বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) চেয়ারম্যান ড. এম. মোশাররফ হোসেন এফসিএর বিরুদ্ধে উৎকোচ দাবির অভিযোগ করেছে বেসরকারি জীবন বীমা কোম্পানি ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স। এছাড়া আইডিআরএ চেয়ারম্যান উদ্দেশ্যমূলকভাবে কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ সাসপেন্ড করে প্রশাসক নিয়োগের হুমকি দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ জানায় ডেল্টা লাইফ।
কোম্পানিটির প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে নির্বাহী পরিচালক চৌধুরী কামরুল আহসান এ ধরনের অভিযোগ করেন।
এদিকে প্রতারণার অভিযোগ তুলে ২০০ ধারায় ডেল্টা লাইফের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ ৬ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গত ১৭ জানুয়ারি মামলা করেছেন বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ড. এম. মোশাররফ হোসেন।
রোববার সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ডেল্টা লাইফের নির্বাহী পরিচালক বলেন, আইডিআরএর বর্তমান চেয়ারম্যান যিনি এক সময় ডেল্টা লাইফের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ছিলেন। এজন্য উদ্দেশ্যমূলকভাবে ডেল্টা লাইফের ২০১৯ সালের একচ্যুরিয়াল ভ্যালুয়েশনের বেসিস অনুমোদন দেওয়া হয়নি। মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার নবায়ন অনুমোদন না দিয়ে এবং কোম্পানিকে নানা অজুহাতে অন্যায়ভাবে জরিমানা আরোপের হুমকি দিচ্ছেন আইডিআরএ চেয়ারম্যান। এছাড়া কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ বহিষ্কার করে প্রশাসক নিয়োগেরও হুমকি দিচ্ছেন বলে সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়।
উৎকোচ দাবির অভিযোগ তুলে কোম্পানির নির্বাহী পরিচালক বলেন, বিভিন্ন বিষয় সমাধানের জন্য আইডিআরএর চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলোচনা করতে গেলে তিনি কোম্পানির কাছে প্রথমে ২ কোটি, পরে ১ কোটি ও সর্বশেষ ৫০ লাখ টাকা উৎকোচ দাবি করেন। এ সংক্রান্ত অডিও ক্লিপ ও ট্রান্সক্রিপটি দুর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগ আকারে দাখিল করা হয়েছে বলে তিনি জানান। পরে এ বিষয়ে হাইকোর্ট বিভাগ অধিকতর তদন্ত করার আদেশ দিয়েছে। তিনি জানান, আইডিআরএ চেয়ারম্যানের বিদ্বেষপূর্ণ আচরণের কারণে ডেল্টা লাইফ কোম্পানি নিয়ে জনমনে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। অবিলম্বে এ হয়রানি বন্ধ করে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের দুর্নীতিগ্রস্ত নেতৃত্বের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান কোম্পানির এ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
সংবাদ সম্মেলনে ডেল্টা লাইফ ইন্সুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আদিবা রহমান বলেন, আইডিআরএর চেয়ারম্যান আমাদের কাছে ঘুষ চেয়েছিলেন। আমরা সেই ঘুষ না দেওয়ায় তিনি ক্ষুব্ধ হয়েছেন। আদিবা রহমান আরও বলেন, প্রথমে আইডিআরএর চেয়ারম্যানের বাসায় ঘুষ নিয়ে আলোচনা হয়। পরে মোবাইল ফোনে আমাদের এক কর্মকর্তার কাছে ঘুষ চেয়েছেন তিনি। আমাদের কাছে এর রেকর্ড রয়েছে। এগুলো আমরা দুদকে দিয়েছি। আর অডিট রিপোর্টে কিছু অভিযোগ তুলেছেন। তবে রিপোর্টেই বলা আছে এগুলো প্রমাণিত নয়। এক্ষেত্রে প্রমাণিত না হলে অভিযোগ আমলে নেওয়া যায় না।
তবে ডেল্টা লাইফকে পাঠানো আইডিআরএর এক চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ডেলটা লাইফে গ্রাহকের স্বার্থরক্ষা করা হচ্ছে কি না, তা নিরীক্ষার জন্য গত বছর দুটি ফার্মকে নিয়োগ দেওয়া হয়। এগুলো হলোÑ এমএস হাওলাদার ইউনূস অ্যান্ড কোং এবং এম এস ফেমস অ্যান্ড আর। এর একটি ফার্ম নিরীক্ষা এবং অন্যটি প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগের তদন্ত করেছে।
এদিকে প্রতারণার অভিযোগ তুলে ২০০ ধারায় ডেল্টা লাইফের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ ৬ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গত ১৭ জানুয়ারি মামলা করেছেন আইডিআরএ চেয়ারম্যান ড. এম. মোশাররফ হোসেন। এই মামলার ঘটনার বিষয়ে তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা বা অসত্যতা নিরূপণপূর্বক সুস্পষ্ট মতামত সহকারে প্রতিবেদন দাখিলের ডিআইজি (পিবিআই) ঢাকাকে নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
জীবন বীমা খাতের কোম্পানি ডেল্টা লাইফ ১৯৮৬ সালে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৯৫ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। এর আগেও মামলা সংক্রান্ত বিভিন্ন জটিলতায় দীর্ঘদিন কোম্পানির লভ্যাংশ আটকে ছিল। সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন কোম্পানির পরিচালক জিয়াদ রহমান।