মনে সুখ থাকলে বনে যেতেই পারি
সান বিডি ডেস্ক প্রকাশ: ২০২১-০২-০৭ ১৬:৩৩:০২
যে যাই বলুক; মনে সুখ থাকলে বনে যেতেই পারি। যাই হোক, অনেক দিন ধরে মনটা কেমন যেন আনচান করছিল। প্রতিটা মানুষের মনের সুখ যেমন তেমনি দুঃখও আছে। তাই ভাবছিলাম কোথাও গিয়ে মনটা হালকা করে আসি। এমন একটা জায়গায় যেতে ইচ্ছে করছিল যেখানে থাকবে নিবিড় প্রকৃতির ছোঁয়া, থাকবে না কোনো মোবাইল নেটওয়ার্ক।
হুটহাট সিদ্ধান্ত নিয়ে কোথাও ঘুরতে গেলে নাকি অনেক ভালো ফল পাওয়া যায়। সেই থিওরিতে উদ্বুদ্ধ হয়ে অবশেষে কেটেই ফেলি বান্দরবানের বাসের টিকিট।
এমন একটি জায়গায় যেতে খুবই ইচ্ছে করছিল। যেখানে পাহাড়ের চার পাশে রহস্যে ঘেরা বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উচ্চতার স্বাদু পানির লেক। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এর উচ্চতা প্রায় ১, ২৪৬ ফুট ।
বগা লেককে মৃত আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ কিংবা মহাশূন্য থেকে উল্কাপিণ্ডের পতনের ফলে সৃষ্টি হয়েছে বলে ধারণা করলেও, বগা লেককে কেন্দ্র করে স্থানীয়দের মধ্যে নানা কল্পকাহিনী প্রচলিত আছে।
বগা লেক সৃষ্টি নিয়ে বম, মারমা, ম্রো, খুমি ও ত্রিপুরাদের পৌরাণিক কাহিনি বা কিংবদন্তি রয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বগা লেক ছিল একটি সমৃদ্ধ ম্রো গ্রাম। গ্রামের পাশে একটি সুড়ঙ্গে বড় আকারের সাপ থাকত। ওই সাপ ধরে গ্রামবাসী খেয়ে ফেলে। ওই সাপ খাওয়ায় নাগরাজার প্রতিশোধের কারণে গ্রামবাসীসহ গ্রামটি দেবে গিয়ে বগা লেকের সৃষ্টি হয়েছে। এখনো অনেক বম, ম্রোর বিশ্বাস, লেকের গভীরে থাকা নাগরাজ লেজ নাড়ালে পানি মাঝে মাঝে ঘোলাটে হয়ে ওঠে। হ্যাঁ বন্ধুরা এখানেই মনের দুঃখ ভুলে সুখ পায়রার মত ডানা মেলিয়ে রাত কাটিয়ে আসলাম। তবে এবার আপনাদের পালা।
বগালেক কিভাবে যাবেন? কত খরচ হবে?
