কাজিপুর উপজেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত যমুনা নদীর চরণভূমিতে কৃষি বিপ্লব ঘটিয়েছে চাষিরা। পশুপালনেও ঘটছে আশা জাগানিয়া সাফল্য। যার প্রভাব পড়তে শুরু করছে চরাঞ্চলের অর্থনীতি ও জীবনযাত্রায়।
এক দশক আগেও ব্রহ্মপুত্র নদের শাখা যমুনা নদীর ভাঙ্গন প্রবনতা ও অতিবন্যা ছিল কাজিপুরের কৃষকদের দুঃখের কারণ। সর্বনাশা নদীভাঙন গ্ৰামের পর গ্ৰাম গ্ৰাস করত। শত শত কৃষক পরিবার ভূমিহীন নিঃস্ব হয়ে অসহায় জীবন যাপন করেছে।
সম্প্রতি নদী তীররক্ষা প্রকল্পের সুবিধা এবং যমুনা নদীর পানি প্রবাহ কমে যাওয়ায় ফুটন্ত বালুচর আবাদের আওতায় আসছে। বালুচরে ফসল ফলানো দুরের কথা, ঘাসও জন্মাত না। কালক্রমে বন্যায় পলিমাটি জমে উর্বর আবাদি জমিতে পরিণত হচ্ছে।
দিগন্ত জুড়ে বিস্তীর্ণ বালুচরে রাসায়নিক সার ছাড়াই আবাদ হচ্ছে নানা প্রকারের ফসল। যে দিক চোখ যায় শুধু সবুজের সমারোহ।
গম, কাউন, ভুট্টা, বাদাম, মিষ্টি আলু, তিল, তিসি, পেঁয়াজ-রসুন, লাউ, গাজর, মরিচ, হলুদ, শসা, সিম, কুমড়াসহ ধান এবং নানা প্রকারের শাক-সবজি চাষ হচ্ছে চরে।
চরের বেলে দো-আঁশ মাটিতে ডাল জাতীয় ফসল মাসকালাই, মশুর, খেসারি ও ছোলার প্রচুর আবাদ হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রেজাউল করিম জানান, কাজিপুরে মোট আবাদি জমি ২৪ হাজার ৪ শত হেক্টর যার অধিকাংশই চরাঞ্চল। উঁচু নিচু ভেদে প্রতিবছর ৩ থেকে ৬ মাস চরভূমি পানিতে ডুবে থাকার কারনে পলিমাটি সমৃদ্ধ হয়, ফলে রাসায়নিক সার ছাড়াই সর্বোচ্চ ফলন পাওয়া যায়।
দুর্গম চরে বাথান (সমবায়ের ভিত্তিতে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে গরু মহিষ পালন) পদ্ধতিতে পশুপালন ব্যপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। বিশেষ করে পাশ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে গরু আমদানি বন্ধের পর থেকে। অধিকাংশ পরিবার গবাদি পশু পালনের সুফল পাচ্ছে। চরাঞ্চলের প্রতিটি কৃষকের বাড়িতে গোয়াল ঘরের চালায় লাউ, সিম, মিষ্টি কুমড়ার ফলন্ত গাছ অতিপরিচিত দৃশ্য।
ইরিগেশন সাপোর্ট প্রজেক্ট ফর এশিয়া অ্যান্ড নিয়ারইস্ট (ইসপান) প্রণীত এক রিপোর্ট থেকে জানা যায়, দেশের প্রধান পাঁচটি নদীতে চরের আয়তন প্রায় ১ হাজার ৭২২ দশমিক ৮৯ বর্গকিলোমিটার, যা দেশের মোট জমির ১ দশমিক ১৬ শতাংশ। ৯৮৭ দশমিক ৬০ বর্গকিলোমিটার চরভূমি রয়েছে উত্তরাঞ্চলের ব্রহ্মপুত্র-যমুনা অববাহিকায়।
চরে বাস করছে ৭ লাখ মানুষ। এর মধ্যে যমুনার চর এলাকায় প্রায় ৪ লাখ এবং শুধু কাজিপুর সিমানায় প্রায় পৌনে ২ লাখ। যমুনার বুকে জেগে ওঠা অসংখ্য ছোট-বড় চরে গড়ে উঠেছে জনবসতি। কৃষি ও পশুপালনই তাদের প্রধান পেশা।
কৃষি বিপ্লবের সাথে সাথে জীবন যাপন মানের উন্নতি দৃশ্যমান, ছন-বাশেঁর পরিবর্তে কৃষকের ঘরে ইট-বালু-সিমেন্ট এসেছে। কুপি-হারিকেনের জায়গা দখল করেছে আধুনিক সোলার সিস্টেম। অনেক কৃষক পরিবার সন্তানদের উচ্চ শিক্ষার খরচ বহন করে কৃষি জীবিকা নির্বাহ করে।
ঘাঁটি শুভগাছা গ্ৰামের শিক্ষক আমিনুল ইসলাম বলেন, চরে আবাদযোগ্য ফসল এবং চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে মাঠ পর্যায়ে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কৃষকদের আরো সচেতন করা হলে আরো বেগবান হবে চরের অর্থনীতি।