তামাকে বিদেশি কোম্পানির ১২ হাজার কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ
সান বিডি ডেস্ক প্রকাশ: ২০২১-০৩-০১ ১৬:১১:৩৩
দেশে তামাক খাত থেকে পাওয়া রাজস্ব আয় প্রায় ২৩ হাজার কোটি টাকা। এর বিপরীতে তামাকজনিত রোগের চিকিৎসা বাবদ ৩০ হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যয় হচ্ছে। তাই তামাকের ওপর সঠিকভাবে উচ্চ হারে কর বাড়ানো হলে রাজস্ব আয় বাড়বে এবং এর বিপরীতে তামাক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ধীরে ধীরে কমবে।
রোববার (২৮ ফেব্রুয়ারি) ‘তামাকজাত দ্রব্যের ওপর সুনির্দিষ্ট কর আরোপের প্রয়োজনীয়তা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এ তথ্য জানানো হয়। ইকোনোমিক রিপোর্টারস ফোরাম (ইআরএফ), বাংলাদেশ তামাকবিরোধী জোট ও ওয়ার্ক ফর অ্যা বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের যৌথ আয়োজনে সভাটি হয়।
ইআরএফের সভাপতি শারমিন রিনভীর সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন দ্যা ইউনিয়নের কারিগরি পরামর্শক সৈয়দ মাহবুবুল আলম, যমুনা টিভির সিনিয়র রিপোর্টার ও তামাক নিয়ন্ত্রণ গবেষক সুশান্ত সিনহা, ডব্লিউবিবি ট্রাস্টের পরিচালক গাউস পিয়ারি, মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. রুমানা হক। সঞ্চালনা করেন ইকোনোমিক রিপোর্টারস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশিদুল ইসলাম।
অধ্যাপক রুমানা হক তার প্রবন্ধে বলেন, ২০০৯ সালে ১৫ বছরের ঊর্ধ্বে ৪৩ শতাংশ ও ২০১৭ সালে ৩৫ শতাংশ মানুষ তামাক ব্যবহার করেছে। সরকারের নানা উদ্যোগের ফলে তামাক ব্যবহারকারীর সংখ্যা কমানো সম্ভব হয়েছে। এর ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে হবে। তামাক কোম্পানিগুলো তামাকের প্রসার ও তাদের গ্রাহক বাড়তে তরুণদের তামাক ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করছে।
আমাদের সুনির্দিষ্ট কর আরোপের পাশাপাশি এর ওপর প্রচলিত স্তর প্রথা বাতিল করতে হবে। তামাকের ওপর সঠিকভাবে উচ্চ হারের কর বাড়ানো হলে রাজস্ব আয় বাড়বে এবং এর বিপরীতে তামাক ব্যবহারকারীর সংখ্যাও ধীরে ধীরে কমবে।
প্রশ্নোত্তর পর্বে রুমানা হক বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগ ও বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটির যৌথ গবেষণায় দেখা যায়, তামাক খাত থেকে প্রাপ্ত রাজস্ব আয় প্রায় ২৩ হাজার কোটি টাকা। বিপরীতে তামাকজনিত রোগের চিকিৎসা বাবদ ৩০ হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যয় হয়।
ইআরএফের সভাপতি শারমিন রিনভী বলেন, ভবিষ্যৎ প্রজন্ম রক্ষায় আমাদের তামাক নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় পদক্ষেপগুলোর পাশাপাশি পারিবারিক সচেতনতা বাড়াতে হবে। গণমাধ্যমকর্মী হিসেবে আমাদেরও তামাক নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে।
দ্যা ইউনিয়নের কারিগরি পরামর্শক সৈয়দ মাহবুবুল আলম বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণের কথা বললেই রাজস্ব আয়, সিগারেটের চোরাচালান, কর্মসংস্থানসহ নানা ধরনের বিভ্রান্তিকর তথ্য দেওয়া হয়। অথচ তামাক থেকে প্রাপ্ত রাজস্ব থেকে বেশি অর্থ ব্যয় হয় তামাকের কারণে সৃষ্ট রোগের চিকিৎসায়।
পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশে সিগারেটের দাম কম। ফলে প্রমাণিত হয় যে, সিগারেটের চোরাচালান মূলত কোম্পানির ভ্রান্ত প্রচারণা। এ ধরনের প্রচারণার মাধ্যমে কোম্পানিগুলো তামাকের ওপর কর বাড়ানো বাধাগ্রস্ত করে। তামাকের বড় বাজার থাকলেও স্বল্প সংখ্যক মানুষ তামাকের বিপণন, উৎপাদন ও চাষের সঙ্গে জড়িত।
দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার মাধ্যমে তামাকের ওপর নির্ভরশীলতা ধীরে ধীরে কমিয়ে আনা সম্ভব। তিনি তামাক কোম্পানিগুলোর বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার রোধে গণমাধ্যমকে আরও সর্তক হওয়ার অনুরোধ করেন।
তামাক নিয়ন্ত্রণ গবেষক সুশান্ত সিনহা বলেন, তরুণ প্রজন্মকে লক্ষ্য করে তামাক কোম্পানিগুলো আগ্রাসী প্রচারণা চালাচ্ছে। দেশে বছরে ২ শতাংশ হারে বাড়ছে সিগারেটের উৎপাদন। এতে করে লাভবান হচ্ছে কোম্পানিগুলো। বাংলাদেশ বিশ্বের অষ্টম বৃহত্তম তামাকের বাজার।
এ কারণেই সম্প্রতি দেশে ১২ হাজার কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ করেছে একটি বিদেশি তামাকজাত কোম্পানি। প্রকৃতপক্ষে তামাক ব্যবহার, উৎপাদন ও চাষ সবক্ষেত্রে সাধারণ মানুষই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তামাক চাষের এলাকাগুলো দেশে সবচেয়ে বেশি দারিদ্র্য পীড়িত। বাংলাদেশে বিক্রি হওয়া মোট সিগারেটের ৯৪ ভাগ খোলা বিক্রি হয়। তরুণদের তামাক থেকে দূরে রাখতে কর বাড়ানো ও আইনের সংশোধনসহ খোলা সিগারেট বিক্রি বন্ধ করা প্রয়োজন।
ডব্লিউবিবি ট্রাস্টের পরিচালক গাউস পিয়ারি বলেন, রাজস্ব আদায় থেকে আমাদের জনস্বাস্থ্য অধিক গুরুত্বপূর্ণ। তামাক নিয়ন্ত্রণে এর ওপর কর বাড়ানো অন্যতম কার্যকর উপায়। স্বাস্থ্যহানিকর তামাকের ওপর কর বাড়িয়ে তা জনগণের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে নিয়ে যেতে হবে।