মানবদেহের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ চোখ। এটা দেহের সৌন্দর্যেরও বিশেষ অংশ। অনেকে সৌন্দর্যের বর্ণনা দিতে গিয়ে চোখেরও বর্ণনা দেন। এ জন্য সবাই চায় তার চোখ হোক সুন্দর। কিন্তু নানা কারণে অনেকের কাছে সেই কাঙ্ক্ষিত চোখ হয়ে যায় হতাশার। এর মধ্যে চোখের চারদিকে কালো দাগ বা ডার্ক সার্কেলের সমস্যা অন্যতম। প্রায় মানুষেরই চোখের নিচে কালো দাগ পড়ে। এতে সুন্দর চেহারা ঢাকা পড়ে যায়। কিন্তু কিছু বিষয়ে সচেতন থাকলে এড়ানো যায় এ দাগ।
কারণ
বিভিন্ন কারণে চোখের চারদিকে কালো দাগ দেখা দিতে পারে। যেমন :
- চোখের চারপাশে অতিসূক্ষ্ম রক্তনালিগুলো চিকন হওয়া ও কোলাজেন টিস্যু ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া।
- প্রয়োজনের তুলনায় কম ঘুম বা মাত্রাতিরিক্ত ঘুম।
- দেহে পানিশূন্যতা দেখা দিলে।
- রক্তশূন্যতা, থাইরয়েড হরমোনজনিত সমস্যা।
- দীর্ঘদিন ধরে চোখে ওষুধ ব্যবহার করলে। বিশেষত গ্লুকোমা রোগের ওষুধ, দীর্ঘদিনের অ্যালার্জি (এটপিক ডার্মাটাইটিস) ইত্যাদি ওষুধ।
- বংশগত কারণ।
- ঋতুস্রাবে সমস্যা।
- বার্ধক্য।
- সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মি।
যখন দেখা যায়
সাত-আট বছর পর থেকে যেকোনো বয়সেই এটা দেখা দিতে পারে। তবে বার্ধক্যে মুখাবয়বে চর্বি ও কোলাজেন টিস্যু কমে যাওয়ায় বেশির ভাগ মানুষেরই এ রকমটা হতে পারে। সবচেয়ে বেশি হীনম্মন্যতায় ভোগে অল্প বয়সীরা।
প্রতিরোধের উপায়
- জীবনযাত্রার পরিবর্তন।
- নিয়মিত ছয় থেকে আট ঘণ্টা ঘুমানোর চেষ্টা করুন।
- হালকা শারীরিক ব্যায়াম।
- খাদ্যতালিবায় শাকসবজি ও ফলমূল বেশি রাখা।
ঘরোয়া পদ্ধতি
ঘরোয়া কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করলে চোখের কালো দাগ কমানো যায়। যেমন :
- চোখের চারদিকে বরফ বা ঠাণ্ডা সেঁক নেওয়া।
- নিয়মিত চোখ ম্যাসাজ করা।
- কয়েক দিন খোসাসহ আলু বা শসার ঠাণ্ডা প্যাক চোখের নিচে ব্যবহার করা।
- দিনে কমপক্ষে তিন থেকে চার লিটার পানি পান করা ইত্যাদি।
যা বর্জনীয়
- অতিরিক্ত টেনশন করা যাবে না।
- গভীর রাত পর্যন্ত জেগে থাকা যাবে না।
- কাজের বাড়তি চাপ নেওয়া উচিত না।
- ধূমপান বর্জন করা।
চিকিৎসা
চোখের চারদিকে কালো দাগ দূর করার ভালো চিকিৎসা রয়েছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী রক্তের হিমগ্লোবিনের মাত্রা ঠিক করা, হরমোনাল সমস্যা থাকলে সমাধান করা এবং কিছু কিছু মলমের ব্যবহার, যেমন—হাইপ্রোকুইনন, রেটিনয়িক এসিড, গ্লাইকোকোলিক এসিড ইত্যাদি ব্যবহারে উপকার মেলে।
তবে ডার্ক সার্কেলে কিছু আধুনিক চিকিৎসা রয়েছে। যেমন :
কেমিক্যাল পিলিং : ত্বক বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে বিশেষ পদ্ধতিতে এক ধরনের ওষুধ প্রয়োগ করা হয়। এটা সাধারণত প্রতি মাসে একটি সেশন করে চার থেকে ছয়বার লাগানো যেতে পারে।
মাইক্রোনিডলিং : এটি এক ধরনের ডিভাইস, যাতে অনেক সুচ থাকে। এগুলোর সাহায্যে চামড়ায় সূক্ষ্মভাবে ক্ষত সৃষ্টি করে কোলাজেন টিস্যুকে উজ্জীবিত করা হয়। এটিও প্রতি মাসে একটি সেশন করে চার থেকে ছয়বার লাগানো যেতে পারে।
ফিলার ইঞ্জেকশন : হাইএলুরনিক এসিডজাতীয় ফিলার ইঞ্জেকশন দিলে অনেক ভালো ফল পাওয়া যায়।
কসমেটিক সার্জারি : কসমেটিক সার্জারি, যেমন—‘ব্লেফেরোপ্লাস্টিও’ একটি কার্যকর জনপ্রিয় পদ্ধতি।
এগুলো ছাড়াও ডার্ক সার্কেলের চিকিৎসায় পিআরপি থেরাপি, কিছু লেজার চিকিৎসায় ভালো ফল পাওয়া যায়। তবে অভিজ্ঞ ত্বক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মোতাবেক চলা উচিত।
ডা. জাহেদ পারভেজ, চর্ম, যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