চার কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠনের করতে যাচ্ছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। কোম্পানিগুলো হলো-সি অ্যান্ড এ টেক্সটাইল, ফ্যামিলি টেক্স, এমারেল্ড অয়েল এবং ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে এই চারটি কোম্পানির পর্ষদ পুনর্গঠন হবে বলে বিএসইসির একটি সূত্র সানবিডিকে নিশ্চিত করেছেন।
সূত্র মতে, বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে কোম্পানিগুলোর পর্ষদ পুনর্গঠন করা হবে। ইতোমধ্যে কয়েকটি কোম্পানির পর্ষদ পুনর্গঠন করার ফলে ভালো ফল পেয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। রিংসাইন পুনর্গঠন করার পর ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। অন্যদিকে আলহাজ্জ্ব টেক্সটাইলের পর্ষদ পুনর্গঠন করার পর বিনিয়োগকারীদেরকে ১ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে। একই সাথে বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করার জন্য কাজ করছে নতুন পুনর্গঠিত প্রতিষ্ঠানগুলো। এ অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে আরও চারটি প্রতিষ্ঠানের পর্ষদ পুনর্গঠন করতে যাচ্ছে বিএসইসি।
পুঁজিবাজারের সব খবর পেতে জয়েন করুন
Sunbd News–ক্যাপিটাল নিউজ–ক্যাপিটাল ভিউজ–স্টক নিউজ-শেয়ারবাজারের খবরা-খবর
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বিএসইসির কমিশনার অধ্যাপক ড. শামসুদ্দিন আহমেদ সানবিডিকে বলেন, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কাজগুলো করার চেষ্টা করছে কমিশন। ধারাবাহিক কাজের অংশ হিসেবে দূর্বল কোম্পানিগুলোকে সবল করার জন্য অনেক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো কোম্পানিগুলোর পর্ষদ পুনর্গঠন করে বন্ধ থাকা কোম্পানির কার্যক্রম শুরু করা। ভালোভাবে পরিচালিত না হওয়া কোম্পানিগুলোকে শক্তিশালী করার কাজ চলছে। তবে সরাসরি কোন কোম্পানির বিষয়ে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান তিনি।
উল্লেখ, নতুন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে অনেক উদ্যোগ নিয়েছে বিএসইসি। এর মধ্যে বিএসইসির ৭৩৫তম সভায় জেড ক্যাটাগরি কোম্পানির পর্ষদ পুনর্গঠন করার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ সিকিউরটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
সি অ্যান্ড এ টেক্সটাইলস: কোম্পানিটি বিএসইসির ৫২৮ তম কমিশন সভায় প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের(আইপিও) অনুমোদন দেওয়া হয়। কোম্পানিটি আইপিওর মাধ্যমে ৪৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করে। ২০১৫ সালে দেশের উভয় স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত হয়। বর্তমানে কোম্পানিটির মোট শেয়ারের ২২ দশমিক ১৪ শতাংশ রয়েছে পরিচালকদের কাছে। বাকী ১৫ দশমিক ৬৭ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে। এছাড়া ৬২ দশমিক ১৯ শতাংশ শেয়ার রয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে।
ফ্যামিলি টেক্স: ২০১৩ সালে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের মাধ্যমে (আইপিও) পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে ফ্যামিলি টেক্স (বিডি) লিমিটেড। বাজার থেকে ৩৪ কোটি টাকা সংগ্রহ করে দেশের উভয় স্টক এক্সচেঞ্জে শেয়ার লেনদেন শুরু করে। শেয়ার লেনদেনের শুরুতে বিনিয়োগকারীদের বেশ সাড়া যোগালেও পরবর্তীতে কোম্পানি তাদের জলে ডুবায়। ২০১৩ সালে শতভাগ বোনাস লভ্যাংশ ঘোষণা করে বিনিয়োগকারীদের বেশ আগ্রহের সৃষ্টি করেছিল। বর্তমানে কোম্পানীটি ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে লেনদেন হচ্ছে। কোম্পানির মোট শেয়ারের ৪ দশমিক ০২ শতাংশ রয়েছে পরিচালকদের কাছে। বাকী ১৮ দশমিক ৪১ শতাংশ রয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে। এছাড়াও ৭৭ দশমিক ৫৭ শতাংশ রয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে।
