পুঁজিবাজারে কোন ক্রেতা যখন কোন শেয়ার কিনে তখন সে অনুমান করে যে আগামীতে ঐ শেয়ারটির দাম বাড়বে, অর্থাৎ বাজার পরিস্থিতি বিবেচনায় তাঁর কাছে শেয়ারটি আন্ডারভ্যালুড। ঠিক একইভাবে শেয়ারটি যে বিক্রি করছে সে হয়তো ভাবছে শেয়ারটি তুলনামূলকভাবে ওভারভ্যালুড। ক্রেতা বিক্রেতার পরস্পর বিপরীত্মূখী মূল্যায়নের কারণেই বাজার চলমান হয় এবং কেনা-বেঁচা সম্পন্ন হয়ে থাকে। কিন্ত শেয়ারদামের অনুমানভিত্তিক মূল্যায়ন এবং প্রকৃত অন্তর্নিহিত মূল্য (Intrinsic Value) এক কথা নয়। এটা বলা হয় যে, স্বল্পমেয়াদে সাময়িক চাহিদা ও যোগানের ভিত্তিতে কোন কোম্পানীর শেয়ার দাম নির্ধারিত হলেও দীর্ঘমেয়াদে শেয়ারের বাজারদর তার অন্তর্নিহিত মূল্য (Intrinsic Value) এর দিকে ধাবিত হয়।
অন্তর্নিহিত মূল্য হলো কোম্পানীর ফান্ডামেন্টাল বিশ্লেষণের ভিত্তিতে প্রকৃতপক্ষে যে মূল্য হওয়া উচিত তার ভ্যালুয়েশন। এটাকে ফেয়ার ভ্যালু বা এ্যাকচুয়াল ভ্যালুও বলা হয়ে থাকে। তাই অন্তর্নিহিত মূল্য বের করা গেলে বাজারমূল্যের সাথে তার তুলনা করে শেয়ারটি অতিমূল্যায়িত (Overvalued), না অবমূল্যায়িত (Undervalued) তা সহজেই বুঝা যায় এবং সে অনুসারে ক্রয় কিংবা বিক্রয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে লাভবান হওয়া যায়। শেয়ারের বাজারদর সর্বদা তার অন্তর্নিহিত মূল্যের দিকে ধাবিত হওয়ার প্রবণতা থাকে। যদি অন্তর্নিহিত মূল্য বাজারদরের চেয়ে বেশী হয়ে থাকে তবে দীর্ঘমেয়াদে তার দাম বাড়বে। কেন বাড়বে? বাড়বে তার কারণ কোম্পানীর মৌল্ভিত্তি মানুষ আগে যা ভেবেছিল তার চেয়ে বাস্তবে অধিকতর ভাল বিধায় ভবিষ্যতে আর্ণিংস ভাল হবে এবং যার প্রভাবে দাম বাড়বে। ঠিক একইভাবে অন্তর্নিহিত মূল্য থেকে বাজার মূল্য বেশী হলে আগামীতে বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশা অনুসারে আর্ণিংস না হওয়ার ফলে তার দাম পড়ে যাবে। ফলে যারা শেয়ারের অন্তর্নিহিত মূল্য সঠিকভাবে ধারণা বা অনুমান করতে সক্ষম হয় তাঁদের লোকসানের কোন ভয় থাকে না। এটা অবশ্য দীর্ঘমেয়াদে শেয়ার মার্কেটে বিনিয়োগকারীদের জন্য সত্য। আরা যারা স্বল্পমেয়াদের জন্য কেনা-বেচা বা ট্রেডিং করে তাদের কাছে অবশ্য অন্তর্নিহিত মূল্যের কোন মূল্য নেই। কারণ তাঁরা দীর্ঘমেয়াদে শেয়ার ধরে রাখে না, বরং বাজারের নিত্যকার স্বাভাবিক দাম উঠানামার সু্যোগকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করে।
