দীর্ঘ মন্দার পর ঘুরে দাঁড়াচ্ছে দেশের পুঁজিবাজার। নতুন কমিশনের কার্যক্রমে বাজারে ফিরছেন পুরোনো বিনিয়োগকারীরা। ফলে বাড়ছে সুচক, বাড়ছে লেনদেন। সক্রিয় হচ্ছে সাইড লাইনে থাকা পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীরা। তবে এই এগিয়ে যাওয়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) লেনদেন সম্পন্নের অর্ডার ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (ওএমএস) সফটওয়্যার। সমস্যা সমাধানে চলতি জানুয়ারি মাসের মধ্যে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা চেয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন(বিএসইসি)। আজ মঙ্গলবার বিএসইসির কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে কমিশন এই নির্দেশনা দিয়েছে।
বিএসইসিতে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কমিশনার অধ্যাপক ড. শামসুদ্দিন আহমেদ। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, নির্বাহী পরিচালক মো.সাইফুর রহমান,আশরাফুল ইসলাম, ডিএসইর পরিচালক অধ্যাপক ড. একেএম মাসুদ,শাকিল রিজভী, ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল মতিন পাটোয়ারী, প্রধান তথ্য প্রযুক্তি কর্মকর্তা জিয়াউল করিমসহ উভয় প্রতিষ্ঠানের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, আগামী ৩১ জানুয়ারির মধ্যে ডিএসইর আইটি সমস্যা সমাধানের জন্য একটি সুনিদৃষ্ট পরিকল্পনা জমা দেওয়ার জন্য বলেছে বিএসইসি। এই পরিকল্পনায় অবশ্যই কে কোন কাজ করবে, কত দিনের মধ্যে করবে তার সুনিদৃষ্ট বিষয় উল্লেখ করার জন্য বলা হয়েছে। অন্যদিকে প্রতি মাসের শেষ কার্যদিবসে কাজের অগ্রগতি কমিশনকে জানাতে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে ডিএসইর পরিচালক অধ্যাপক ড. একেএম মাসুদ সানবিডিকে বলেন, পুঁজিবাজারের উন্নয়নে আইটির সমস্যা সমাধানের পথ খুজতে আজকে বিএসইসি ও ডিএসইর বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। সমস্যা সমাধানে অনেক সুন্দর আলাপ হয়েছে। যাতে সবাই মিলে একটি উন্নত পুঁজিবাজার গড়ে তুলতে পারি।
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কমিশনার অধ্যাপক ড. শামসুদ্দিন আহমেদ সানবিডিকে বলেন, লেনদেনের উন্নতির ক্ষেত্রে ডিএসইস আইটি একটি বড় বাধা। কয়েকদিন পর পর সমস্যা দেখা দেয়। এর স্থায়ী সমাধান কিভাবে করা যায়, তার জন্য আজকে ডিএসইস সাথে বৈঠক করেছি।
তিনি বলেন, সমস্যা সমাধানে একটি সুনিদৃষ্ট পরিকল্পনা চলতি মাসের মধ্যে দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। একই সাথে প্রতি মাসের শেষ কার্যদিবসে কাজের অগ্রগতি জানানোর জন্য বলা হয়েছে।
ডিএসইর আইটি সমস্যা সমাধানের জন্যে তদন্ত কমিটি করে বিএসইসি। পরে তদন্তের বিষয়ে ডিএসইকে জানাতে ২০২০ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর বিএসইসির কনফারেন্স হলে তদন্ত কমিটি প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে সমস্যা ও সমাধানের পথ দেখায়।
এ দিন ডিএসইর আইটিকে কি উপায়ে সমস্যার সমাধান করা যায় তা জানানোর জন্য স্টক এক্সচেঞ্জটির পর্ষদকে কমিশন ডেকে পাঠিয়েছিল। এতে ডিএসইর শেয়ারহোল্ডার পরিচালক একজন ব্যতিত অন্যরা অংশগ্রহণ করেন। এছাড়া কমিশনের চেয়ারম্যানসহ সব কমিশনার ও তদন্ত কমিটি তিন সদস্য অংশগ্রহণ করেন। তদন্ত কমিটি ডিএসইর আইটি বিভাগে বিভিন্ন সমস্যা প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে তুলে ধরেন। এর আলোকে তারা বেশ কিছু সুপারিশ করেছেন।
প্রেজেন্টেশনে ডিএসইর ওএমএস থেকে শুরু করে আইটি বিভাগের অদক্ষ জনবলসহ বিভিন্ন সমস্যার কথা বলা হয়। যা দ্রুত ডিএসইকে সমাধানের জন্য কমিশন নির্দেশ দিয়েছে।
তদন্ত কমিটি জানায়, নতুন সফটওয়্যার চালুতে লেনদেনে সমস্যার ক্ষেত্রে ইচ্ছাকৃত কোন ভুল বা অনিয়ম পাওয়া যায়নি। তবে ডিএসইর আইটি বিভাগের দূর্বলতা ও কাজ না বোঝার কারনে লেনদেনে ভোগান্তি হয়েছিল বলে জানায়। অন্যরা যা বুঝিয়ে দিয়ে যায়, ডিএসইর আইটি বিভাগ তাই করে। তবে কোন জালিয়াতি করেনি। জ্ঞান, অভিজ্ঞতা ও শিক্ষার ঘাটতির কারনে এমনটি হয়েছিল। তাদের চেয়ে অন্যলোকের জ্ঞান বেশি। তারা যা বুঝিয়ে দিয়ে যায়, ডিএসই বোকার মতো তাই করে।
এর আগে ২০২০ সালের ২৪ আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও সিএসই বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মো. মুস্তাফিজুর রহমানকে আহবায়ক করে গঠিত কমিটি ১৪ সেপ্টেম্বর বিএসইসিকে তদন্ত রিপোর্ট জমা দেয়। ওই কমিটির সদস্যরা হলেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও আইসিটি সেলের পরিচালক ড. মুহাম্মদ আসিফ হোসাইন খান, আইআইটি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শরিফুল ইসলাম, বিএসইসির পরিচালক রাজিব আহমেদ, উপ-পরিচালক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম ও সহকারি পরিচালক মো. শহিদুল ইসলাম।
এর আগে ২০২০ সালের ১৮ আগস্ট বিকালে আপডেট ভার্সনের ওয়েবসাইট উদ্বোধন করে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) চেয়ারম্যান ইউনুসুর রহমান। ওই উদ্বোধনের পরে ১৯ ও ২০ আগস্ট ভোগান্তিতে পড়েন বিনিয়োগকারীরা। আপডেট সাইটটি খুব ব্যবহারবান্ধব ও রেসপনসিভ হবে বলে জানানো হলেও ওই দুই দিন ভোগান্তিতে পড়েন তারা। যে কারনে রবিবার (২৩ আগস্ট) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দুঃখ প্রকাশ করে ডিএসই। তবে ওয়েবসাইট এখন স্বাভাবিক কাজ করছে।
পুঁজিবাজারের সব খবর পেতে জয়েন করুন