শীতের আমেজ ও শৈশবের স্মৃতি

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি আপডেট: ২০২১-০২-০২ ১৯:০১:০২


কালের অবগাহনে ডুব দিয়ে কুয়াশার আলপনা আঁকতে আঁকতে ঘটে শীতের আগমন। শীত যেনো আসে এক বিধবা নারীর বেশে। মনে হয় প্রকৃতি তার সমস্ত দুঃখ-কষ্ট এই জগৎ সংসার থেকে আড়াল করে রাখতে চায় কুয়াশার চাদর মুড়ি দিয়ে।

শীতের আগমনী বার্তা মানেই পিঠা-পুলি, খেজুররস, রঙবেরঙের শাক-সবজী আর সরষে ক্ষেতের হলুদ গালিচার চোখ ধাঁধানো দৃশ্য। সেই সাথে ঘুম ভাঙ্গলেও কম্বলের নিচে চুপিসারে শুয়ে থাকা তো আছেই। তবে গ্রামীণ ও শহুরে জীবনভেদে শীতের আমেজে রয়েছে ব্যাপক ফারাক। প্রকৃতপক্ষে নাগরিক কোলাহলের বাইরেই ঘটে শীত ঋতুর আত্মপ্রকাশ। শীতের আমেজ গ্রামীণ সাদাসিধে জীবনেই বেশি উপভোগ্য। আজও খড়কুটোর আগুনই সাধারণ মানুষের শীত নিবারণের অন্যতম অনুষঙ্গ।

এক কথায় বলতে গেলে শীত মানেই উৎসব। চারদিকে বিয়ের ধুম, ফ্যামিলি ট্যুর, ঘোরাঘুরি সবমিলিয়ে এক উৎসবমুখর পরিবেশ। অন্যসব ঋতুর চেয়ে শীতই আমার প্রিয় ঋতু। বাবার চাকরীর সুবাদে আমার শহরেই বড় হওয়া। তবে স্কুল ছুটি পড়তেই ছুটে যেতাম দাদু বাড়িতে। শৈশবের স্মৃতির মধ্যে দাদু বাড়ির গ্রামীণ পরিবেশে শীতের ছুটি কাটানোর দিনগুলোই আজ বেশি মনে পড়ে। আমরা চাচাতো/ফুফাতো ভাইবোনেরা একসাথে হলে তো আর কথাই নেই। চলতো হাজারো খুনশুটি।

বিকেল হলেই শুরু হতো আমাদের খড়কুটো জোগাড়ের কাজ। আর সন্ধ্যায় উঠোনে আগুন জ্বালিয়ে বৃত্তাকারে বসে চলতো আড্ডা। কনকনে শীতের সকালে লেপের ওম ছেড়ে উঠতে না চাইলেও মা-কাকীরা ঠিকই জোর করে উঠিয়ে দিতেন। অবশ্য তখন দাদুর হাতের মজার পিঠে আর খেজুর রসের পায়েসের লোভ সামলাতে না পেরে চটজলদি উঠেও পড়তাম। উঠোনে বসে রোদ পোহানো আর পিঠে-পুলি-পায়েস দিয়ে সকালের নাস্তা সারার মজাই আলাদা। এরপর দুপুরে নিজেদের বাগানের তাজা তাজা শীতকালীন সবজি রান্না হতে দেখলে দুপুরের খিদেটা দ্বিগুণ হয়ে যেত। এসব কিছুর ঠায় আজ কেবল স্মৃতির পাতায়।

সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে পরিবর্তন আসে সমস্ত জাগতিক নিয়মে। এখন আর আগের মত নিয়ম করে গ্রামীণ প্রকৃতির সাথে ভাব করা হয়ে উঠেনা। ব্যাস্ততার বেড়াজালে নাগরিক কোলাহলেই কাটছে জীবন।

ছবি: সিদরাত জাহান মনিরা

লেখিকা: খাদিজা খানম ঊর্মি, শিক্ষার্থী, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।