বিনিয়োগকারীদের জন্য অন্তর্নিহিত মূল্য বের করা খুবই সহায়ক হলেও সমস্যা হলো তা বের করার প্রক্রিয়া কিছুটা সাবজেকটিভ। কারণ, কিছু ধারণা বা অনুমান (Assumptions) সেখানে অবধারিতভাবে যুক্ত করার প্রয়োজন হয় যার ফলে সেসব Assumptions এর সামান্য হেরফের করা হলে অন্তর্নিহিত মূল্য বদলে যায়। তদুপরি পদ্ধতিগত পার্থক্যও রয়েছে। অন্তর্নিহিত মূল্য হিসাব করতে বেশ কয়েকটি পদ্ধতি রয়েছে এবং যিনি হিসাব করছেন তিনি কোন্ বিশেষ পদ্ধতি অবলম্বন করছেন তার উপর রেজাল্ট অনেকটা নির্ভর করে। অন্তর্নিহিত মূল্য ক্যালকুলেশনের পদ্ধতিগুলোর মধ্যে ডিসকাউন্টেড ক্যাশ ফ্লো (DCF), ডিসকাউন্টেড ডিভিডেন্ড মেথড (DDM) এবং রেসিড্যুয়াল ইনকাম (Residual Income) তথা বুক ভ্যালু মেথডগুলোই সবচেয়ে জনপ্রিয়। DCF পদ্ধতিতে কোম্পানীর বিগত বছরগুলোর ফ্রি ক্যাশ ফ্লো এবং ইনকাম প্রবৃদ্ধির ভিত্তিতে ভবিষ্যত ক্যাশ ফ্লো’র সমষ্টি বের করা হয় এবং তাকে ডিসকাউন্ট ফ্যাক্টরিং এর সাহায্যে বর্তমান মূল্যে আনা হয়। DDM পদ্ধতিতে শেয়ারপ্রতি ডিভিডেন্ড হার এবং প্রত্যাশিত ডিভিডেন্ড প্রবৃদ্ধিকে ব্যবহার করে ভবিষ্যতে প্রাপ্তব্য মোট ডিভিডেন্ডকে ডিসকাউন্ট ফ্যাক্টরিং এর সাহায্যে বর্তমান মূল্যে আনা হয়। রেসিড্যুয়াল (অবশিষ্ট) ইনকাম মেথডে কোম্পানীর বর্তমান বুক ভ্যালু সম্পদের সাথে ভবিষ্যতের সম্ভাব্য ডিসকাউন্টেড ইনকাম যোগ করা হয়। প্রতিটি মেথডেরই সুনির্দিষ্ট ফর্মুলা আছে। আর সব মেথডেই ভবিষত্যের ইনকাম বা ক্যাশ ফ্লো’কে অনুমানকৃত ডিসকাউন্ট হারের দ্বারা বর্তমান সময়ের মূল্যে নিয়ে আসা হয়।
ডিসকাউন্ট করার প্রয়োজন এজন্য যে, কোন নির্দিষ্ট অর্থের ভবিষ্যত মূল্য ও বর্তমান মূল্য কখনো সমান নয়। উদাহরণ হিসাবে বলা যায়- মুদ্রাস্ফীতির কারণে ১০ বছর পরের ১০০ টাকার মূল্যমান আজকের ১০০ টাকার চেয়ে কম; তবে কতটা কম তা নির্ভর করবে মুদ্রাস্ফীতির হারের উপর। ভবিষ্যতে বিভিন্ন বছরে বিভিন্ন হারে মুদ্রাস্ফীতি হতে পারে। তবে সাধারনভাবে সম্ভাব্য হার সম্পর্কে অনুমান করা হয় এবং তার ভিত্তিতে ডিসকাউন্টিং করা হয়। শেয়ার বাজারে টাকা খাটানোর ঝুঁকি থাকে।
তাই মুদ্রাস্ফীতির সম্ভাব্য হারের সাথে ঝুঁকি প্রিমিয়াম যোগ করে ডিসকাউন্ট হার ধরা যায়। তবে কতটা প্রিমিয়াম যোগ করা হবে তা মূলতঃ নির্ভর করবে বিনিয়োগকারীর ঝুঁকি গ্রহণ মানসিকতার উপর। তিনি যদি অধিকতর রক্ষণশীল বা সতর্ক টাইপের হন তবে ডিসকাউন্ট হার বাড়িয়ে ধরবেন। একটা উদাহরণ দেয়া যাক। বাংলাদেশ ব্যাংকের ট্রেজারী বন্ডে বা সরকারের সঞ্চয়প্ত্রে বিনিয়োগ করলে বর্তমানে আনুমানিক ৮% লাভ পাওয়া যায়। এরুপ বিনিয়োগে সরকার গ্যারান্টর থাকে বিধায় সেখানে কোন ঝুঁকি নেই। এখন শেয়ার মার্কেটে টাকা খাটাতে বিনিয়োগকারী নিশ্চয়ই ট্রেজারী বন্ডের চেয়ে বেশী রিটার্ণ প্রত্যাশা করবেন। ধরা যাক, সে অন্তত ২% অতিরিক্ত রিটার্ণ প্রত্যাশা করে। সেক্ষেত্রে ডিসকাউন্ট হার হবে ১০%। আবার অধিক রক্ষণশীল কেউ অন্তত ৫% বেশী রিটার্ণ আশা করতে পারে। সেক্ষেত্রে ডিসকাউন্ট হার হবে ১৩%। এখন ডিসকাউন্ট হার ১০% হলে কোন কোম্পানীর ভবিষ্যত সুনির্দিষ্ট আয়ের বর্তমান ভ্যালু যা হবে ডিসকাউন্ট হার ১৩% ধরা হলে একই পরিমাণ ভবিষ্যত আয়ের বর্তমান মূল্য তার থেকে কম হবে।
অন্তর্নিহিত মূল্য ক্যালকুলেশনের বিদ্যমান জনপ্রিয় পদ্ধতি বা মেথডগুলোর মধ্যে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য হচ্ছে DCF মেথড। কারণ সে পদ্ধতিতে কোম্পানীর ফ্রি ক্যাশ ফ্লো’র ভিত্তিতে অন্তর্নিহিত মূল্য হিসাব করা হয়। আর ফ্রি ক্যাশ ফ্লো হচ্ছে শেয়ারহোল্ডার তথা মালিকদের প্রকৃত আয়। ব্যবসা পরিচালনায় সব ধরনের খরচ বহন করার পর যা অবশিষ্ট থাকছে সেটাই ফ্রি ক্যাশ ফ্লো। আর্থিক প্রতিবেদনের Statement on Cash Flows অংশের ৩টি অংশের ১ম অংশ অর্থাৎ Cash Flows from Operating Activities থেকে ব্যবসা ঠিক রাখতে প্রয়োজনীয় মূল্ধনী ব্যয় (Capital Expenditure) যেটা Investing Activities অংশে দেয়া থাকে তা বাদ দিলে ফ্রি ক্যাশ ফ্লো পাওয়া যায়। Investing Activities অংশে প্লান্ট, ইক্যুইপমেন্ট এন্ড এস্টাব্লিশমেন্ট (PPE) বাবদ যে ব্যয় দেখানো থাকে সেটাই মূল্ধনী ব্যয়। প্রসংগত উল্লেখ্য যে, উপরে বর্ণিত পদ্ধতি ছাড়াও অন্যভাবে ফ্রি ক্যাশ ফ্লো বের করা যায়। তবে DCF মেথড বা পদ্ধতিই সবচেয়ে সহজ।
কোম্পানীর বর্তমান ফ্রি ক্যাশ ফ্লো’র ভিত্তিতে ভবিষ্যতে প্রাপ্তব্য মোট ক্যাশ ফ্লো’কে ডিসকাউন্ট করে অন্তর্নিহিত মূল্য বের করতে হয়। সমস্যা হলো কোম্পানীর মূল্ধনী ব্যয় সব বছর একই রকম থাকে না; আবার ক্যাশ ইনফ্লো আউটফ্লো’তেও ব্যাপক পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। সে কারণে যৌক্তিক ও নির্ভরযোগ্য ফ্রি ক্যাশ ফ্লো পাওয়ার লক্ষ্যে বিগত বেশ কয়েক বছরের ক্যাশ ফ্লো হিসাব করে তার গড় ব্যবহার করা হয়। আর স্থিতিশীল যে কোন ব্যবসায় সাধারনভাবে একটা বার্ষিক আয়ে প্রবৃদ্ধি ঘটে থাকে। যে হারে আয় প্রবৃদ্ধি ঘটছে সে হারে ভবিষ্যতে ফ্রি ক্যাশ ফ্লো বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা যায়। নীট আয়ের প্রবৃদ্ধি দিয়ে ফ্রি ক্যাশ ফ্লো’র গড়কে গুণ করলে আগামী বছরগুলোর ক্যাশ ফ্লো পাওয়া যায়। তবে ভবিষ্যতের প্রাপ্ত টাকার মান বর্তমানের চেয়ে কম বিধায় তাকে ডিসকাউন্টিং ফর্ম্যুলার মাধ্যমে বর্তমান মূল্যে নিয়ে আসা হয়। আর সেটাই অন্তর্নিহিত মূল্য।
উন্নত দেশগুলোতে স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভূক্ত সকল কোম্পানীর বিগত অনেক বছরের ফ্রি ক্যাশ ফ্লো’সহ সব ধরনের আর্থিক ড্যাটা বা তথ্য বিভিন্ন ওয়েবসাইটে ডাউনলোড করা থাকে। যে কেউ বিনা খরচে সেসব তথ্য ঐসব ওয়েবসাইট ব্রাউজ করে অতি সহজেই তা পেতে পারে। যেমন, যুক্ত্ররাষ্ট্রের যে কোন কোম্পানীর ড্যাটা Morning Star, MSN Money, Yahoo Finance, Google এর মাধ্যমে মূহুর্তেই পাওয়া যায়। এমনকি বিভিন্ন বিশ্লেষকের দৃষ্টিতে আগামী বছরগুলোতে কোম্পানীর আয়ের প্রবৃদ্ধি কি হারে বাড়তে পারে তাও সেসব ওয়েবসাইটে দেয়া থাকে - যা ব্যবহার করে অন্তর্নিহিত মূল্য সহজেই ক্যাল্কুলেট করা যায়। কিন্ত আমাদের দেশে তালিকাভূক্ত কোম্পানীর সব ঐতিহাসিক ড্যাটা সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেই। তদুপরি, ফ্রি ক্যাশ ফ্লো’র তথ্যাদি কোম্পানীর আর্থিক প্রতিবেদনে সন্নিবেশিত করার জন্য আইনগত কোন বাধ্যবাধকতাও নেই। তাই ফ্রি ক্যাশ ফ্লো’র তথ্য পেতে বিনিয়োগকারীকেই কষ্ট করতে হবে। কোম্পানীর বিভিন্ন বছরের বার্ষিক রিপোর্টের অডিটেড ফাইন্যান্সিয়াল স্টেট্মেন্টের ক্যাশ ফ্লো অংশের পরিমাণ থেকে মূল্ধনী ব্যয় বাদ দিয়ে বছরভিত্তিক ফ্রি ক্যাশ ফ্লো হিসাব করে তার গড় বের করতে হবে। সেই গড় ফ্রি ক্যাশ ফ্লো’কে ভিত্তি হিসাবে ধরতে হবে। তারপর বিগত বছরগুলোতে যে হারে নীট আয়ের প্রবৃদ্ধি হয়েছে তা বের করতে হবে। এরুপ প্রবৃদ্ধিকে বলা হয় Compound Annual Growth Rate বা CAGR। ভিত্তি বছর এবং সর্বশেষ বছরের আয়কে কম্পিউটারের ক্যাল্কুলেটরে ইনপুট হিসাবে ব্যবহার করে সহজেই CAGR বের করা যায়। ভিত্তি বছর ও সর্বশেষ বছরের ব্যবধান যত বেশী হবে তা ততই নির্ভরযোগ্য হবে। পরিশেষে, গড় ফ্রি ক্যাশ ফ্লো এর সাথে CAGR গুণিতক ব্যবহার করে ভবিষ্যত ক্যাশ ফ্লো’র সমষ্টি বের করে ডিসকাউন্ট হার দিয়ে ভাগ করলে ফার্মের মোট ক্যাশ ফ্লো পাওয়া যাবে। তাকে কোম্পানীর শেয়ারসংখ্যা দিয়ে ভাগ করে শেয়ারপ্রতি অন্তর্নিহিত মূল্য পাওয়া যাবে।
বিশ্বখ্যাত ইনভেষ্টর ওয়ারেন বাফেট এর বিনিয়োগ মূলমন্ত্রই হচ্ছে ব্যবসায়ের অন্তর্নিহিত মূল্য বের করে তা বাজারমূল্যের যথেষ্ট নীচে থাকলেই শুধু সেখানে বিনিয়োগ করে তা দীর্ঘমেয়াদের জন্য ধরে রাখা। জনাব বাফেটের নামে পরিচালিত একটি ওয়েবসাইট (https://www.buffettsbooks.com/how-to-invest-in-stocks/advanced-course/lesson-35/) এ রক্ষিত DCF ক্যাল্কুলেটর ব্যবহার করে শেয়ারের অন্তর্নিহিত মূল্য সহজেই বের করা যায়। সে ক্যাল্কুলেটরটি ব্যবহার করতে যে সকল ইনপুট দিতে হয় তা হলো- (১) কোম্পানীর মোট ফ্রি ক্যাশ ফ্লো’র পরিমাণ। বিগত কয়েক বছরের গড় ফ্রি ক্যাশ ফ্লো ব্যবহার করাই শ্রেয়।
(২) কোম্পানীর নীট আয় প্রবৃদ্ধি তথা CAGR। এটা বের করতে Rule One Investing এর https://www.ruleoneinvesting.com/equity-growth-rate-calculator/ ওয়েবসাইটে রক্ষিত গ্রোথ ক্যাল্কুলেটর ব্যবহার করা যায়।
(৩) বিদ্যমান নীট আয়ের প্রবৃদ্ধি কত বছর হতে পারে সে সংখ্যা। এটি কোম্পানীর বয়সকাল, সেক্টর, মার্কেট শেয়ার, বাজারে নতুন প্রতিদ্বন্ধী কোম্পানী আসার সম্ভাবনা, ইত্যাদি ফ্যাক্টর বিবেচনায় অনুমান করে বসাতে হবে। যদি তুলনামূলক বেশী বছর ধরা হয় তবে অন্তর্নিহিত মূল্য বেশী হবে।
(৪) স্বল্পমেয়াদ শেষের বছরগুলোতে কোম্পানীর নীট আয় প্রবৃদ্ধি কত হারে বাড়বে সে সংখ্যা। এটিও কোম্পানীর বয়সকাল, সেক্টর, মার্কেট শেয়ার, বাজারে নতুন প্রতিদ্বন্ধী কোম্পানী আসার সম্ভাবনা, ইত্যাদি ফ্যাক্টর বিবেচনায় অনুমান করে বসাতে হবে। সাধারনতঃ যে কোন কোম্পানীর আয় প্রবৃদ্ধি প্রথমদিকে বেশী থাকে এবং আস্তে আস্তে তা কমতে থাকে। তাই এ হার স্বল্পমেয়াদের আয় প্রবৃদ্ধির চেয়ে কম হয়।
