বিপদাপদে বিচলিত ও অস্থির না হয়ে তা থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার চেষ্টা এবং আল্লাহর সাহায্যের অপেক্ষা করার নাম সবর বা ধৈর্য। আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে এই গুণটির উপস্থিতি অপরিহার্য। সবরের গুরুত্ব ও তাৎপর্য এত বেশি যে আল্লাহ পবিত্র কোরআনে ৭০ বারেরও বেশি সবর প্রসঙ্গ উল্লেখ করেছেন।
মানুষের উন্নতি এবং খোদার নৈকট্য লাভের বড় উপায় হলো সবর বা ধৈর্যধারণ করা। যে যত বেশি সবর করতে পেরেছে তার মর্যাদা তত বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘যখন তারা সবর করেছে, তখন আমি তাদের মধ্য হতে ইমাম বা নেতৃবৃন্দ সৃষ্টি করেছি, যারা আমার আদেশ অনুযায়ী সৎপথ প্রদর্শন করতো।’ আল্লাহ সবরকারীদের সঙ্গে আছেন বলে কোরআনে স্পষ্ট ঘোষণা করা হয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই সহনশীলদের তাদের সবরের পুরস্কার হিসাব ছাড়াই দেয়া হবে।’
বিপদাপদ মানুষের নিয়তি। মানুষের ওপর কমবেশি বিপদ আসবেই। তাই বলে ভেঙে পড়লে চলবে না। বিশিষ্টজনেরা বিপদে ধৈর্য ধারণ করার শক্তি চেয়ে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেছেন। কারণ, তারা তাদের প্রজ্ঞা, ইলম ও অভিজ্ঞতার দ্বারা জেনেছেন, মানুষের ওপর কম হোক বেশি হোক বিপদ আসবেই। কাজেই সেই বিপদে ধৈর্যহারা না হয়ে বরং হিম্মতের সঙ্গে পরিস্থিতির মোকাবিলা করাই হলো উপযুক্ত ও যোগ্য বান্দার পরিচয়।
নবীরা হলেন সবচেয়ে উপরের স্তরের মানুষ। তাদের ওপরই পরীক্ষা এসেছিল সবচেয়ে বেশি। আদম আ. থেকে শেষ নবী হজরত মোহাম্মাদ সা. পর্যন্ত সব নবীকেই এই পরীক্ষায় অবতীর্ণ হতে হয়েছে। আদম আ. জান্নাত থেকে দুনিয়ায় নিক্ষিপ্ত হয়ে আল্লাহকে ভুলে যাননি, দোষ দেননি বরং নিজের ত্রুটির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন।
নূহ আ. নিজ জাতিকে সত্যের দিকে আহবান করলে লাঞ্ছিত হয়েছেন। মুসা আ. ফেরআইন দ্বারা নিগৃহীত হয়েছেন। তেমনিভাবে ইবরাহিম, ইসমাঈল, ইয়াকুব, ইউসুফ, ইউনুস, যাকারিয়া ইসহাক আ. কোনো নবীই পরীক্ষা ছাড়া উত্তীর্ণ হননি। এমনকি আমাদের প্রিয়নবী সা.ও জীবনে অনেক কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়ে ঈমানের পরীক্ষা দিয়েছেন। সবর বা ধৈর্য দ্বারা তিনি সব পরীক্ষায় সফল হয়েছেন। তেমনিভাবে দুনিয়াতে যারাই আল্লাহর প্রিয় বান্দা হয়েছেন তারাই ধৈর্যের পরীক্ষায় পাস করেছেন। আমাদেরও উচিত বিপদাপদে বিচলিত হয়ে না পড়া, সবরের মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্যের প্রত্যাশা করা।
সানবিডি/ঢাকা/এসএস