ডিএসইর বর্তমান ডিএসই বর্তমান পর্ষদ রকিবুরকে সিসিবিএল পরিচালক হতে সম্মতি দিয়েছে।
এ বিষয়ে এসইসির মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. রেজাউল করিম সানবিডিকে বলেন, সিসিবিএলের রকিবুরর রহমানের পরিচালক নিয়োগ নিয়ে আইনের পরিপন্থী কী না; তা খতিয়ে দেখবে কমিশন।
সিসিবিএল ২০১৮ সালের মে মাসে গঠন করা হয়েছিল। সিসিবিএল পরিচালনা পর্ষদ সাতটি স্বতন্ত্র পরিচালক, চারটি শেয়ারধারী পরিচালক এবং একজন ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়ে গঠিত হয়। কৌশলগত অংশীদারের জন্য একটি পরিচালক পদ খালি আছে।