প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী রাজবাড়ী জেলার রয়েছে পর্যটনের অপার সম্ভাবনা। পুর্বে জমিদারি ও রাজকার্য পরিচালনা, নীল চাষ, ধর্মীয় চর্চা ও নানা কার্যক্রম পরিচালনাকে ঘিরেই এখানে গড়ে উঠেছেছিল রাজবাড়ী, জমিদারবাড়ি, মসজিদ, মন্দির, নীল কুঠির, দিঘি, মঠ সহ নানা ঐতিহাসিক স্থাপনা।
যা এখানকার মানুষের কাছে ঐতিহাসিক স্থান হিসেবে খ্যাতি লাভ করে। এখানকার মানুষেরা মনে করেন, সরকার যদি স্থাপনাগুলো সংস্কার করে পর্যটন ক্ষেত্র হিসেবে গড়ে তোলে, তাহলে দেশ-বিদেশের অনেক পর্যটক এখানে আসবে এবং প্রচুর রাজস্ব আয় হবে। রাজবাড়ী হতে পারে ভ্রমণপিপাসু মানুষদের কাছে এক আকর্ষণীয় স্থান। কিন্তু সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও পর্যটন বিকাশে সরকার বা স্থানীয় প্রশাসনের দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নেই। এভাবে দিনের পর দিন স্থাপনাগুলো অবহেলায় পড়ে থাকলে এক সময় তা বিলীন হয়ে যাবে।
বর্তমান রাজবাড়ী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের লাল ভবন ১৮৭৮ সালে বাণিবহের জমিদার গিরিজা শংকর মজুমদার ও তার ভাই অভয় শংকর মজুমদার প্রতিষ্ঠা করেন। যা উনিশ শতকের পর আর কখনো সংস্কার করা হয়নি। রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দিতে অবস্থিত নলিয়া জোড় বাংলা মন্দির যা প্রতিষ্ঠা হয় ১৮৬৭ সালে, বালিয়াকান্দি উপজেলার জঙ্গল ইউনিয়নের সমাধিনগর মঠ যার প্রতিষ্ঠাকাল আনুমানিক ১৮৪৬ সালে। প্রাচীন নিদর্শনের সুন্দর সাক্ষী এই মঠ। রাজবাড়ী সদর থানার পাচুরিয়া ইউনিয়নে ১৭৪১ সালের দিকে জমিদার মুকুন্দিয়া বাবুর তৈরি মুকুন্দিয়া জমিদার বাড়ি স্থাপনাটির সৌন্দর্য বিলীনের পথে। গতানুগতিক জমিদারবাড়ির মতো এটিও পুরাতন, ভাঙাচোরা আর আগাছায় মোড়ানো। এছাড়াও রয়েছে, আউলিয়া মসজিদ, চাঁদ সওদাগরের টিবি, কল্যাণ দিঘি, রাথখোলা সানমঞ্চ, আঠারো শতকের ইংরেজদের নীলকুঠিসহ বিভিন্ন স্থাপনা।
এই স্থাপনাগুলোর কোনোটিতেই নেই সংস্কার কিংবা সংরক্ষণের ছোঁয়া। বরং গরু-ছাগলের আবাস স্থলে পরিণত হয়েছে স্থাপনাগুলো।
রাজবাড়ীর জেলার বাসিন্দা ষাট বছর বয়সী কাঞ্চন নাথ বলেন, পর্যটন খাতে রাজবাড়ীর সব ধরণের সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও পিছিয়ে থাকা দুঃখজনক। জেলার পর্যটনের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে প্রশাসনের পাশাপাশি বিত্তবান ও প্রবাসীদের এগিয়ে আসতে হবে। আর এগুলো সংস্কার না করা হলে কয়েক বছর বড়ে শুধু নামেই ইতিহাসের পরিচয় দেবে রাজবাড়ী। কিন্তু ইতিহাস প্রসিদ্ধ কোনো স্থাপনা খুঁজে পাওয়া যাবেনা এই জেলায়।
নলিয়া জোড় বাংলা মন্দিরে ঘুরতে আসা খুলনার বাসিন্দা দেবাশীষ মজুমদার জানান, এখানে ঘুরতে এসে একটি জিনিসেরই অভাব বোধ করছি, সেটা হলো এখানে থাকার জন্য ভালো মানের কোনো হোটেল মোটেল নেই। এছাড়াও দেশ স্বাধীনের এতো বছর পরেও সংস্কারের অভাবে বেহাল দষা স্থাপনাগুলোর।
রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক দিলসাদ বেগম বলেন, রাজবাড়ী একটি প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর ঐতিহ্যবাহী জেলা। এ জেলায় পর্যটন শিল্পের প্রসারে ও পর্যটকদের সুবিধায় যা যা প্রয়োজন, তার বাস্তবায়ন করা হবে। এ ব্যাপারে আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে। এর পরও যদি বড় ধরণের কোনো কাজ প্রয়োজন হয়, তাহলে জেলা পরিষদ থেকে অথবা আমাদের বার্ষিক উন্নয়ন প্রকল্প থেকে ধাপে ধাপে করা হবে।
সানবিডি/নাজমুল