ঢাকা-বান্দরবান নন এসি বাস ভাড়া ৬২০ টাকা । বান্দরবন শহর থেকে একটা জীপ নিতে হবে রুমা বাজার পর্যন্ত। টাকা ২০০০/২৫০০ লাগবে। পৌছতে ঘন্টা দেড় লাগবে। সেখানে পৌঁছে গাইড নিতেহবে। গাইডের কয়েকটি সমিতি আছে। যেকোনো একটা থেকে একজনগাইড নিতে হবে। কেওক্রাডং পর্যন্ত গেলে দৈনিক ৪০০ করে মোট ১২০০টাকা লাগবে। জাদিপাই গেলে প্যাকেজ ২০০০/২৫০০ টাকার মত। তাদের দেয়া ফর্ম পুরনকরে স্কুলের ক্লাসের ভালো ছাত্রের মতো আর্মি ক্যাম্পে রিপোর্ট করতে হবে। তারপর দ্রুত গাইডের সাথেগিয়ে জীপ ভাড়া করতে হবে বগা লেক যাওয়ার জন্য। ভাড়া ২০০০ টাকা। তবে বর্ষাকালে গাড়ি বগা লেকপর্যন্ত যায় না।
বগা লেকে ওঠার শেষ রাস্তাটুকু পার হতে অনেক কষ্ট হবে। খাড়া পাহাড়ে উঠতে হবে। আসলে এই জায়গাটুকু পারহতেই সবচেয়ে বেশি কষ্ট হয় সবার। কারন, সারারাত জার্নি করে, হইচই করে সবাই খুব ক্লান্ত থাকে। একারনেই কিছু মানুষ বগা উঠেই সিদ্ধান্ত নেয় আর আগাবে না। এটা ভুল সিদ্ধান্ত। আমি অনেক বাঘা বাঘা ট্রেকারদেরজিজ্ঞাসা করে দেখছি। ট্রিপের প্রথম দিন বগায় উঠতে সবারই অনেক কষ্ট হয়। ২য় দিন থেকে আর এত কষ্টহবে না।
বগায় পৌঁছে সিয়াম দিদি/ লারাম বা অন্য কারও কটেজেউঠতে হবে। কটেজ আগে থেকে ঠিক করে রাখা ভালো। এরপর লেকে গোছল করে বাকি দিনরেস্ট। এখন যেহেতু রুমা যেতে নৌকা লাগে না সেহেতু বেলা ১১/১২ টার মধ্যে বগায় পৌঁছে অনেকেই আরও সামনে এগিয়ে যায়। তবে যারা প্রথমবার যাচ্ছে, তাদের বগায় ১ম রাত থাকা উচিৎ। নয়তো আপনি অনেক বিরাট কিছু মিস করবেন, আসল সৌন্দর্য উপভোগ সকাল বেলায়।
এছাড়া এখানে দেবতাখুমের ভিতরে ঘুরে দেখার জন্য সুন্দর আরেকটি জায়গা। সেখানে নৌকা ও ভেলার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রয়েছে। জনপ্রতি ১৫০ টাকায় লাইফ জ্যাকেটসহ এ সুবিধা পাওয়া যায়। প্রতিটি ভেলায় একজন এবং নৌকায় সর্বোচ্চ দশজন উঠা যায়। খুমের ভিতরে গভীরতা ৫০ থেকে ৭০ ফিট ও দৈর্ঘ্যে ৬০০ ফিট।
বান্দরবানের আরেক জনপ্রিয় ভ্রমণ স্থান ভেলাখুম থেকে অনেক বড় এবং অনেক বেশি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর। পাহাড়ে ট্রেকিং সব সময়ই রোমাঞ্চকর। আর সেটা যদি হয় পাহাড়ি ঝিরিপথে চড়াই-উতরাই পেরিয়ে; তবে সেটা নিঃসন্দেহে দেবে এক স্বর্গীয় অনাবিল সুখ। মনে হবে দুঃখ-কষ্ট, বেদনা কিংবা ক্লান্তি বলতে কিছুই নেই।
উল্লেখ্য, সারা বছর দেবতাখুম যাওয়া গেলেও ভরা বর্ষায় অনেক সময় ঝিরি ও খুমে পানি অতিরিক্ত বেড়ে যায় এবং সেক্ষেত্রে আর্মি যাওয়ার অনুমতি দেয় না।
অন্যদিকে শীতের শেষ থেকে গ্রীষ্মের শুরু পর্যন্ত পানি অনেক কমে যায়। তখন দেবতাখুম ভালো নাও লাগতে পারে। এসব হিসাব বিচার-বিবেচনায় দেবতাখুম ঘুরার আদর্শ সময় হলো সেপ্টেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। দেবতাখুম যেতে চাইলে এ সময়ের মধ্যেই ভ্রমণ পরিকল্পনা করা ভালো।
লেখকঃ
বেল্লাল হোসাইন সাগর
সংবাদকর্মী