তিস্তা ব্যারাজ থেকে শুরু করে তিস্তার বিস্তীর্ণ এলাকা এবং সেচ প্রকল্পের নালায় এই মৌসুমে পানি না থাকায় মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন তিস্তাপাড়ের হাজারো জেলে। পরিবার নিয়ে খেয়ে না খেয়ে মানবেতর দিন পার করছেন তারা। সেইসঙ্গে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন ৬৩ চরের হাজারো খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ।
‘নদীতে পানি থাকলে দিনকাল হামার ভালই যাইত। তিন মাস তিস্তা নদীত পানি না থাকায় মাছও পাই না। বর্তমান হামা পরিবার নিয়া খুব কষ্টে আছি।’
তিস্তা নদীতে মাছ না পাওয়ায় খালি হাতে বাড়ি ফেরার সময় এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন জেলে মজিদুল ইসলাম (৪৫)।
জানা গেছে, লালমনিরহাটের ৫টি উপজেলা তিস্তা, ধরলা, সানিয়াজানসহ মোট ১৩টি নদীবেষ্টিত এলাকার হাজারও জেলে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। ভারতের একতরফা পানি প্রত্যাহারে ফলে প্রতি বছর তিস্তাসহ কয়েকটি নদী পানিশূন্য হয়ে পড়ে। প্রতিবছর ৩ থেকে ৪ মাস নদীতে পানি না থাকায় এসব জেলে মাছ ধরতে না পেরে পরিবার নিয়ে কষ্টে দিন কাটান।
তিনমাস পরিবার নিয়ে বেঁচে থাকার জন্য স্থানীয় দাদন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা সুদ নিয়ে জীবন-যাপন করেন। অনেকে দিনমজুরী, কেউবা জাল সেলাই করে উপার্জনের চেষ্টা করেন।
লালমনিরহাটের তিস্তা ও ধরলা নদীতে পানি সংকটে বিলুপ্তির পথে ঐতিহ্যবাহী বৈরালি মাছ। ব্যাপক চাহিদা থাকলেও সুস্বাদু এই মাছটি জেলেদের জালে আর আগের মতো ধরা পড়ে না। যেটুকু পাওয়া যায় বাজারে তা বিক্রি হয় অত্যধিক চড়া মূল্যে।
তিস্তা পাড়ের কিছু জেলে সারাদিন দুই এক কেজি করে ছোট বড় বৈরালি মাছ ধরছেন। সেই বৈরালি মাছ মুহূর্তেই তিস্তা পাড়ে ৪শ থেকে ৫শ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন। তিস্তায় ভরপুর পানি থাকলে প্রচুর পরিমাণে বৈরালি মাছ পাওয়া যেত।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, তিস্তা নদীর ব্যারাজের উজানের অংশে সামান্য পানি আছে। ব্যারাজের ভাটিতে পানি নেই। ব্যারাজসংলগ্ন এলাকায় বেশকিছু জায়গা জুড়ে চলছে মৃদু পানির স্রোত। সেই স্রোতেই মাছ ধরার চেষ্টা করছেন জেলেরা। তিস্তা ব্যারাজ এলাকায় মাছ ধরা নিষেধ থাকলেও কয়েকজন জেলে জীবিকা নির্বাহের জন্য ছোট নৌকা নিয়ে মাছ ধরার চেষ্টা করছেন।
স্থানীয় জেলে কুদ্দুস আলী বলেন, তিস্তা নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করা মানুষের সংখ্যা ৫০ হাজারের কম নয়। পানির মৌসুমে মাছ ধরে যে টাকা ইনকাম করি সেই টাকা এই তিনমাস ধরে খাই। অনেকে তাও পায় না।
দোয়ানী মৎস্য সমবায় সমিতির সভাপতি রজব আলী বলেন, বর্তমানে তিস্তা নদীতে পানি না থাকায় প্রায় পাঁচ শতাধিক জেলে বেকার হয়ে পড়েছেন। তিস্তায় চারমাস পানি না থাকায় বেশীর ভাগ জেলে কর্মহীন হয়ে পড়েন। তাই জেলেদের কথা চিন্তা করে সরকারি সাহায্য প্রদানের দাবি জানান তিনি।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, প্রতিবছরে এই সময় তিস্তা নদীতে এক হাজার থেকে বারোশ কিউসেক পানি থাকে। সাধারণত নদীতে পানি কম থাকায় মাছের পরিমাণও কম হয়।
লালমনিরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এএসএম রাসেল জানান, জেলার নদীগুলোতে তিন থেকে চারমাস পানি না থাকায় জেলেরা কষ্টে দিন কাটান। তাই জেলেদের তালিকা প্রণয়ন করে তাদের পূনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।