পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের জন্য আরও একটি সুখবর দিলো নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এই সুখবর হলো মার্জিন ঋণের সর্বোচ্চ সুদ হার হবে ১২ শতাংশ। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) ৭৫৭ তম সভায় এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিএসইসি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বিএসইসি সূত্র মতে, স্টক ব্রোকার এবং মার্চেন্ট ব্যাংক প্রদত্ত মার্জিন ঋণ প্রদানের বিপরীতে গ্রাহকের নিকট থেকে কস্ট অব ফান্ডের সহিত অতিরিক্ত সর্বোচ্চ ৩ শতাংশ স্প্রেড আদায় করিতে পারবে। কিন্তু কোনক্রমেই মার্জিনের সুদ হার ১২ শতাংশের বেশি হবে না।
মার্জিন অ্যাকাউন্ট: মার্জিন অ্যাকাউন্ট হচ্ছে একটি ব্রোকারেজ অ্যাকাউন্ট যা কাস্টমারকে সিকিউরিটি ক্রয়ের জন্য লিভারেজ ব্যবহারের সুযোগ প্রদান করে থাকে। এরমানে হচ্ছে যে অ্যাকাউন্ট হোল্ডার বিনিয়োগ করার জন্য ব্রোকারের কাছ থেকে ঋণ নিতে পারবে। মার্জিনের নিয়ম সরকারিভাবে নিয়ন্ত্রিত, কিন্তু ব্রোকার এবং ডিলারের মধ্যে আবশ্যক মার্জিন এবং ইন্টারেস্টে পার্থক্য হতে পারে।
মার্জিন ঋণের নির্দেশনা
গত ২১ সেপ্টেম্বর বিএসইসি মার্জিন ঋণের নির্দেশনায় বলেছে, ডিএসই-এক্স সূচক ৪ হাজারের নিচে থাকাকালীন ব্রোকারেজ হাউজ ও মার্চেন্ট ব্যাংক গ্রাহকদের সর্বোচ্চ ১:১ হারে মার্জিন ঋণ দিতে পারবে। তবে ২৮ সেপ্টেম্বরের নতুন নির্দেশনায় এই অনুপাত পরিবর্তন করে ১:০.৭৫ করা হয়েছে। অর্থাৎ গ্রাহকের নিজস্ব ১ টাকার বিনিয়োগের বিপরীতে সর্বোচ্চ ০.৭৫ টাকা মার্জিন ঋণ দেওয়া যাবে।
এদিকে নতুন নির্দেশনায় ৪০০১-৭০০০ পর্যন্ত সূচকের ক্ষেত্রে ১:০.৫০ হারে এবং ৭০০০ এর উপরে সূচকের ক্ষেত্রে ১:০.২৫ হারে মার্জিন ঋণ দিতে পারবে বলে বলা হয়েছে।
বিএসইসির এই নতুন নির্দেশনা আগামী বছরের ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হয়। এর আগের নির্দেশনায় ৪০০১-৫০০০ পর্যন্ত সূচকের ক্ষেত্রে ১:০.৭৫ হারে, ৫০০১-৬০০০ পর্যন্ত সূচকের ক্ষেত্রে ১:০.৫০ হারে এবং ৬০০০ এর উপরে সূচকের ক্ষেত্রে ১:০.২৫ হারে মার্জিন ঋণ দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। যা ১ অক্টোবর থেকে কার্যকর হওয়ার কথা ছিল।
উল্লেখ্য, বর্তমানে মার্জিন ঋণ প্রদানের সর্বোচ্চ হার ১:০.৫০ এবং সবক্ষেত্রে একই। অর্থাৎ গ্রাহকের নিজস্ব ১ টাকার বিনিয়োগের বিপরীতে সর্বোচ্চ ৫০ পয়সা মার্জিন ঋণ দেওয়া যায়।
মার্জিন অ্যাকাউন্টের ব্যাখ্যা
বেশিরভাগ ব্রোকার মার্জিন অ্যাকাউন্ট সেটআপ করার সুযোগ প্রদান করে থাকে এবং আপনাকে অনেক ক্রয়ক্ষমতা প্রদান করতে পারে যার মাধ্যমে ট্রেডারের পক্ষ হতে খুব বেশি অর্থ বিনিয়োগের আবশ্যকতা থাকে না।
বিষয়টি এমন যে একজন বিনিয়োগকারী ৫০ ইউএস ডলার (ইউএসডি) দিয়ে স্টকের শেয়ার ক্রয় করলেন, যারফলে স্টকের মার্কেট প্রাইস ৭৫ ইউএসডিতে গেল। এরজন্য তিনি যদি নগদ অর্থ প্রদান করে থাকেন, তাহলে তার বিনিয়োগের রিটার্ন হচ্ছে ৫০ শতাংশ, যা ভালো পরিমানের লাভ। কিন্তু, তিনি যদি ২৫ ইউএসডি নগদ অর্থ প্রদান করে থাকেন এবং ২৫ ইউএসডি অর্থ মার্জিন হিসেবে ধার নিয়ে থাকেন, তাহলে তার রিটার্ন হচ্ছে ১০০ শতাংশ। তাকে এখনো ধার করা অর্থ ফেরত দিতে হবে, কিন্তু কয়েকটি ক্রয়ের মাধ্যমে ধারকৃত মার্জিনকে ছড়িয়ে, তিনি তার লাভ বাড়াবেন, যতক্ষণ পর্যন্ত স্টকের প্রাইস উপরে যেতে থাকবে।
মার্জিন অ্যাকাউন্টের সুবিধা ও অসুবিধা: মার্জিন অ্যাকাউন্ট ব্রোকার কতৃক অফার করা হয় যার মাধ্যমে বিনিয়োগকারী সিকিউরিটি ক্রয়ের জন্য ঋণ নিতে পারেন। একজন বিনিয়োগকারী হয়তো ক্রয় মূল্যের ৫০ শতাংশ ব্যবহার করতে পারেন এবং বাকিটা ব্রোকারের কাছ থেকে ধার নিতে পারেন। ঋণের অধিকারের জন্য ব্রোকার বিনিয়োগকারীর কাছ থেকে ইন্টেরেস্ট ধার্য করতে পারে এবং সিকিউরিটিকে জামানত হিসেবে রাখতে পারে। কিন্তু, ভোলাটাইল মার্কেটে ব্রোকার আবার অ্যাকাউন্টের ভ্যালু ক্লোজের সময় গণনা করতে পারে এবং তারপর পরবর্তী দিনগুলোতে রিয়েল-টাইমের ভিত্তিতে কল গণনা করতে পারে। সঠিক পরিস্থিতিতে মার্জিন ঋণ অনেক বড় মূল্যবান ট্যুল হতে পারে, কিন্তু সতর্ক থাকবেন যে এটা আপনার লাভ ও ক্ষতি দুটোই বাড়িয়ে দিতে পারে।
যখন আপনার অ্যাকাউন্টের ইক্যুইটি কমে যাবে এবং ব্রোকার নির্ধারিত রক্ষণাবেক্ষণ মার্জিন সীমার নিচে চলে যাবে, তাদের ‘মার্জিন কল’ জারি করার অধিকার থাকে। মার্জিন কল বলে যে আপনার ব্রোকার হয় আপনার পজিশন আপনার সম্মতি ছাড়াই সেল করে দিতে পারে যাতে তারা তাদের বিনিয়োগের ঝুঁকি ফেরত পেতে পারে। অথবা তারা আপনাকে আপনার অ্যাকাউন্টে আরও মূলধন বিনিয়োগ করতে বলতে পারে যাতে আপনি আপনার রক্ষণাবেক্ষণ মার্জিনের সীমার ওপর ফেরত আসতে পারেন।
মার্জিনে বাই করাটা সাধারণত শর্ট-টার্মে বিনিয়োগের জন্য ব্যবহার করা হয় ইন্টারেস্ট চার্জের কারণে। মার্জিন ভালোভাবে কাজ করে যখন বিনিয়োগের মূল্য বাড়তে থাকে, কিন্তু যখন মূল্য কমতে থাকে তখন অসমর্থ হতে পারে।
আইডিএলসি ফাইন্যান্সের ৫০০ কোটি টাকার বন্ড অনুমোদন
পুঁজিবাজারের সব খবর পেতে জয়েন করুন