(৫) ডিসকাউন্ট হার। বিনিয়োগকারীর ঝুঁকি গ্রহণ করার মানসিকতা, বিকল্প ঝুঁকিবিহীন বিনিয়োগের রিটার্ণ, মুদ্রাস্ফীতির হার, ইত্যাদি বিবেচনায় নিয়ে ডিসকাউন্ট হারবসাতে হবে।
(৬) কোম্পানীর মোট শেয়ারসংখ্যা।
(৭) শেয়ারটির বাজারমূল্য। এটি না বসালেও অন্তর্নিহিত মূল্য পাওয়া যাবে। তবে বাজারমূল্যের তথ্য দিলে আজকের দিনে শেয়ারটি কিনলে আগামীতে প্রাপ্ত বার্ষিক রিটার্ণ কত হবে তা পাওয়া যাবে।
অন্তর্নিহিত মূল্য ক্যালকুলেশন কোন কোম্পানীর ভবিষ্যত অবস্থান সম্পর্কে অতি স্বচ্ছ ধারনা প্রদান করে। বিনিয়োগকারী ডিসকাউন্ট হার কম-বেশী করে কিংবা স্বল্পমেয়াদকাল (যে সময়ে বর্তমান আয়ের প্রবৃদ্ধি বজায় থাকবে) বাড়িয়ে বা কমিয়ে অন্তর্নিহিত মূল্যে কিরুপ পরিবর্তন হয় তা পর্যবেক্ষন করতে পারেন। স্বল্পমেয়াদ শেষ হওয়ার পর কোম্পানীর ভবিষ্যত জীবদ্দশায় কিরুপ প্রবৃদ্ধি হতে পারে সে অনুমানও কম বেশি করে দেখ্তে পারেন অন্তর্নিহিত মূল্যে কিরুপ পরিবর্তন হচ্ছে। দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগকারীদের জন্য সম্ভাবনাময় সব শেয়ারের অন্তর্নিহিত মূল্য হিসাব করা খুবই কার্যকরী একটি স্ট্র্যাটেজী। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এটি ক্যাল্কুলেশনে প্রয়োজনীয় তথ্য পেতে বিনিয়োগকারীকে পরিশ্রম করতে হয় বৈকি। তবে সে পরিশ্রম ফলদায়ক হবে বলেই আশা করা যায়।
অত্র নিবন্ধের লেখক কর্তৃক DCF মেথড ব্যবহার করে বাংলাদেশের বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য কোম্পানীর অন্তর্নিহিত মূল্য বের করা হয়েছে। সে ক্যাল্কুলেশন মোতাবেক স্কয়ার ফার্মা, জিপি, সামিট পাওয়ার, মেঘনা পেট্রোলিয়াম, ডিবিএইচ, এমজেএলবিডি এবং সেইসাথে অধিকাংশ ব্যাংকের অন্তর্নিহিত মূল্য বর্তমান বাজারদরের চেয়ে বেশ বেশী বলে দেখা যায়। অর্থাৎ সেসব কোম্পানীর শেয়ার দীর্ঘমেয়াদের বিবেচনায় আন্ডারভ্যালুড। ফলে সেসব শেয়ারে বিনিয়োগ করলে অন্ততঃ দীর্ঘমেয়াদে লস খাওয়ার কোন ঝুঁকি নেই, যদি না নিজস্ব কোন কারণে আগামীতে কোম্পানীর প্রতিযোগিতা সক্ষমতা হারিয়ে যায়।
শফিকুল ইসলাম
অতিরিক্ত সচিব (অবঃ)
Email: msislam201386@gmail.com