প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘সবসময় যেকোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করবে, সেইসঙ্গে ন্যায় ও সত্যের পথে চলবে। তাহলে জীবনে বড় হতে পারবে। জীবনটাকে উন্নত করতে পারবে। বাবা-মার মুখও উজ্জল হবে।’ বুধবার(১৭ মার্চ) গণভবন থেকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০১তম জন্মবার্ষিকী এবং জাতীয় শিশু দিবস-২০২১ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধান অতিথি হিসেবে যু্ক্ত হয়ে শিশু-কিশোরদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধি সৌধ কমপ্লেক্সে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
শিশুদের উদ্দেশ্যে এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন , ‘জীবনে বড় হতে হলে জাতির পিতার মতো অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হতে হবে। পাশাপাশি ন্যায় ও সত্যের পথে চলতে হবে।’
শিশুদের প্রতি জাতির পিতার ভালোবাসার চিত্র তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তিনি (বঙ্গবন্ধু) সবসময় এটাই ভাবতেন যে শিশুরাই তো ভবিষ্যৎ। শিশুদের তিনি এত ভালবাসতেন বলেই আমরা জাতির পিতার জন্মদিনটাকে জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছি। এতে করে শিশুরাও গুরুত্ব পাবে, তাদের জন্য একটা দিবস থাকবে। সেই সময়ে সকলেই তাদের কথা চিন্তা করবে, তাদের ভালোমন্দ দেখবে। তাদের জন্য কাজ করবে।’
পড়াশোনা ও নৈতিক চর্চার মাধ্যমে নিজেদের যোগ্য হিসেবে গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ছোট্ট সোনামনিরা, তোমাদের কাছে এটাই চাই যে, তোমরা তোমাদের জীবনটাকে সুন্দর করো, লেখাপড়া শেখো। সেইসঙ্গে তোমাদের দরকার হচ্ছে নিয়মশৃঙ্খলা মানা, অভিভাবকদের কথা শোনা, শিক্ষকদের কথা শোনা ও মেনে চলা, এটা কিন্তু খুব দরকার।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতীয় শিশু দিবসে এবারের প্রতিপাদ্য ‘‘বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন, শিশুর জীবন করো রঙিন’’। আমরা ছোট শিশুদের জীবন আরও রঙিন, আরও সুন্দর, আরও সার্থক করে গড়ে তুলতে চাই। সেটাই আমাদের লক্ষ্য। আমি চাই, আজকের শিশুরা সুন্দরভাবে গড়ে উঠবে, জীবনটাকে সুন্দর করবে। আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। কাজেই যা কিছু আজকে করে যাচ্ছি, সব শিশুদের জন্য। কারণ আমরা বাংলাদেশটাকে গড়তে চাই।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের এই শিশুরাই তো একদিন প্রধানমন্ত্রী হবে, মন্ত্রী হবে বা বড় বড় বিজ্ঞানী হবে। তারা যেন নিজেদের দিকে গড়তে পারে সেই ব্যবস্থা করে যাচ্ছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি জানি করোনার কারণে আজকে স্কুল বন্ধ। শিশুরা স্কুলে যেতে পারছে না। এটা অত্যন্ত কষ্টের। তারপরও আমি বলবো, ছোট্ট সোনামনিরা তোমরা ঘরে বসে পড়াশোনা করো। সেইসঙ্গে খেলাধুলাও করবে। আমরা চাই যে, খেলাধুলা, সংস্কৃতি চর্চা এগুলো একান্তভাবে অপরিহার্য। তোমরাই তো ভবিষ্যৎ, তোমরাই এদেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবে। করোনার এই প্রাদুর্ভাব কেটে যাবে। স্কুল আমরা তখনই খুলে দেব। তোমরা স্কুলে যেতে পারবে। সেইসঙ্গে খেলাধুলাও তোমরা করতে পারবে এবং এখনো করতে পারো।’
শিশুরা যেন মাদক-সন্ত্রাসে জড়িয়ে না পড়ে সে বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে সরকার প্রধান বলেন, ‘সচেতনতা সৃষ্টি করে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসের প্রভাব থেকে শিশুদের মুক্ত রাখতে হবে। মাদকের হাত থেকে শিশুদের মুক্ত রাখতে হবে। এদিকে আপনারা যারা বয়স্ক, মুরুব্বি, অভিভাবক, শিক্ষক, মসজিদের ইমাম, বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের প্রধান এবং জনগণের প্রতিনিধি সকলকে এ ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে। আমাদের শিশুদের জীবনটা যেন সুন্দর হয়।’
শিশুখাদ্য এবং শিশুদের ব্যবহার করা সরঞ্জামাদি নিরাপদ ও নিশ্চিত করতে আইনের পাশাপাশি সরকারের আন্তরিকতার কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘শিশুদের শিক্ষা নিশ্চিতে বিনা পয়সায় বই, বৃত্তি, উপবৃত্তি, প্রতিটি এলাকায় প্রাথমিক বিদ্যালয় তৈরি করাসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছি।’
দুই শিশুর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বেশ কয়েকজন শিশু বক্তব্য রাখে। এসময় এক শিশু বক্তা বলে, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমরা আপনাকে মিস করছি।’
জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তোমরা ভালো আছো? তোমরা ঠিকমতো পড়াশোনা করো। আমি ও আমার ছোটবোন শেখ রেহানা প্রতিবছর এই দিনে টুঙ্গিপাড়াতেই থাকি। আজ আমি তোমাদের সঙ্গে নেই, কিন্তু আমার মন পড়ে আছে টুঙ্গিপাড়ায়।’
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে শিশুদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা। পরে শিশু-কিশোরদের অংশগ্রহণে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে তা উপভোগ করেন।
উল্লেখ্য, ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মগ্রহণ করেন। তার হাত ধরেই বিশ্ব মানচিত্রে নতুন দেশ হিসেবে স্থান করে নেয় বাংলাদেশ।
বেঁচে থাকলে এই দিনে বঙ্গবন্ধুর বয়স হত ১০১ বছর। আর ঠিক নয় দিন বাদেই ২৬ মার্চ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এ দুই বিশেষ উপলক্ষ ঘিরে বুধবার শুরু হচ্ছে জাতীয় পর্যায়ে দশ দিনের অনুষ্ঠানমালা, যা শেষ হবে ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তির দিনে।
জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে ১০ দিনের এই অনুষ্ঠানমালার পাঁচ দিনের আয়োজনে যোগ দেবেন প্রতিবেশী পাঁচ দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান।