সমকামিতার সমর্থকেরা সমকামী আচরণকে বিজ্ঞান দিয়ে শুদ্ধতা দেয়ার চেষ্টা করেন। তাঁরা বলতে চেষ্টা করেন সমকামী আচরণ বায়োলজিক্যালি ডিটারমাইন্ড বা বায়োলজিক্যালি ইমপ্রিন্টেড।এক সময় চেষ্টাও করা হয়েছিল এটা প্রমাণের যে সমকামিতার জন্য জীন দায়ী। “গে জীন” খোঁজার সেই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলেও বিজ্ঞানের দোহাই দিয়ে এই আজাচারকে বৈধতা দেয়ার একটি প্রকল্প চালু আছে। আমার আগের লেখাগুলোতে দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে সমকামী আচরণকে উৎসাহিত করার পিছনে আছে রাজনীতি। সামাজিক প্রয়োজন থেকে যৌনতাকে আলাদা করে শুধু সেই যৌনতাকে একটি বৈষয়িক ভিত্তি দিয়ে সেটার স্বার্থপর চরিতার্থতার দিকে কিছু মানুষকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। সমকামিতার দর্শন পুঁজিবাদের স্বার্থপর জীবন দর্শনের সাথে সাযুজ্য পূর্ণ। পুঁজিবাদের সমস্ত মিডিয়া, তার সমস্ত গ্লামার নিয়ে যখন কোন মতাদর্শের পিছনে দাড়ায় তখন সমাজের একটা বড় অংশ সেই মতাদর্শকে সমর্থন করাটাকেই পবিত্র এবং প্রগতিশীল কর্তব্য বলে বিবেচনা করে। ঠিক একই ভাবে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অনন্ত যুদ্ধ বাংলাদেশের প্রগতিশীলদের বৈধতা পেয়ে যায়। বরং এর বিপরীতে যারা দাড়ায় তাঁদেরকেই প্রতিক্রিয়াশীল তকমা দিয়ে খারিজ করে দেয়ার চেষ্টা করা হয়। পুঁজিবাদ তার দর্শনকে যখন প্রগতিশীলতার পোশাক পরিয়ে সামনে নিয়ে আসে তখন সেটাকে উন্মোচিত করে দেয়াটাই বিপ্লবী কর্তব্য।
সমকামিতাকে এমনভাবে উপস্থাপন করা হয় যেন এই সমকামী আচরণ গায়ের রঙ বা জাতি পরিচয়ের মত অপরিবর্তনীয় বিষয়। এই সমকামিতা কতখানি স্বাভাবিক সেটা প্রমাণের জন্য বানানো পরিসংখ্যান দিয়ে দাবী করা হয় ১০% মানুষ প্রকৃতিগত ভাবেই সমকামী। এই পরিসংখ্যান ব্যবহার করার সময় উৎস হিসেবে নির্দেশ করা হয় কিনসের এক প্রাগৈতিহাসিক নিরীক্ষার যেই নিরিক্ষা পরবর্তীতে পদ্ধতিগতভাবে ভ্রান্ত প্রমানিত হয়েছে। কিনসের নিরিক্ষা ছিল নন র্যান্ডমাইজড। মুক্তমনারা (প্রকৃত অর্থে নয়, বাংলাদেশে যারা নিজেদের মুক্তমনা বলে দাবী করে তাঁদের বোঝানো হচ্ছে) নিজেদের বিজ্ঞান মনস্ক দাবী করলেও এই অবৈজ্ঞানিক নিরিক্ষাকে বড় সমাদর করেন। কারণ এই নিরিক্ষা তাঁদের মতাদর্শকে সমর্থন করে। ফলে দেখা যাচ্ছে “বিজ্ঞানমনস্কতার” দাবী শুধুমাত্র একটি কম্পিটিটিভ এডভান্টেজ নেবার জন্য একটি কৌশলগত অবস্থান। সমকামিতার ব্যপকতা বা প্রিভালেন্স নিয়ে ২০১০ সাল পর্যন্ত ৩০ টার বেশী নিয়ন্ত্রিত এবং নিয়মতান্ত্রিক গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে এবং সেখানে দেখা যাচ্ছে বাইসেক্সুয়াল সহ সমকামী আচরণের ব্যপকতা মাত্র ২-৩%। নিচের ফিগারে দেখুন।
এই পরিসংখ্যান গুলো জরুরী, কেননা প্রথমে এই পরিসংখ্যানের সঙ্গে বৈজ্ঞানিক ডেটা মিলিয়ে দেখতে হবে সমকামিতা কোন জেনেটিক কারণে ঘটে কিনা? এর পরে বিজ্ঞান দিয়েই পর্যালোচনা করা হবে সমকামিতা কোন অপরিবর্তনীয় যৌন আচরন কিনা? যদি সেটা অপরিবর্তনীয় যৌন আচরন না হয়, যদি সেটা জেনেটিক না হয় এবং সেটা যদি মুলত পরিবেশ গত কারনেই উদ্ভুত হয়ে থাকে তবে সেই যৌন আচরণকে সামাজিক স্বীকৃতি দেয়াটা নৈতিক কিনা সেই আলোচনাও করা হবে।
সমকামিতার প্রচারে যেই অপবিজ্ঞান ব্যবহৃত হয়েছে তা নিয়ে বিশ বছর ধরে সমকামিতার বিষয়ে প্রকাশিত প্রায় ১০ হাজার গবেষণা পত্র ঘেঁটে এন ই হোয়াইটহেড এবং বি কে হোয়াইট হেড প্রকাশ করেছেন এক চমৎকার বই মাই জীন মেইড মি ডু ইট!
সেই বই থেকে প্রাসঙ্গিক অংশ গুলো নিয়ে তৈরি এই লেখায় সমকামিতা নিয়ে বিজ্ঞানের নামে অপবিজ্ঞানের চর্চার বিষয়গুলি উদ্ঘাটন করা হবে।
চিত্র গুলোতে যে প্রাসঙ্গিক তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে সেগুলোর রেফারেন্স নিচে উল্লেখ করা হলো।
চলবে...।