পাঞ্জাবের পাঠানকোট বিমানঘাঁটিতে হামলায় দেশটিতে নিষিদ্ধ জয়েশ-ই-মোহাম্মদ সংগঠনের জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা। হামলাকারীদের মোবাইল ফোনের কল শনাক্ত করে ভারতীয় গোয়েন্দারা এ বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছেন। হামলার আগে ৪ হামলাকারী পাকিস্তানের তাদের নিয়ন্ত্রকের সঙ্গে কথা বলেন বলে জানিয়েছেন ভারতের গোয়েন্দারা।
শুক্রবার গুরুদাসপুরের এসপির সঙ্গে অপহৃত ড্রাইভার রাজেশ ভার্মা শনিবার জানিয়েছেন, হামলাকারীদের প্রয়াত সহকর্মী আফজাল গুরুকে ফাঁসি দেয়ার প্রতিশোধ নিতেই পাঠানকোটে হামলা করা হয়েছে। ভারি অস্ত্রে সজ্জিত উর্দুভাষী হামলাকারী জিপিএস ব্যবহার করছিল।
হামলাকারীরা ‘তোমরা আফজাল গুরুকে হত্যা করেছ, আমরা এখন সেই হত্যার প্রতিশোধ নিচ্ছি’ বলে রাইফেলে বাট দিয়ে আঘাত করে বলে জানান তিনি। ২০০১ সালে ভারতের পার্লামেন্টে হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে ২০১৩ সালের ৯ ডিসেম্বর দিল্লির তিহার জেলে ফাঁসি দেয়া হয় আফজাল গুরুকে। হিন্দুস্তান টাইমসের খবরে বলা হয়েছে, জয়েশ-ই-মোহাম্মদ পাকিস্তানভিত্তিক সংগঠন। এর নেতৃত্বে রয়েছেন মাওলানা মাসুদ আজহার।
১৯৯৯ সালে ১৭৬ জন যাত্রীসহ ইন্ডিয়ান এয়ারলাইনের একটি বিমান অপহরণের পর জিম্মিদের বিনিময়ে মাসুদ আজহারসহ ভারতে গ্রেফতার হওয়া তিনজনকে মুক্ত করে নিয়ে যায় এ সংগঠন। এদিকে পাঞ্জাবের শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তা হিন্দুস্তান টাইমসকে বলেছেন, বিমানঘাঁটিতে হামলার আগ মুহূর্তে হামলাকারীরা পাকিস্তানের তাদের নিয়ন্ত্রকের সঙ্গে কথা বলে। এর সূত্র ধরেই হামলায় জয়েশ-ই-মোহাম্মদের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া গেছে।
সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে আত্মঘাতী হামলার পরিকল্পনা ছিল পাকিস্তানের এ সন্ত্রাসী সংগঠনের। পুলিশের দেয়া তথ্য অনুসারে, হামলাকারীরা গুরুদাসপুরের পুলিশ সুপার সালভিন্দর সিংকে শুক্রবার সকালে সরকারি গাড়িসহ অপহরণ করে। এ সময় আরও দুই ব্যক্তিকে অপহরণ করে হামলাকারীরা। হামলার লক্ষ্যবস্তুর কাছাকাছি পৌঁছাতে ও ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যেতে হামলাকারীরা এসপির সরকারি গাড়িটি ব্যবহার করে। গোয়েন্দা সংস্থার দাবি, হামলাকারীরা ছিনতাই করা মোবাইল দিয়ে পাকিস্তানে থাকা তাদের নিয়ন্ত্রণকারীর সঙ্গে কথা বলে।
এসপি ও আহত ব্যক্তির কাছ থেকে গোয়েন্দারা গোপন খবর পেয়েছিলেন ভারি অস্ত্রে সজ্জিত সন্ত্রাসীরা হামলা করতে পারে। এরপর পাঠানকোট বিমানঘাঁটিতে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থা জারি করা হয়েছিল। পাঠানকোটের বিমানঘাঁটিতে সন্ত্রাসী হামলার পর ভারতের রাজধানী দিল্লি ও জম্মু কাশ্মীরে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
একই সঙ্গে পাঞ্জাবজুড়েও সর্বোচ্চ সতর্কতা বহাল রয়েছে। এ হামলার নিন্দা জানিয়েছে পাকিস্তান। দেশটির পররাষ্ট্র দফতরের বিবৃতিতে বলা হয়, সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে ভারতসহ এ অঞ্চলের অন্যান্য দেশের সঙ্গে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে কাজ করতে পাকিস্তান অঙ্গীকারাবদ্ধ। পাঞ্জাবে ১৫ বছরে যত হামলা গত ছয় মাসের ব্যবধানে দ্বিতীয়বারের সন্ত্রাসী হামলা হল পাঞ্জাবে।
ভারতের পাঠানকোট বিমানঘাঁটিতে এ হামলায় ৫ সন্ত্রাসী ও ৩ বিমান সেনা নিহত হয়েছেন। ২০০১ থেকে পাঞ্জাবে যত হামলা হয়েছে তার বিবরণ জানিয়েছে টাইমস অব ইন্ডিয়া। ১ মার্চ ২০০১ : পাকিস্তান সীমান্তে পাঞ্জাবের গুরুদাসপুর জেলায় ১৩৫ গজ আন্ডারগ্রাউন্ড সুড়ঙ্গ পথ শনাক্ত করা হয়। ১ জানুয়ারি ২০০২ : হিমাচল সীমান্তবর্তী পাঞ্জাবের দামতালে অজ্ঞাত সন্ত্রাসী হামলায় ৩ সেনা সদস্য নিহত ও ৫ জন আহত হন।
৩১ জানুয়ারি ২০০২ : পাঞ্জাবের হোশিয়ারপুরে এক বোমা বিস্ফোরণে ২ জন নিহত ও ১২ জন আহত হন। ৩১ মার্চ ২০০২ : দারোহায় ফিরোজপুর-ধানবাদ এক্সপ্রেসে এক বোমা হামলায় ২ জন নিহত ও ২৮ জন আহত হন। ২৮ এপ্রিল ২০০৬ : জালন্দার বাসস্টেশনে ৪৫ যাত্রী নিয়ে চলমান একটি বাসে বোমা হামলায় অন্তত ৮ জন গুরুতর আহত হয়।
১৪ অক্টোবর ২০০৭ : লুধিয়ানার একটি সিনেমা হলে বোমা হামলায় ১০ বছরের শিশুসহ ৭ জন নিহত হন। আহত হন ৪০ জন। ২৭ জুলাই ২০১৫ : গুরুদাসপুরে থানায় তিন সন্ত্রাসী হামলা করলে পাঞ্জাব পুলিশ সুপারসহ অন্তত ৭ জন নিহত হন। পাল্টা অপারেশনে হামলাকারী সবাই নিহত হন। ২ জানুয়ারি ২০১৬ : পাঠানকোটের বিমানঘাঁটিতে চার সন্ত্রাসী হামলা চালালে বিমান বাহিনীর তিন জওয়ান ও পাঁচ জঙ্গি নিহত হয়।
সানবিডি/ঢাকা/এসএস