অর্থনৈতিক ‘বোমার’ মুখে সৌদি আরব

প্রকাশ: ২০১৬-০১-০৬ ১৮:০০:১৬


Saudi Arabiaশিয়া নেতার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর নিয়ে বাড়ছে সৌদি-ইরান উত্তেজনা। ইতোমধ্যে সৌদি আরব ইরানের সঙ্গে কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছে। সৌদির পথ ধরেছে বাহরাইন, সুদান, সংযুক্ত আরব আমিরাতও। এ ইস্যুকে কেন্দ্র করে উত্তেজনার দিকে যখন চেয়ে আছে গোটা বিশ্ব, তখন সৌদি আরবের নাগরিকরা চেয়ে আছে তাদের অর্থনৈতিক সংকট নিয়ে। তাদের উদ্বেগ, দেশটি অর্থনৈতিক বোমার মুখে পড়তে যাচ্ছে। এদিকে সরকারও ভাতা কমিয়ে দিয়ে অর্থনৈতিক ভার চাপিয়ে দিচ্ছে তাদের ওপর।

সংকট এতটা চরম পর্যায়ে যে, সৌদি সরকার দেশটিতে একবারেই গ্যাসের দাম ৫০ শতাংশ বাড়িয়ে দিতে বাধ্য হয়েছে।

বুধবার মার্কিন সংবাদ মাধ্যম সিএনএনের এক খবরে বলা হচ্ছে, নগদ অর্থ সংকট এতটা চরম পর্যায়ে যে, সৌদি সরকার দেশটিতে একবারেই গ্যাসের দাম ৫০ শতাংশ বাড়িয়ে দিতে বাধ্য হয়েছে। দাম বাড়ানোর আগে গত সোমবার দেশের গ্যাস স্টেশনগুলোতে লাইন দিতে দেখা যায় নাগরিকদের।

সৌদি আরবে দায়িত্বে থাকা সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত ও ডিজার্ড ডিপ্লোমেট: ইনসাইড সৌদি আরাবিয়া ফলোয়িং ৯/১১ বইয়ের লেখক রবার্ট জর্ডান বলেন, সৌদি সরকার ভর্তুকি কমানোর ঘোষণা দিয়েছে; যা দেশের মানুষকে মারাত্মকভাবে অর্থনৈতিক শঙ্কায় ফেলবে। তিনি বলেন, সৌদি আরবে এক লিটার গ্যাসের জন্য ব্যয় হয় মাত্র ১৬ সেন্ট; যা বিশ্বে অনেক সস্তা। কিন্তু এমন অনেকেই আছেন- যারা বড় বড় গাড়ি চালান, গ্যাস বাঁচানো নিয়ে তাদের কোনো মাথা ব্যথা নেই।

খবরে আরও জানানো হয়, গ্যাসের দাম বেড়েছে। খুব শিগগির পানি ও বিদ্যুতের দামও বাড়তে যাচ্ছে। সরকার রাস্তা, ভবন ও অন্যান্য কাঠামোতেও ব্যয় কমাচ্ছে। যে কোনো দেশের সরকারের জন্য এটা হতে পারে। তবে সৌদি আরবের জন্য অবশ্যই এটা সমস্যার জায়গা। কারণ এখানে সরকারি কাজের ক্ষেত্রই বেশি।

সরকারের মোট বাজেটের প্রায় ৭৫ শতাংশ আসে তেল থেকে। কিন্তু গত দেড় বছরে বিশ্ব বাজারে তেলের দর এক তৃতীয়াংশ কমে যায়। ২০১৫ সালে বিপুল বাজেট ঘাটতির মুখে পড়েছে দেশটি। ২০১৪ সালে জুনে তেলের দাম ছিল ব্যারেলপ্রতি ১০০ ডলারের উপরে। বর্তমানে তা ৩৫ ডলারের আশপাশে বিক্রি হচ্ছে। খুব শিগগির এ বাজার ঘুরে দাঁড়াবে বলেও মনে করছেন না অনেকে।

সৌদি আরবের ভর্তুকি চিত্র:

• গ্যাসে মোটা অংকের ভর্তুকি পায় এ দেশের মানুষ। মাত্র ১৬ সেন্টে এক লিটার গ্যাস পায় সৌদির নাগরিকরা। বর্তমানে তা নেওয়া হচ্ছে ২৪ সেন্ট।
• ফ্রি স্বাস্থ্য সুবিধা
• পানি ও বিদ্যুতে ভর্তুকি
• কোনো আয়কর দিতে হয় না
• চাকরি শেষে সরকারি পেনশনের সুযোগ
• প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ সরকারি চাকরিজীবী
• বেসরকারি চাকরির চেয়ে সরকারি চাকরিতে বেতন বেশি
• বেকার ভাতার ব্যবস্থা
• ব্যবসা শুরু ও আবাসন কেনার জন্য সুদমুক্ত ঋণের ব্যবস্থা

সিএনএন জানায়, এসব সুবিধা দিয়ে থাকে সৌদি। কিন্তু বর্তমানে অর্থনৈতিক চাপে পড়েছে দেশটি। গত বছরে ১০ হাজার কোটি ডলারের ঘাটতি বাজেটে ভুগেছে সৌদি আরব। যদি অবস্থার ইতিবাচক পরিবর্তন না হয়, তবে এ বছরও বিপুল অংকের ঘাটতি বাজেটে দেশটি ভুগতি পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল- আইএমএফ সম্প্রতি দেশটির জন্য এক হতাশার বানী শুনিয়েছে। তাদের আশঙ্কা, তেলের দাম যদি ৫০ ডলারের কাছাকাছি না অবস্থান করে, তবে আগামী ৫ বছরের মধ্যে সৌদি আরবের অর্থনীতি ধসে পড়তে পারে।

প্রসঙ্গত. গত শনিবার সন্ত্রাসবাদের অভিযোগে শিয়া মুসলিম নেতা শেখ নিমর আল-নিমরসহ ৪৬ জনের ফাঁসি কার্যকর করে সৌদি আরব। এর প্রেক্ষিতে পরের দিন রোববার ইরানের রাজধানী তেহরানে অবস্থিত সৌদি দূতাবাসে ভাঙচুর ও আগুন জ্বালিয়ে দেয় উত্তেজিত শিয়া সমর্থকরা।

সানিবডি/ঢাকা/এসএস