এমারেল্ড অয়েল: ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এমারেল্ড অয়েল বাণিজ্যিক উৎপাদনে গেছে ২০১১ সালে। কোম্পানিটি স্পন্দন নামে রাইস বান অয়েল উৎপাদন ও বাজারজাত করত। উৎপাদনে যাওয়ার তিন বছরের মধ্যে, অর্থাৎ ২০১৪ সালের মার্চে এটির পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তি ও লেনদেন শুরু হয়। কোম্পানিটি প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিওতে ২ কোটি শেয়ার ছেড়ে বাজার থেকে ২০ কোটি টাকা সংগ্রহ করে। আইপিওতে প্রতিটি শেয়ার ১০ টাকা অভিহিত মূল্য বা ফেসভ্যালুতে বিক্রি করা হয়। কোম্পানিটি ধানের তুষ থেকে ভোজ্য তেল উৎপাদন করে,যাকে বলা হয় রাইসবান অয়েল।
বর্তমানে কোম্পানিটি ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে লেনদেন করছে। কোম্পানিটির মোট শেয়ারের ৩০ দশমিক ৪৫ শতাংশ রয়েছে পরিচালকদের কাছে। বাকী ১৬ দশমিক ০৮ শতাংশ রয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে। এছাড়াও ৫৩ দশমিক ৪৭ শতাংশ রয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে।
ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ : ডিএসইর তথ্য মতে, ২০১৬ সালের ৫ সেপ্টেম্বর থেকে ইউনাইটেড এয়ার ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে লেনদেন করেছে। একইসঙ্গে গত ৪ বছরের বেশি সময় ধরে কোম্পানিটির সব ধরনের ব্যবসায়িক কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। দীর্ঘ সময় ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে অবস্থান করা কোম্পানিটি অবশেষে মূলবাজার থেকে সিটকে পড়লো ওভার দ্য কাউন্টার মার্কেটে (ওটিসি)।
কোম্পানি সূত্র মতে, ২০০৬ সালে ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরু করে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ লিমিটেড। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ২০১০ সালে। কোম্পানিটি ১ কোটি শেয়ার ছেড়ে ১০০ কোটি টাকা সংগ্রহ করে। তালিকাভুক্তির পরের বছর ২০১১ সালে কোম্পানিটি ১০ টাকা ফেসভ্যালুর সঙ্গে অতিরিক্ত ৫ টাকা প্রিমিয়াম নিয়ে ২১ কোটি রাইট শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে ৩১৫ কোটি টাকা পুঁজিবাজার থেকে সংগ্রহ করে।
বর্তমানে কোম্পানিটির অনুমোধিত মূলধন ১১শ কোটি টাকা। আর পরিশোধিত মূলধন হলো ৮২৮ কোটি টাকা। কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকদের কাছে রয়েছে মাত্র ২ দশমিক ৫ শতাংশ শেয়ার। বাকী শেয়ারের মধ্যে ১১ দশমিক শূণ্য ৭ শতাংশ প্রতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী এবং ৮৬ দশমিক ৪৩ শতাংশ শেয়ার রয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে।
বিএসইসি সূত্র জানায়, সিভিল অ্যাভিয়েশন থেকে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তিদেরকে ইউনাইটেড এয়ারের পরিচালনা পর্ষদে যুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে বিএসইসি। এর ফলে ইউনাইটেড এয়ার সচল হবে এবং বিনিয়োগকারীরা ক্ষতি থেকে রক্ষা পেতে পারে।
কোম্পানিটি ২০১২-১৩ অর্থবছরে মুনাফা করেছিল ৫৫ কোটি ৫৬ লাখ টাকা, লভ্যাংশ হিসেবে বিনিয়োগকারীদের প্রতি ১০০ শেয়ারে নতুন ১২টি শেয়ার দিয়েছিল। পরের অর্থবছরে ৫৮ কোটি ৭ লাখ টাকা মুনাফা করে কোম্পানিটি। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে মুনাফা করে ১৯ কোটি ৪৩ লাখ টাকা; লভ্যাংশ হিসেবে বিনিয়োগকারীদের প্রতি ১০০ শেয়ারে নতুন ১০টি শেয়ার দিয়েছিল।