দুই সপ্তাহের ব্যবধানে মসুর ডালের দাম খুচরা বাজারে বেড়েছে ২০ থেকে ২৫ টাকা। ব্যবসায়ীদের দাবি, দেশে উৎপাদিত মসুর ডালের মজুদ ফুরিয়েছে। পাশাপাশি রপ্তানিকারক দেশে উৎপাদন কমায় আমদানি ব্যয় বাড়ছে। এতে এই ডালের দর বেড়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজধানীর খুচরা বাজারে ভালো মানের মসুর ডাল কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ১৩০-১৪০ টাকায়। তবে ১৫-২০ দিন আগে ছিল ১১০-১১৫ টাকা। আমদানি করা বড় আকারের ডাল বিক্রি হচ্ছে ১০০-১১০ টাকা কেজিতে। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ের চেয়ে বর্তমানে প্রতি কেজি মসুর ডালের দাম বেড়েছে ২০ টাকা। খুচরা বাজারে এর ব্যবধান ২০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত। পাইকারি বাজারে দাম বাড়ার প্রভাব পড়ছে খুচরা বাজারে।
আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স স্বদেশ এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আলী আহমেদ বলেন, ‘গত বছর মসুর ডাল রপ্তানিকারক দেশগুলোতে পণ্যটির উৎপাদন কমেছে। এসব দেশে মসুর ডালের দাম বাড়ায় আমাদের দেশের আমদানির ব্যয় বেড়েছে।’
দাম বাড়ার কারণ নিয়ে বাংলাদেশ ডাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘দেশি ডালের মজুদ শেষ হওয়ায় আমদানির চাপ বেড়েছে। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক বাজারেও এখন মসুর ডালের দাম বাড়তির দিকে রয়েছে। এক মাস আগে প্রতি টন মসুর ডালের দাম ছিল ৭৫০-৮০০ ডলার। বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৫০ থেকে এক হাজার ১০০ ডলার।’
শফিকুল বলেন, নেপালে ভূমিকম্পের কারণে নেপাল থেকে ডাল আমদানি বন্ধ রয়েছে। অন্যদিকে চীন, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও তুরস্কসহ যেসব দেশ থেকে বাংলাদেশ ডাল আমদানি করে, সেসব দেশেও ডালের দাম বেড়েছে। ফলে আমাদের দেশের আমদানি করা ডালের দাম বেড়েছে। এ কারণে দেশীয় ডালের দামও বেড়েছে। দেশের নতুন ডাল বাজারে আসার আগে দাম কমার তেমন কোনো সম্ভাবনা নেই বলেও জানান তিনি।
সরকার খোলাবাজারে ডাল সরবরাহ করলে দাম কমবে কি না—এমন জবাবে তিনি বলেন, ‘আমদানিকারক আর সরকার একই দামে ডাল আমদানি করবে। এখন ডালের দাম বাড়ার মূল কারণ চাহিদার সঙ্গে জোগানের ব্যবধান বাড়া। সে ক্ষেত্রে ভর্তুকি দিয়ে খোলাবাজারে ছাড়লে দাম কিছুটা কমতে পারে। তবে সরকার কেনা দামে ডাল বাজারে ছাড়লে তার কোনো প্রভাব বাজারে পড়বে না। এর আগেও এমন পদক্ষেপে তেমন কোনো প্রভাব দেখিনি।’
কারওয়ান বাজারের ইউসুফ ব্রাদার্সের মালিক ইউসুফ হোসেন বলেন, দেশে আগামী দুই মাসের মধ্যে নতুন ডাল উঠবে। তখন ডালের সরবরাহ বাড়লে দাম কমবে ভয়ে অনেকেই ডাল আমদানি কমিয়েছে। ফলে হঠাৎ করেই বাজারে মসুর ডালের সরবরাহ কমে যাওয়ায় দাম বেড়েছে।
ইউসুফ আরো বলেন, দেশে শীতকালে ডালের চাহিদা কমে। আমদানিকারকরা এ সময় পণ্যটির আমদানি কমিয়ে দেন। এর কারণে প্রতিবছরই এ সময় দাম কিছুটা বাড়ে। এবার একটু বেশি বেড়েছে। দেশের নতুন ডাল বাজারে আসার আগ পর্যন্ত আগামী দুই মাস এমন দাম থাকতে পারে বলেও জানান তিনি।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মুখপাত্র হুমায়ূন কবীর বলেন, বর্তমানে টিসিবির পণ্য তালিকায় মসুর ডাল নেই। এরই মধ্যে দুই হাজার টন ডাল আমদানির অর্ডার করা হয়েছে, যা দেশে আসতে আরো ১০ দিনের মতো লাগতে পারে। গুদামজাত ও অন্যান্য কাজ শেষে এ ডাল বাজারে আসতে আরো পাঁচ-ছয় দিন সময় লাগবে। খোলাবাজারের মাধ্যমে ডাল বাজারে এলে দাম কমে আসবে বলেও আশা করেন তিনি।
ডাল ব্যবসায়ী সূত্রে জানা গেছে, দেশে যে পরিমাণ ডাল উৎপাদন হয়, তা দিয়ে তিন-চার মাসের বেশি চাহিদা পূরণ সম্ভব নয়। তবে কয়েক বছর ধরে দেশে মসুর ডালের দাম ভালো থাকায় ডালের উৎপাদন বেড়েছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সারা বছর দেশে মসুর ডালের চাহিদা তিন লাখ ৭৫ হাজার টন। আর কৃষি মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, দেশে মসুর ডাল উৎপাদনের পরিমাণ দুই লাখ ২৪ হাজার টন। অবশিষ্ট চাহিদা পূরণে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে পণ্যটি আমদানি করা হয়।
মসুর ডালের দাম বাড়লেও অন্যান্য ডালের দাম তুলনামূলক স্থিতিশীল রয়েছে। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি মুগডাল মানভেদে ১০০-১১০ টাকা। ছোলার ডাল ৮০-৮৫ টাকা ও বুটের ডাল (অ্যাঙ্কর) ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সানবিডি/ঢাকা/আহো