ভয়ঙ্কর একটি শক্তি সরকারকে পিছন থেকে ইন্ধন দিচ্ছে, তারাই প্রতিবাদী কণ্ঠস্বরকে রুখতে নির্মম নির্যাতন চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শনিবার সকালে ডিআরইউতে তারেক রহমানের ১৪তম কারাবন্দি দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভায় তিনি এ অভিযোগ করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, বর্তমান সরকার কোন ধরনের সমালোচনা সহ্য করতে পারে না, যারাই সরকারের খারাপ কাজের সমালোচনা করে তাদেরই হামলা-মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। এছাড়া বিরোধী মত দমনে এই সরকার নির্যাতনের সব রেকর্ড ভেঙে ফেলেছে।
তিনি আরও বলেন, ‘আজকের পত্রিকা খুললে দেখবেন, কাটুনিস্ট কিশোর জেল থেকে বেরিয়ে যে বিবৃতি দিয়েছে, সেই বিবৃতিতে বোঝা যায় যে, ভয়ংকর একটা শক্তি পেছনে থেকে এই সরকারের আড়ালে থেকে, সরকার স্ক্রিন তৈরি করেছে, সেই ক্রিনে থেকে যারাই এই সরকারের বিরোধিতা করছে, যারাই রাষ্ট্র প্রধানের বিরোধিতা করছে, যারাই সরকার প্রধানের বিরোধিতা করছে তাদেরকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার জন্য অমানবিক নির্যাতন করছে।’
তিনি বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন যে, মুশতাক আহমেদ শুধুমাত্র লেখার অপরাধে আর কিশোর শুধুমাত্র কার্টুন আঁকার অপরাধে নির্মম অত্যাচার করে ছয়মাস আটক করে রাখা হয়েছে। এরা তো দু’জন শুধু ছয়মাস তাদের কথা বলা যায়..। গতকালই একজন নারী এসেছিলেন আমার কাছে। তিনি একজন রিটায়ার্ড মেজর মোরসালীনের স্ত্রী। এক বছর ধরে এই মোরসালীন আটক আছে। তার কোনো খবর বাইরে দিতে চায় না। কারণ একটাই তিনি (মোরসালীন) লিখতেন, তার লেখার কারণে তাকে তুলে নিয়ে গেছে। আজকে পত্রিকাতে এসেছে, কত মানুষকে, শিশুকে সাত বছরের শিশু, কত বয়োঃজ্যেষ্ঠদের তুলে নিয়ে গেছে, জেলে নিয়ে গেছে; শুধুমাত্র সরকারের সমালোচনা করার অপরাধে।’
মির্জা ফখরুল অভিযোগ করে বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে ৭ শ’র বেশি মানুষকে গুম করা হয়েছে। সহস্রাধিক হত্যা এবং বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ৩৫ লাখের মামলা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আজকে স্বাধীনতার চেতনা সম্পূর্ণ ভুলণ্ঠিত, গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে দিয়েছে। রাষ্ট্রকে পুরোপুরিভাবে দলীয়করণ করেছে, এই রাষ্ট্রকে একটা দলীয়করণের রাষ্ট্র, একটা অকার্যকর রাষ্ট্র, একটা ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করেছে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আজকে বাংলাদেশকে এরা একেবারে ভাগাড়ে পরিণত করেছে। বাংলাদেশের আত্মাকে ধবংস করে দিয়েছে, সোল অব বাংলাদেশ, গণতন্ত্র যেটা আমাদের আত্মা, সেই আত্মাকে ধবংস করে দিয়েছে। এরা শুধুমাত্র নিজেদের ক্ষমতা, দাম্ভিকতা আর দুর্নীতির বৃত্ত তৈরি করার জন্য তারা গোটা জাতিকে তারা ধবংস করে দিচ্ছে।’
ফখরুল প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘আমরা যারা একাত্তর সালে যুদ্ধ করেছিলাম, আমাদের এখন প্রতিনিয়ত রক্তক্ষরণ হয়। এজন্য কী আমরা দেশটাকে স্বাধীন করেছিলাম। যেন আমার সন্তান সে একটা সুস্থ পরিবেশে মানুষ হতে পারবে না, আমরা ভাই সে একটা সত্য কথা উচ্চারণ করতে পারবে না, আমার বোন সে নিরাপদে রাস্তায় চলাচল করতে পারবে না, আমার মা সে তার সন্তানকে একটু ভালোভাবে দেখতে পর্যন্ত পারবে না, আমাদের যে নতুন শিশু আসছে সেই শিশু কোন জগতে বাস করবে। কোন জনপদে বাস করবে যেখানে শুধু হত্যা-হিংসা-ভয়াবহতা।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যদি দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া যিনি শুধুমাত্র গণতন্ত্রের জন্য কারাবন্দি হয়ে আছেন, তাকে বের করে আনতে চাই, আমাদের নেতা তারেক রহমান যাকে সামনে রেখে আমরা পথ চলতে চাচ্ছি, তাকে যদি দেশে ফিরিয়ে আনতে চাই, আমাদের ৩৫ লাখ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার করাতে চাই, প্রতিদিন আমাদের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করছে তাদের যদি জেল থেকে মুক্ত করতে চাই আমাদেরকে অবশ্যই তরুণদেরকে, যুবকদেরকেই সামনে আসতে হবে। সব সময় তরুণরা সব কিছু পাল্টিয়ে দিয়েছে, পরিবর্তন এনেছে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমাদের দিকে সবাই তাকিয়ে আছে। আসুন আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই ভয়াবহ ফ্যাসিস্ট দানবকে পরাজিত করি। আমাদের বাংলাদেশকে তারা লুটে নিয়ে যাচ্ছে, হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করে নিয়ে যাচ্ছে। এই অবস্থা থেকে রক্ষা পেতে হলে আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়াই করে দেশের গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনি।’
বাংলাদেশ ছাত্র ফোরামের প্রধান উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মীর হেলালের সভাপতিত্বে ও বিএনপির সহ-প্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলিমের পরিচালনায় সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, সাংগঠনিক সম্পাদক শ্যামা ওবায়েদ, আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, ছাত্রদলের সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন প্রমুখ বক্তব্য দেন।